আর্কাদি গাইদার
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
আমার হাতের ছোট লাঠিটা মাটিতে পড়ে যাওয়ায় সেটা তুলতে নিচু হতেই দেখি ছোট্ট চকচকে কাঁ-একটা জিনিস রাস্তার কাদার মধ্যে গে’থে আছে। মনে হল, কেউ পা দিয়ে মাড়িয়ে গিয়েছে ওটাকে। জিনিসটা তুলে কাদাটা মুছে নিলুম। দেখলুম, লাল তারার আকারের একটা ছোট্ট টিনের পদক ওটা। উনিশ শো আঠারো সনে লাল ফৌজের সৈনিকদের পশমী টুপীতে কিংবা শ্রমিক ও বলশেভিকদের ঢোলা কামিজের বুকে সাঁটা থাকত যে-ধরনের হাতে-বানানো ধ্যাবড়া-ধ্যাবড়া পদক, ওটাও ছিল সেই রকম।
‘এখানে এটা এল কী করে?’ রাস্তাটা ভালো করে পরীক্ষা করতে-করতে আমি অবাক হয়ে ভাবলুম। হেট হয়ে দেখতে-দেখতে এবার একটা খালি কার্তুজের খোল কুড়িয়ে পেলুম।
তেষ্টা-ফেন্টা বেমালুম সব ভুলে সঙ্গীর কাছে একদৌড়ে ফিরে গেলুম আমি। সঙ্গীটি তখন আর ঘুমোচ্ছিল না। একটা ঝোপের পাশে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক দেখছিল। খুব সম্ভব আমাকেই খুঁজছিল ও।
নিচে থেকে ছুটে ওপরে উঠতে-উঠতে দূর থেকেই ওকে দেখে চে’চিয়ে বললুম, ‘লাল ফৌজ! লাল ফৌজ!’
যেন ওর পেছনে কেউ গুলি ছুড়েছে এমনিভাবে হঠাৎ হোট হয়ে ছিটকে একপাশে সরে গেল ও। তারপর আমার দিকে যখন ফিরল তখনও দেখি ভয়ে ওর মুখটা সি’টকে রয়েছে।
আর কেউ নয় শুধুই আমি আছি দেখে ও আবার খাড়া হয়ে উঠল। তারপর যেন নিজের ভয়ের কারণ ব্যাখ্যা করার জন্যে রাগ দেখিয়ে বলল:
‘একেবারে কানের কাছে পাগলের মতো চ্যাঁচাচ্ছিল দ্যাখো-না…’
গর্বের সুরে আমি আবার বললুম, ‘লাল ফৌজ।’
‘কোথায়?’
‘আজ সকালেই এই পথে গেছে। সারা রাস্তা জুড়ে ঘোড়ার খুরের দাগ, ঘোড়ার নাদও বেশ টাটকা। একটা কার্তুজের খোল পেলুম, আর এইটে…’ ওকে তারামার্কা পদকটা দেখালুম।
Leave a Reply