সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
কানাডার সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মার্ক কার্নি এখন লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে এসে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। তবে তাঁর সামনে রয়েছে কঠিন কয়েকটি চ্যালেঞ্জ: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব, যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড সম্প্রসারণের আশঙ্কা এবং অদূর ভবিষ্যতে কানাডায় একটি অস্থির নির্বাচনী লড়াই।
ভূমিধস জয় ও নতুন নেতৃত্ব
মার্ক কার্নি ৮৬% ভোট পেয়ে লিবারেল পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। খুব শিগগির কানাডার গভর্নর-জেনারেল (যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লসের কানাডীয় প্রতিনিধি) তাঁকে সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হয়ে নতুন সরকারের দায়িত্ব নিবেন।
শুল্ক ও ভূখণ্ড দখলের হুমকি
কার্নিকে এখনই লড়তে হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত সম্ভাব্য যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ভূখণ্ড দখল ও কঠোর বাণিজ্য শুল্ক আরোপের হুমকির বিরুদ্ধে। ট্রাম্পের অস্থির নীতিগুলোর কারণে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এখন ভঙ্গুর অবস্থায়; যা কানাডার অর্থনীতি ও বিভিন্ন শিল্পখাতকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ঘনিয়ে আসা নির্বাচন
লিবারেল পার্টির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, কার্নি নিকট ভবিষ্যতেই সাধারণ নির্বাচনের ডাক দিতে পারেন। তিনি চান জনপ্রিয়তার এই নতুন ঢেউকে কাজে লাগিয়ে সংসদে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে। তবে বিরোধী দলগুলো হুমকি দিয়েছে, সুযোগ পেলেই তারা অনাস্থা প্রস্তাব আনবে।
সমর্থনের পরিবর্তন ও জনমতের মোড়
কিছুদিন আগেও বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি জনমত জরিপে এগিয়ে ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি ও ভূখণ্ড সম্প্রসারণ নিয়ে মন্তব্যের পর কানাডাজুড়ে জাতীয় ঐক্যের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা লিবারেলদের সমর্থন বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন কার্নির বড় কাজ হলো এই ইতিবাচক পরিবেশ ধরে রাখা এবং দীর্ঘ এক দশক ক্ষমতায় থাকা লিবারেল পার্টির ওপর ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও অগ্রাধিকার
কানাডায় সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয়, আবাসন সমস্যা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রকাশ করছে। অভিবাসন ব্যবস্থাপনাও বড় একটি ইস্যু হয়ে উঠেছে। দেশের ভেতরের এসব সমস্যার পাশাপাশি বাইরের দিকে নজর দিতে হবে ট্রাম্পের ‘বাণিজ্য যুদ্ধের’ মোকাবিলায়। পশ্চিম ইউনিভার্সিটির রাজনীতিবিজ্ঞানী ক্যামেরন অ্যান্ডারসন বলছেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্ভবত কানাডা এত বড় বহুমুখী চাপে পড়েনি।”
নতুন প্রধানমন্ত্রী: কোনো নির্বাচনী অভিজ্ঞতা নেই
মার্ক কার্নি হবেন কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি আগে কখনো কোনো নির্বাচনে অংশ নেননি। তিনি ব্যাংক অব কানাডা এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর ছিলেন, অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষতা দেখিয়েছেন, কিন্তু রাজনৈতিক ময়দায় তিনি একেবারে নতুন। তবু তিনি লিবারেল দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতায় দুইজন নারীমন্ত্রীকে পেছনে ফেলেছেন।
ট্রুডোর নীতি থেকে কিছুটা সরে আসা
কার্নি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি জ্বালানি খাতে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর ধার্য করা কার্বন ট্যাক্স বাতিল করতে চান। পাশাপাশি ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বৃদ্ধির পরিকল্পনাও স্থগিত রাখতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের জবাবে “ডলার-ফর-ডলার” পাল্টা শুল্কের বিষয়েও তিনি কঠোর অবস্থান নিতে চান। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের বাধা কমানো, আগামী দশ বছরে আবাসন নির্মাণের গতি দ্বিগুণ করা এবং অভিবাসন কিছুটা সীমিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—যা ট্রুডোর আগের নীতি থেকে ভিন্ন।
বিরোধী নেতার পাল্টা আক্রমণ
লিবারেল পার্টি বরাবরই কনজারভেটিভ নেতা পিয়ের পয়েলিয়েভকে ট্রাম্পের আদর্শগত সমমনা হিসেবে দেখিয়ে আসছে। পয়েলিয়েভও কার্নির পরিকল্পনাগুলোকে অকার্যকর ও অগ্রহণযোগ্য বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞানী রিচার্ড জনস্টন মনে করেন, “কার্নি ট্রাম্পবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে পয়েলিয়েভের ভোট ব্যাংকে আঘাত করতে চাইবেন।”
সামনের পথ
শপথ গ্রহণের পর কার্নির প্রধান কর্তব্য হবে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা। একই সঙ্গে তাঁকে ট্রাম্পের শুল্ক-চাপ ও ভূখণ্ড সম্প্রসারণের আশঙ্কা সামলাতে হবে। ক্যামেরন অ্যান্ডারসনের ভাষায়, “বর্তমানে কানাডা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক—দুই দিক থেকেই অভাবনীয় চাপে রয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে দরকার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও স্থিতধী নেতৃত্ব।”
Leave a Reply