০৮:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশকে পেয়েছি যেন “আরেক খন্ড গাঁজা” – গার্ডিয়ানকে বললেন ইউনূস

  • Sarakhon Report
  • ০৩:০১:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
  • 20

হান্না এলিস পিটারসেন

সারাংশ

বহু আগে ইউনূস রাজনৈতিক উচ্চাশা ত্যাগ করেছিলেনতবে হাসিনা তাকে রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখতেন

হাসিনার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে শত শত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছেযা হাসিনা অস্বীকার করেছেন

ইউনূস সম্মানিত ব্যক্তি, কিন্তু তার প্রশাসনিক সক্ষমতা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে

বিএনপি নেতার দাবী এই ইউনূসের সরকারের এখন কারো কাছে জবাবদিহিতা নেই

ঢাকার রাস্তায় অপরাধ বেড়ে চলেছেসংখ্যালঘুরা নানা হয়রানির মুখে পড়ছে

সেনাপ্রধান বলেছেনদেশ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখেএটা চলতে থাকলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে

ইউনুসের নেতৃত্বের প্রতি সেনাপ্রধানের এ দৃঢ় ভর্ৎসনা অনেকে সামরিক হস্তক্ষেপের পূর্বসচেতনীর ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।

. হাসিনা ক্রমশ ইউনুসের সমালোচনায় সরব হয়ে উঠেছেনসম্প্রতি তাঁকে মাফিয়া” এবং সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক বলে উল্লেখ করেছেন

. ভারত সরকারই ইউনুসের একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয় – ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ফেরা ইউনুসের জন্য আরেকটি অস্বস্তিকর বিষয়।

১০. বাইডেন প্রশাসন ছিল ইউনুসের অন্যতম বড় সমর্থকরাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে দুদিক থেকেই

মুহাম্মদ ইউনুস যখন গত আগস্টে বাংলাদেশে ফিরে আসেনতাঁকে অন্ধকার এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। তখনও রাস্তায় রক্ত লেগে ছিলআর পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো এক সহস্রাধিক বিক্ষোভকারী ও শিশুর মরদেহ মর্গে স্তূপ হয়ে পড়ে ছিল। ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পরে শেখ হাসিনাকে সদ্য উৎখাত করেছিল শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন এক বিপ্লব। ৮৪ বছর বয়সে ইউনুস – যিনি দরিদ্র মানুষের জন্য ক্ষুদ্রঋণের পথপ্রদর্শক হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন – বহু আগেই তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাশা ত্যাগ করেছিলেন। হাসিনা তাঁকে রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখতেনদীর্ঘদিন ধরে তাঁর বিরুদ্ধে বিরূপ প্রচারণা চালিয়েছেনফলে ইউনুস দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। তবে যখন শিক্ষার্থীরা তাঁকে অনুরোধ করল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতেতিনি রাজি হয়ে গেলেন।

তিনি (হাসিনা) যে মাত্রায় ক্ষতি করে গেছেনতা বিশাল,” গার্ডিয়ানকে বলেছিলেন ইউনুস। এই দেশ পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিলযেন আরেকটি গাজাতবে এখানে ধ্বংস ছিল ভবনধ্বংস নয়বরং পুরো প্রতিষ্ঠাননীতিমানুষ আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ধ্বংস।

হাসিনার শাসনামল জুড়ে নির্যাতনসহিংসতা ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। গত জুলাই ও আগস্টে সহিংসতার চূড়ান্ত পর্যায়ে ১,৪০০-র বেশি মানুষ তাঁর দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত হয়যা জাতিসংঘের ভাষায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” হিসেবে গণ্য হতে পারে। তিনি সব ধরনের মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

ইউনুসের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের জন্য নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা হয়। গত ছয় মাসে তাঁর নেতৃত্বে উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের গোপন বন্দিশিবির (যেখানে বিরোধীদের নির্যাতনের অভিযোগ ছিল) খালি করামানবাধিকার কমিশন গঠনএসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এদিকে হাসিনার বিরুদ্ধেও শত শত অভিযোগ দায়ের হয়েছেযা তিনি অস্বীকার করছেন।

