আর্কাদি গাইদার
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
প্রায় কোপটার সামনা-সামনি এসে পড়েছে যখন এমন সময় হাঁসটা হঠাৎ ঘাড় বাঁকিয়ে সন্দেহের চোখে আমার দিকে তাকাল। আমি আগাগোড়া ওর পেছন-পেছন যাচ্ছি দেখেই হয়তো হাঁসটার ধাঁধা লেগেছিল। তারপর যেন মনস্থির করে ফেলে হাঁসটা আবার পিছু ফিরল। কিন্তু বেড়াল যেভাবে চড়ুইপাখির ওপর বিদ্যুৎগতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেইভাবে ঝোপের আড়াল থেকে লাফিয়ে পড়ে ছেলেটাও এই সময়ে দু-হাতে হাঁসের গলা চেপে ধরলে। ভালোমতো ডাকবারও সময় পেলে না হাঁসটা।
এদিকে হাঁসের দলটা এই ব্যাপার দেখে প্যাঁকপ্যাঁক শুরু করে দিল আর সেই অবসরে ছেলেটা ছটফট করা হাঁসটাকে দু-হাতে চেপে ধরে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ল। পিছুপিছু আমিও ছুটলুম।’
অনেকক্ষণ ধরে হাঁসটা ডানা ঝাপটাতে-ঝাপটাতে, প্রাণপণে পা ছুড়তে-ছড়তে চলল। আমরা খাদের মধ্যে একটা নির্জন জায়গায় পৌঁছনো পর্যন্ত ও লড়াই চালিয়ে গেল। তারপর এক সময় থামল। ছেলেটা হাঁসটাকে মাটিতে ছুড়ে দিয়ে পকেট থেকে খানিকটা তামাক বের করলে। জোরে-জোরে দম নিতে-নিতে বললে:
‘এখানেই কাজ চলে যাবে। থামা যাক তাহলে।’
ছোট্ট একটা পকেটছুরি বের করে ও নিঃশব্দে হাঁসটার ছাল ছাড়াতে বসে গেল। আর মাঝে মাঝে তাকাতে লাগল আমার দিকে।
ভাঙা ডালপালা যোগাড় করে এক জায়গায় জড়ো করতে লাগলুম আমি।
জিজ্ঞেস করলুম, ‘দেশালাই আছে?’
‘এই-যে,’ রক্তমাখা আঙুলে এক বাক্স দেশালাই আমার হাতে তুলে দিয়ে ছেলেটা বললে, ‘বুঝেসুঝে খরচ কোরো কিন্তু।’
এতক্ষণে ওর দিকে ভালো করে তাকালুম। পুরু ধুলোর আস্তরণ ওর কাটা-কাটা মুখচোখের মসৃণ শাদা রঙটা চাপা দিতে পারে নি। দেখলুম, কথা বলার সময় ওর দুই ঠোঁটের ডানদিকের জোড়ের কাছটা হঠাৎ অল্প একটু কোপে ওঠে আর সঙ্গে সঙ্গে বাঁ-চোখটা একটু কু’চকে যায়। ও ছিল আমার চেয়ে বছরখানেক কি বছর- দুয়েকের বড়, আর মনে হচ্ছিল গায়ে শক্তিও রাখে বেশি। চুরি-করা হাঁসটাকে যতক্ষণ শিকে গে’থে ঝলসানো হচ্ছিল, আমরা ঘাসের ওপর শুয়ে রইলুম। চারিদিক তখন ঝলসানো মাংসর মনোরম গন্ধে ম-ম করছে।
Leave a Reply