০৮:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

আইন-শৃঙ্খলার অবনতি: আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

  • Sarakhon Report
  • ০৪:২০:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
  • 38

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  1. সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নারী ও শিশু নির্যাতন, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, ও চোরাচালানের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ইঙ্গিত দেয়।
  2.  অপরাধ দমনের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে, এবং প্রয়োজনে বিজিবি মোতায়েনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

  3. গত দুই মাসে ১০৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৬৬ জন ভুক্তভোগী শিশু; এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতনের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।

  4.  গত বছর গণপিটুনির ফলে ১৭৩ জন নিহত হয়েছেন, এবং চলতি বছরও এ ধরনের সহিংস ঘটনা বাড়ছে, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।


বর্তমানে দেশে অপরাধের ব্যাপক বৃদ্ধি ও আইন-শৃঙ্খলার ব্যর্থতার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দায়িত্বশীলদের যথাযথ জবাবদিহি না হওয়া, আইন লঙ্ঘন এবং আইনের সঠিক প্রয়োগে অভাব এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পদক্ষেপ

অপরাধ বৃদ্ধির কারণে পুলিশ সদর দপ্তরের মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম সারা দেশে পুলিশকে কঠোর দমন ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

রাজধানীতে অপরাধের বন্যা

ঢাকার সাম্প্রতিক অপরাধমূলক ঘটনার পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দেখা যাচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মাসিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত দুই মাস (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে ২৬৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে; এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১২৭টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও, সবচেয়ে বেশী ঘটেছে ছিনতাই (১১৪১টি) ও চাঁদাবাজ (১৭৩টি) মামলা।

অপরাধের পরিসংখ্যান ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ

  • হত্যা মামলা:
    গত বছরের প্রথম ছয় মাসে গড়ে ২৭২টি, আর পরবর্তী সাত মাসে গড়ে ৩১৪টি মামলা হয়েছে।
  • ডাকাতি ও দস্যুতা:
    প্রথম ছয় মাসে গড়ে ১৪৫টি, পরবর্তী সাত মাসে ১৭৮টি মামলা রেকর্ড হয়েছে।
  • অপহরণ:
    প্রথম ছয় মাসে গড়ে ৪৭টি, পরবর্তী সাত মাসে ৬৭টি মামলা হয়েছে।
  • বিশৃঙ্খলা ও পুলিশের ওপর হামলা:
    প্রতিবছর প্রথম ছয় মাসে যথাক্রমে ১৪ ও ৪৭টি মামলা, পরবর্তী সাত মাসে ১৭ ও ৬৭টি মামলা হয়েছে।
  • চোরাচালান:
    প্রথম ছয় মাসে ১৬৬টি ও পরবর্তী সাত মাসে ১৭৩টি মামলা হয়েছে।

এছাড়াও, চলতি বছরের জানুয়ারিতে হত্যার মামলা ২৯৪টি (গত বছরের ২৩১টি ও পূর্ববর্তী বছরগুলিতে ২১৪, ২৬৪, ও ২৭৩টি) এবং ডাকাতির মামলা ১৭১টি (গত বছরের ১১৪টি) হয়ে গেছে।

অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণসমূহ

বিভিন্ন সূত্র ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্দেশ করছে যে, অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে নিম্নলিখিত কারণগুলো কাজ করছে:

  • অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার
  • প্রলোভনে পড়ে অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া
  • বেকারত্ব ও হিংসা-বিদ্বেষ
  • আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত মোবিলিটি না থাকা
  • রাজনৈতিক অস্থিরতা
  • পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের অস্থিরতা

অপরাধীদের লক্ষ্যবস্তু ও গোয়েন্দা পুলিশের পর্যবেক্ষণ

গোয়েন্দা পুলিশের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দিনের বিভিন্ন সময়ে শপিং মল, ব্যাংক ও বীমাগুলোর ভিড়ে অপরাধীরা সহজেই তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন করছে। একই সঙ্গে, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও সদরঘাটসহ অন্যান্য জনসচেতন স্থানে অপরাধের ঘটনা বেড়েছে।

জরুরি বৈঠক ও সরকারী উদ্যোগ

সাম্প্রতিক ধর্ষণ, নৈরাজ্য ও মব জাস্টিসের ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় সরকার জরুরি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানিয়েছেন যে, অপরাধ প্রতিরোধে এবং নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রয়োজনে বিজিবিকেও প্রস্তুত রাখার কথাও আলোচনা হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে উদ্বেগ

গত দুই মাসে কমপক্ষে ১০৭ জনকে ধর্ষণের শিকার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৬ জন ১৮ বছরের নিচে শিশু। একই সময়ে ২২৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হন।

  • হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)-এর অনুসন্ধানে এসব তথ্য উদঘাটিত হয়েছে।
  • আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৪০১ জন নারী ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন।
  • পুলিশ সদর দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে ১৭,৫৭১টি নারী-শিশু নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
    একটি সাম্প্রতিক ঘটনায়, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার একজন শিশুর চিকিৎসা এখনো চলমান রয়েছে।

গণপিটুনি ও সামাজিক অস্থিরতার প্রসঙ্গ

গণপিটুনির ঘটনায়, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩০টি ঘটনার ফলে ১৯ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে।
গত বছর ২০১টি গণপিটুনির ঘটনায় ১৭৩ জন নিহত ও ৮৮ জন আহত হয়েছিল, অর্থাৎ প্রতি চার থেকে পাঁচ দিনে একজন নিহত হয়।
গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১৪টি গণপিটুনির ঘটনায় ১১৯ জন নিহত হয়েছে।
সর্বশেষ একটি ঘটনায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও চোরাচালান সন্দেহে আটজনকে গণপিটুনিতে আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে, এবং তাদের চিকিৎসা চলছে।

ডাকাতিদস্যুতা ও ছিনতাইয়ের বেড়ে যাওয়া

বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ২০০ ভরি স্বর্ণ ও এক লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার পর মোহাম্মদপুরে রিকশা থামিয়ে এক নারীর কাছ থেকে ছিনতাই এবং হাজারীবাগে ডাকাতির ঘটনা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাভারে হিন্দু স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলীপ দাসকে নিম‍র্মভাবে হত্যা করা হয়েছে।  এসব ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রান্তিক অঞ্চলে ঘটমান অপরাধ

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিদেশ থেকে আগত দুই প্রবাসীকে ডাকাতের কবলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ওএসপিকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাজশাহী থেকে আসা  একটি বাসে ডাকাতির সময় দুই নারীকে শ্লীতাহানির অভিযোগ উঠেছে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার হোসেন মিয়া জানিয়েছেন, মহাসড়কে ডাকাতি বেড়েছে তবে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

উপসংহার

অপরাধের বিস্তারে সমাজে আতঙ্ক ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেমন পরিসংখ্যান ও ঘটনার তথ্য দিয়ে পরিস্থিতির তীব্রতা তুলে ধরেছে, তেমনি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অপরাধ দমন ও নৈরাজ্য দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

আইন-শৃঙ্খলার অবনতি: আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

০৪:২০:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  1. সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নারী ও শিশু নির্যাতন, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, ও চোরাচালানের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ইঙ্গিত দেয়।
  2.  অপরাধ দমনের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে, এবং প্রয়োজনে বিজিবি মোতায়েনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

  3. গত দুই মাসে ১০৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৬৬ জন ভুক্তভোগী শিশু; এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতনের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে।

  4.  গত বছর গণপিটুনির ফলে ১৭৩ জন নিহত হয়েছেন, এবং চলতি বছরও এ ধরনের সহিংস ঘটনা বাড়ছে, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।


বর্তমানে দেশে অপরাধের ব্যাপক বৃদ্ধি ও আইন-শৃঙ্খলার ব্যর্থতার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দায়িত্বশীলদের যথাযথ জবাবদিহি না হওয়া, আইন লঙ্ঘন এবং আইনের সঠিক প্রয়োগে অভাব এই পরিস্থিতির অন্যতম কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পদক্ষেপ

অপরাধ বৃদ্ধির কারণে পুলিশ সদর দপ্তরের মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম সারা দেশে পুলিশকে কঠোর দমন ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

রাজধানীতে অপরাধের বন্যা

ঢাকার সাম্প্রতিক অপরাধমূলক ঘটনার পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দেখা যাচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মাসিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত দুই মাস (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে ২৬৯টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে; এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১২৭টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও, সবচেয়ে বেশী ঘটেছে ছিনতাই (১১৪১টি) ও চাঁদাবাজ (১৭৩টি) মামলা।

অপরাধের পরিসংখ্যান ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ

  • হত্যা মামলা:
    গত বছরের প্রথম ছয় মাসে গড়ে ২৭২টি, আর পরবর্তী সাত মাসে গড়ে ৩১৪টি মামলা হয়েছে।
  • ডাকাতি ও দস্যুতা:
    প্রথম ছয় মাসে গড়ে ১৪৫টি, পরবর্তী সাত মাসে ১৭৮টি মামলা রেকর্ড হয়েছে।
  • অপহরণ:
    প্রথম ছয় মাসে গড়ে ৪৭টি, পরবর্তী সাত মাসে ৬৭টি মামলা হয়েছে।
  • বিশৃঙ্খলা ও পুলিশের ওপর হামলা:
    প্রতিবছর প্রথম ছয় মাসে যথাক্রমে ১৪ ও ৪৭টি মামলা, পরবর্তী সাত মাসে ১৭ ও ৬৭টি মামলা হয়েছে।
  • চোরাচালান:
    প্রথম ছয় মাসে ১৬৬টি ও পরবর্তী সাত মাসে ১৭৩টি মামলা হয়েছে।