ডিসেম্বর ও মার্চ ২০২৬-এর মাঝামাঝি কোনো সময়ে তিনি এক মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেনযার পরে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। কিন্তু দেশ এখন এক সঙ্কটময় সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বলে অনেকে মনে করেন। ইউনুস এখনও বহুল সম্মানিত একজন ব্যক্তি হলেওতাঁর প্রশাসনিক সক্ষমতা ও প্রতিশ্রুত সংস্কারের গতিবেগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনের তারিখ দ্রুত ঘোষণার জন্য ইউনুসের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে এবং তাঁর সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরাও নিজেদের আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আমির চৌধুরী বলেন, “এই সরকার কেবল একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে এসেছিল। কিন্তু এখন দিনে দিনে কারও কাছে জবাবদিহি নেই।

হাসিনা-সমর্থক পুলিশদের বিরুদ্ধে জনরোষ এবং হত্যা-গুমের মামলার কারণে তারা আগের মতো কাজে ফিরতে অনিচ্ছুক। ফলে নিরাপত্তাব্যবস্থা অস্থির হয়ে উঠেছে। ঢাকার রাস্তায় সংগঠিত অপরাধ বেড়ে চলেছে এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো নানা হয়রানির মুখে পড়ছে। গত সপ্তাহে বিক্ষোভকারীরা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কুশপুতুল পুড়িয়েছেক্রমবর্ধমান অপরাধ দমনে তাঁর ব্যর্থতার কারণে তাঁকে অপসারণের দাবি জানানো হয়।

ইউনুস অবশ্য অস্বীকার করেন যেদেশের রাস্তাঘাট আগে চেয়ে এখন বেশি অনিরাপদ। তবে অন্যরা সতর্ক করছেন যেনিরাপত্তা পরিস্থিতি সরকার নিয়ন্ত্রণ হারানোর মতো পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাতে পারে। নতুন গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টির প্রধান ও একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, “বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা অসম্ভব।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান – যিনি হাসিনার বিদায় এবং ইউনুসের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন – এক কঠোর ভাষণের মাধ্যমে বলেনদেশ এখন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির” মুখেএবং যদি বিভাজন ও অস্থিরতা অব্যাহত থাকেতবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।

ইউনুস অবশ্য জোর দিয়ে বলেন যেসামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুবই ভালো” এবং জামানের কাছ থেকে কোনো চাপ নেই। তা সত্ত্বেও অনেকে জামানের বক্তব্যকে ইউনুসের নেতৃত্বের প্রতি একটি দৃঢ় ভর্ৎসনা বা সামরিক হস্তক্ষেপের পূর্বসচেতনীর ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।

ইউনুস বাংলাদেশের এই দুর্দশাকে হাসিনার শাসনের ফলাফল হিসেবেই দেখাতে চান। তাঁর ভাষায়, “হাসিনার সরকার ছিল নাছিল এক পরিবারের ডাকাতের দল … কারও সঙ্গে সমস্যাতাদের গুম করে দেওয়া হতো। নির্বাচন করতে চাওআমরা নিশ্চিত করবতুমি সব আসনে জিতবে। টাকা লাগবেব্যাংক থেকে তোমাকে মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়া হবেকখনো শোধ করতে হবে না।

হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির ব্যাপকতার কারণে ব্যাংকিং খাত এখন অস্থিতিশীল ও অর্থনীতি বিধ্বস্ত। তাঁর আত্মীয়স্বজনদেরও এতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে আছেন তাঁর ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকযিনি যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ছিলেন এবং যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ে ভূমিকা পালনকালে কথিতভাবে হাসিনার শাসনের সঙ্গে যুক্ত সম্পদ-সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পদত্যাগ করেন। তিনি সব ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন।

যুক্তরাজ্যযুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে লোপাট হওয়া আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৩ বিলিয়ন পাউন্ড) উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এই অর্থ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কি নাতা নিয়ে এখন সংশয় তৈরি হয়েছে। ইউনুস বলেন, “ব্যাংকগুলোকে সাধারণ মানুষের অর্থ লুণ্ঠনে সম্পূর্ণ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিলসরকারের সক্রিয় সহায়তায়। অস্ত্র নিয়ে কর্মকর্তারা যেতেনসব স্বাক্ষর করিয়ে নিতেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কঠোরপন্থী ইসলামপন্থী শক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইউনুসের তরফে যথেষ্ট ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। হাসিনার আমলে জামায়াত-ই-ইসলামি নিষিদ্ধ ছিলএবং ইসলামপন্থী রাজনৈতিক নেতারা নিপীড়নের শিকার হন। এখন তারা প্রকাশ্যে hoạt động করতে পারছেএবং তাদের সমর্থনও বাড়ছে। কিশোরী মেয়েদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়ার কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছেযেখানে স্থানীয় কট্টরপন্থীরা হস্তক্ষেপ করেছে।

বিদেশ থেকেও ইউনুসের ওপর চাপ বাড়ছে। হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে ভারত সরকারের সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এখন তিনি ভারতে আত্মগোপনে আছেন এবং দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অবনতি থেকে উত্তরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ভারত প্রকাশ্যে ইউনুসের প্রশাসনকে স্বীকৃতি দিতে নারাজ এবং সম্প্রতি দিল্লি ঢাকাকে সন্ত্রাসবাদকে স্বাভাবিকীকরণে” অভিযুক্ত করেছে।

গত ডিসেম্বর ঢাকার পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে হাসিনার প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছেযাতে তিনি বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার enfrent করতে পারেন। ইউনুস নিশ্চিত করেছেন যেভারতের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উত্তর মেলেনি। তিনি বলেনহাসিনার বিরুদ্ধে অনুপস্থিতিতেও বিচার চলবে।

হাসিনা ক্রমশ ইউনুসের সমালোচনায় সরব হয়ে উঠেছেনসম্প্রতি তাঁকে মাফিয়া” এবং সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক বলে উল্লেখ করেছেন। ইউনুস বলেনবাংলাদেশ মেনে নিতে পারে যে ভারত তাঁকে (হাসিনাকে) আশ্রয় দিচ্ছেতবে সেখানে থেকে আমাদের সব অর্জন ধ্বংস করার চেষ্টা করাটা” বিপজ্জনক।

ভারত সরকারই ইউনুসের একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয় – ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ফেরা ইউনুসের জন্য আরেকটি অস্বস্তিকর বিষয়। বাইডেন প্রশাসন ছিল ইউনুসের অন্যতম বড় সমর্থকরাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে দুদিক থেকেই। অথচ ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার অগ্রাধিকারের বিষয় নয়।

ট্রাম্প আমলে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) কার্যত ধ্বংসের পথে গিযার ফলে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সাহায্য পেততা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এক ভাষণে ট্রাম্প অভিযোগ তোলেন (প্রমাণ উপস্থাপন না করেই) যেবাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ মজবুত করতে বরাদ্দকৃত ইউএসএআইডির লাখো ডলার ব্যয় করা হয়েছে এক চরম বামপন্থী কমিউনিস্টকে ক্ষমতায় আনার জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ফিরে পেতে ইউনুস সম্প্রতি এলন মাস্ককে বাংলাদেশের জন্য স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইউনুসের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়এবছরের এপ্রিলেই মাস্কের বাংলাদেশ সফর হতে পারে। ইউনুস আশা করছেনট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশকে ভালো বিনিয়োগের সুযোগ” হিসেবে তুলে ধরা যাবে। তিনি জানানমাস্কের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি আলাপ করবেন।

ট্রাম্প নিজে চুক্তি করতে পছন্দ করেনতাই আমি বলব: আসুনআমাদের সঙ্গে চুক্তি করুন,” বলেন ইউনুস। যদি ট্রাম্প না আসেনবাংলাদেশ কিছুটা কষ্ট পাবেস্বীকার করলেন তিনি। কিন্তু আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা থেমে থাকবে না।