এছাড়াও, চলতি বছরের জানুয়ারিতে হত্যার মামলা ২৯৪টি (গত বছরের ২৩১টি ও পূর্ববর্তী বছরগুলিতে ২১৪, ২৬৪, ও ২৭৩টি) এবং ডাকাতির মামলা ১৭১টি (গত বছরের ১১৪টি) হয়ে গেছে।

অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণসমূহ

বিভিন্ন সূত্র ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নির্দেশ করছে যে, অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে নিম্নলিখিত কারণগুলো কাজ করছে:

  • অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার
  • প্রলোভনে পড়ে অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া
  • বেকারত্ব ও হিংসা-বিদ্বেষ
  • আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত মোবিলিটি না থাকা
  • রাজনৈতিক অস্থিরতা
  • পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের অস্থিরতা

অপরাধীদের লক্ষ্যবস্তু ও গোয়েন্দা পুলিশের পর্যবেক্ষণ

গোয়েন্দা পুলিশের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দিনের বিভিন্ন সময়ে শপিং মল, ব্যাংক ও বীমাগুলোর ভিড়ে অপরাধীরা সহজেই তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন করছে। একই সঙ্গে, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও সদরঘাটসহ অন্যান্য জনসচেতন স্থানে অপরাধের ঘটনা বেড়েছে।

জরুরি বৈঠক ও সরকারী উদ্যোগ

সাম্প্রতিক ধর্ষণ, নৈরাজ্য ও মব জাস্টিসের ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় সরকার জরুরি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানিয়েছেন যে, অপরাধ প্রতিরোধে এবং নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রয়োজনে বিজিবিকেও প্রস্তুত রাখার কথাও আলোচনা হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে উদ্বেগ

গত দুই মাসে কমপক্ষে ১০৭ জনকে ধর্ষণের শিকার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৬ জন ১৮ বছরের নিচে শিশু। একই সময়ে ২২৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হন।

  • হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)-এর অনুসন্ধানে এসব তথ্য উদঘাটিত হয়েছে।
  • আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৪০১ জন নারী ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন।
  • পুলিশ সদর দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে ১৭,৫৭১টি নারী-শিশু নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
    একটি সাম্প্রতিক ঘটনায়, মাগুরায় ধর্ষণের শিকার একজন শিশুর চিকিৎসা এখনো চলমান রয়েছে।

গণপিটুনি ও সামাজিক অস্থিরতার প্রসঙ্গ

গণপিটুনির ঘটনায়, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩০টি ঘটনার ফলে ১৯ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে।
গত বছর ২০১টি গণপিটুনির ঘটনায় ১৭৩ জন নিহত ও ৮৮ জন আহত হয়েছিল, অর্থাৎ প্রতি চার থেকে পাঁচ দিনে একজন নিহত হয়।
গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১৪টি গণপিটুনির ঘটনায় ১১৯ জন নিহত হয়েছে।
সর্বশেষ একটি ঘটনায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও চোরাচালান সন্দেহে আটজনকে গণপিটুনিতে আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে, এবং তাদের চিকিৎসা চলছে।

ডাকাতিদস্যুতা ও ছিনতাইয়ের বেড়ে যাওয়া

বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ২০০ ভরি স্বর্ণ ও এক লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার পর মোহাম্মদপুরে রিকশা থামিয়ে এক নারীর কাছ থেকে ছিনতাই এবং হাজারীবাগে ডাকাতির ঘটনা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাভারে হিন্দু স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলীপ দাসকে নিম‍র্মভাবে হত্যা করা হয়েছে।  এসব ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রান্তিক অঞ্চলে ঘটমান অপরাধ

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিদেশ থেকে আগত দুই প্রবাসীকে ডাকাতের কবলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ওএসপিকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাজশাহী থেকে আসা  একটি বাসে ডাকাতির সময় দুই নারীকে শ্লীতাহানির অভিযোগ উঠেছে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার হোসেন মিয়া জানিয়েছেন, মহাসড়কে ডাকাতি বেড়েছে তবে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

উপসংহার

অপরাধের বিস্তারে সমাজে আতঙ্ক ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেমন পরিসংখ্যান ও ঘটনার তথ্য দিয়ে পরিস্থিতির তীব্রতা তুলে ধরেছে, তেমনি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অপরাধ দমন ও নৈরাজ্য দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।