বাংলাদেশকে পেয়েছি যেন “আরেক খন্ড গাঁজা” – গার্ডিয়ানকে বললেন ইউনূস

০৩:০১:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

হান্না এলিস পিটারসেন

সারাংশ

বহু আগে ইউনূস রাজনৈতিক উচ্চাশা ত্যাগ করেছিলেনতবে হাসিনা তাকে রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখতেন

হাসিনার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে শত শত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছেযা হাসিনা অস্বীকার করেছেন

ইউনূস সম্মানিত ব্যক্তি, কিন্তু তার প্রশাসনিক সক্ষমতা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে

বিএনপি নেতার দাবী এই ইউনূসের সরকারের এখন কারো কাছে জবাবদিহিতা নেই

ঢাকার রাস্তায় অপরাধ বেড়ে চলেছেসংখ্যালঘুরা নানা হয়রানির মুখে পড়ছে

সেনাপ্রধান বলেছেনদেশ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখেএটা চলতে থাকলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে

ইউনুসের নেতৃত্বের প্রতি সেনাপ্রধানের এ দৃঢ় ভর্ৎসনা অনেকে সামরিক হস্তক্ষেপের পূর্বসচেতনীর ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।

. হাসিনা ক্রমশ ইউনুসের সমালোচনায় সরব হয়ে উঠেছেনসম্প্রতি তাঁকে মাফিয়া” এবং সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক বলে উল্লেখ করেছেন

. ভারত সরকারই ইউনুসের একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয় – ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ফেরা ইউনুসের জন্য আরেকটি অস্বস্তিকর বিষয়।

১০. বাইডেন প্রশাসন ছিল ইউনুসের অন্যতম বড় সমর্থকরাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে দুদিক থেকেই

মুহাম্মদ ইউনুস যখন গত আগস্টে বাংলাদেশে ফিরে আসেনতাঁকে অন্ধকার এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। তখনও রাস্তায় রক্ত লেগে ছিলআর পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো এক সহস্রাধিক বিক্ষোভকারী ও শিশুর মরদেহ মর্গে স্তূপ হয়ে পড়ে ছিল। ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পরে শেখ হাসিনাকে সদ্য উৎখাত করেছিল শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন এক বিপ্লব। ৮৪ বছর বয়সে ইউনুস – যিনি দরিদ্র মানুষের জন্য ক্ষুদ্রঋণের পথপ্রদর্শক হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন – বহু আগেই তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাশা ত্যাগ করেছিলেন। হাসিনা তাঁকে রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখতেনদীর্ঘদিন ধরে তাঁর বিরুদ্ধে বিরূপ প্রচারণা চালিয়েছেনফলে ইউনুস দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। তবে যখন শিক্ষার্থীরা তাঁকে অনুরোধ করল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতেতিনি রাজি হয়ে গেলেন।

তিনি (হাসিনা) যে মাত্রায় ক্ষতি করে গেছেনতা বিশাল,” গার্ডিয়ানকে বলেছিলেন ইউনুস। এই দেশ পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিলযেন আরেকটি গাজাতবে এখানে ধ্বংস ছিল ভবনধ্বংস নয়বরং পুরো প্রতিষ্ঠাননীতিমানুষ আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ধ্বংস।

হাসিনার শাসনামল জুড়ে নির্যাতনসহিংসতা ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। গত জুলাই ও আগস্টে সহিংসতার চূড়ান্ত পর্যায়ে ১,৪০০-র বেশি মানুষ তাঁর দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত হয়যা জাতিসংঘের ভাষায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” হিসেবে গণ্য হতে পারে। তিনি সব ধরনের মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

ইউনুসের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের জন্য নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখা হয়। গত ছয় মাসে তাঁর নেতৃত্বে উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের গোপন বন্দিশিবির (যেখানে বিরোধীদের নির্যাতনের অভিযোগ ছিল) খালি করামানবাধিকার কমিশন গঠনএসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এদিকে হাসিনার বিরুদ্ধেও শত শত অভিযোগ দায়ের হয়েছেযা তিনি অস্বীকার করছেন।

ডিসেম্বর ও মার্চ ২০২৬-এর মাঝামাঝি কোনো সময়ে তিনি এক মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেনযার পরে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। কিন্তু দেশ এখন এক সঙ্কটময় সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বলে অনেকে মনে করেন। ইউনুস এখনও বহুল সম্মানিত একজন ব্যক্তি হলেওতাঁর প্রশাসনিক সক্ষমতা ও প্রতিশ্রুত সংস্কারের গতিবেগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনের তারিখ দ্রুত ঘোষণার জন্য ইউনুসের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে এবং তাঁর সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরাও নিজেদের আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আমির চৌধুরী বলেন, “এই সরকার কেবল একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে এসেছিল। কিন্তু এখন দিনে দিনে কারও কাছে জবাবদিহি নেই।

হাসিনা-সমর্থক পুলিশদের বিরুদ্ধে জনরোষ এবং হত্যা-গুমের মামলার কারণে তারা আগের মতো কাজে ফিরতে অনিচ্ছুক। ফলে নিরাপত্তাব্যবস্থা অস্থির হয়ে উঠেছে। ঢাকার রাস্তায় সংগঠিত অপরাধ বেড়ে চলেছে এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো নানা হয়রানির মুখে পড়ছে। গত সপ্তাহে বিক্ষোভকারীরা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কুশপুতুল পুড়িয়েছেক্রমবর্ধমান অপরাধ দমনে তাঁর ব্যর্থতার কারণে তাঁকে অপসারণের দাবি জানানো হয়।

ইউনুস অবশ্য অস্বীকার করেন যেদেশের রাস্তাঘাট আগে চেয়ে এখন বেশি অনিরাপদ। তবে অন্যরা সতর্ক করছেন যেনিরাপত্তা পরিস্থিতি সরকার নিয়ন্ত্রণ হারানোর মতো পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাতে পারে। নতুন গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টির প্রধান ও একজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, “বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা অসম্ভব।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান – যিনি হাসিনার বিদায় এবং ইউনুসের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন – এক কঠোর ভাষণের মাধ্যমে বলেনদেশ এখন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির” মুখেএবং যদি বিভাজন ও অস্থিরতা অব্যাহত থাকেতবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।

ইউনুস অবশ্য জোর দিয়ে বলেন যেসামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুবই ভালো” এবং জামানের কাছ থেকে কোনো চাপ নেই। তা সত্ত্বেও অনেকে জামানের বক্তব্যকে ইউনুসের নেতৃত্বের প্রতি একটি দৃঢ় ভর্ৎসনা বা সামরিক হস্তক্ষেপের পূর্বসচেতনীর ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।

ইউনুস বাংলাদেশের এই দুর্দশাকে হাসিনার শাসনের ফলাফল হিসেবেই দেখাতে চান। তাঁর ভাষায়, “হাসিনার সরকার ছিল নাছিল এক পরিবারের ডাকাতের দল … কারও সঙ্গে সমস্যাতাদের গুম করে দেওয়া হতো। নির্বাচন করতে চাওআমরা নিশ্চিত করবতুমি সব আসনে জিতবে। টাকা লাগবেব্যাংক থেকে তোমাকে মিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়া হবেকখনো শোধ করতে হবে না।

হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির ব্যাপকতার কারণে ব্যাংকিং খাত এখন অস্থিতিশীল ও অর্থনীতি বিধ্বস্ত। তাঁর আত্মীয়স্বজনদেরও এতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে আছেন তাঁর ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকযিনি যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ছিলেন এবং যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ে ভূমিকা পালনকালে কথিতভাবে হাসিনার শাসনের সঙ্গে যুক্ত সম্পদ-সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পদত্যাগ করেন। তিনি সব ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন।

যুক্তরাজ্যযুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে লোপাট হওয়া আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৩ বিলিয়ন পাউন্ড) উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এই অর্থ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কি নাতা নিয়ে এখন সংশয় তৈরি হয়েছে। ইউনুস বলেন, “ব্যাংকগুলোকে সাধারণ মানুষের অর্থ লুণ্ঠনে সম্পূর্ণ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিলসরকারের সক্রিয় সহায়তায়। অস্ত্র নিয়ে কর্মকর্তারা যেতেনসব স্বাক্ষর করিয়ে নিতেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কঠোরপন্থী ইসলামপন্থী শক্তি মাথাচাড়া দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইউনুসের তরফে যথেষ্ট ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। হাসিনার আমলে জামায়াত-ই-ইসলামি নিষিদ্ধ ছিলএবং ইসলামপন্থী রাজনৈতিক নেতারা নিপীড়নের শিকার হন। এখন তারা প্রকাশ্যে hoạt động করতে পারছেএবং তাদের সমর্থনও বাড়ছে। কিশোরী মেয়েদের ফুটবল ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়ার কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছেযেখানে স্থানীয় কট্টরপন্থীরা হস্তক্ষেপ করেছে।

বিদেশ থেকেও ইউনুসের ওপর চাপ বাড়ছে। হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে ভারত সরকারের সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এখন তিনি ভারতে আত্মগোপনে আছেন এবং দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অবনতি থেকে উত্তরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ভারত প্রকাশ্যে ইউনুসের প্রশাসনকে স্বীকৃতি দিতে নারাজ এবং সম্প্রতি দিল্লি ঢাকাকে সন্ত্রাসবাদকে স্বাভাবিকীকরণে” অভিযুক্ত করেছে।

গত ডিসেম্বর ঢাকার পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে হাসিনার প্রত্যর্পণের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছেযাতে তিনি বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার enfrent করতে পারেন। ইউনুস নিশ্চিত করেছেন যেভারতের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উত্তর মেলেনি। তিনি বলেনহাসিনার বিরুদ্ধে অনুপস্থিতিতেও বিচার চলবে।

হাসিনা ক্রমশ ইউনুসের সমালোচনায় সরব হয়ে উঠেছেনসম্প্রতি তাঁকে মাফিয়া” এবং সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক বলে উল্লেখ করেছেন। ইউনুস বলেনবাংলাদেশ মেনে নিতে পারে যে ভারত তাঁকে (হাসিনাকে) আশ্রয় দিচ্ছেতবে সেখানে থেকে আমাদের সব অর্জন ধ্বংস করার চেষ্টা করাটা” বিপজ্জনক।

ভারত সরকারই ইউনুসের একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয় – ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ফেরা ইউনুসের জন্য আরেকটি অস্বস্তিকর বিষয়। বাইডেন প্রশাসন ছিল ইউনুসের অন্যতম বড় সমর্থকরাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে দুদিক থেকেই। অথচ ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার অগ্রাধিকারের বিষয় নয়।

ট্রাম্প আমলে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) কার্যত ধ্বংসের পথে গিযার ফলে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সাহায্য পেততা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এক ভাষণে ট্রাম্প অভিযোগ তোলেন (প্রমাণ উপস্থাপন না করেই) যেবাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ মজবুত করতে বরাদ্দকৃত ইউএসএআইডির লাখো ডলার ব্যয় করা হয়েছে এক চরম বামপন্থী কমিউনিস্টকে ক্ষমতায় আনার জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ফিরে পেতে ইউনুস সম্প্রতি এলন মাস্ককে বাংলাদেশের জন্য স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইউনুসের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়এবছরের এপ্রিলেই মাস্কের বাংলাদেশ সফর হতে পারে। ইউনুস আশা করছেনট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশকে ভালো বিনিয়োগের সুযোগ” হিসেবে তুলে ধরা যাবে। তিনি জানানমাস্কের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি আলাপ করবেন।

ট্রাম্প নিজে চুক্তি করতে পছন্দ করেনতাই আমি বলব: আসুনআমাদের সঙ্গে চুক্তি করুন,” বলেন ইউনুস। যদি ট্রাম্প না আসেনবাংলাদেশ কিছুটা কষ্ট পাবেস্বীকার করলেন তিনি। কিন্তু আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা থেমে থাকবে না।