সারাক্ষণ রিপোর্ট
ইসলামাবাদ হাইকোর্ট (আইএইচসি) পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও কারাবন্দি ইমরান খানের সাক্ষাৎাধিকারের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। আদালত তাকে সপ্তাহে দুইবার সাক্ষাৎ করার অনুমতি পুনর্বহাল করেছে।
তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন
আইএইচসি প্রশাসন একটি তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সরদার সরফরাজ ডোগর। বেঞ্চে আরও ছিলেন বিচারপতি আরবাব মোহাম্মদ তাহির ও বিচারপতি মোহাম্মদ আজম খান। এই বেঞ্চ ২৬টি আবেদন একত্রে শুনানি করে, যার মধ্যে ছিল সাক্ষাৎাধিকারের পাশাপাশি আদিয়ালা জেলের পরিস্থিতি সংক্রান্ত অভিযোগ।
এই সব আবেদন একই বেঞ্চে স্থানান্তর করা হয় আদিয়ালা জেলের সুপারিনটেনডেন্ট আবদুল গফুর আনজুমের অনুরোধে, যিনি একাধিক বেঞ্চে হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে লজিস্টিক সমস্যা উল্লেখ করেন।
আদালতীয় শুনানির বিবরণ
ইমরান খানের আইনজীবী জহির আব্বাস আদালতকে জানান, ইমরান খানের মঙ্গলবার পরিবার ও আইনজীবীদের এবং বৃহস্পতিবার বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা। কিন্তু ২০ মার্চ নির্ধারিত সাক্ষাৎ হয়নি।
বিচারপতি ডোগর বলেন, এটি একটি ছোট বিষয় এবং এটি ইতোমধ্যেই অন্তর্বর্তী আপিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে।
পিটিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সালমান আকরম রাজা বলেন, “এসওপি অনুযায়ী আমাদের বৃহস্পতিবারের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
বিচারপতি আরবাব তাহির বলেন, সাক্ষাতের দিন মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার নির্ধারিত ছিল এবং তা আপিলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছিল।
জেল কর্তৃপক্ষের যুক্তি
আদিয়ালা জেলের পক্ষে আইনজীবী নাভিদ মালিক বলেন, ডিসেম্বর পর্যন্ত সপ্তাহে দুইবার সাক্ষাৎ হচ্ছিল, তবে জানুয়ারিতে ইমরান ও বুশরা বিবির দণ্ডের পর পরিস্থিতি বদলে যায়।
তিনি জানান, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দুই দিনের পরিবর্তে মঙ্গলবারে একসঙ্গে দুইটি সাক্ষাৎ নেওয়া হচ্ছিল। তিনি বলেন, “জেল আইন অনুযায়ী সাক্ষাৎ নির্ধারণের ক্ষমতা জেল সুপারিনটেনডেন্টের রয়েছে।”
এছাড়া, নাভিদ মালিক অভিযোগ করেন, পিটিআই নেতারা সাক্ষাতের সুবিধা নিয়ে রাজনীতি করেছেন এবং সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সামনে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন, যা নিয়ম লঙ্ঘন।
বিচারপতি ডোগর প্রশ্ন করেন, “আপনি বলছেন দুই দিনের সাক্ষাৎ আপনি একদিনে করছেন?”
আইনজীবী শের আফজাল মারওয়াত বলেন, এ বিষয়টি ইতোমধ্যে আপিলে নিষ্পত্তি হয়েছে।
বিচারপতি ডোগর বলেন, “সালমান আকরম রাজা হলেন সমন্বয়কারী, আমরা তার বক্তব্য শুনব।” তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিন কেউ না কেউ ইমরানের সঙ্গে সাক্ষাৎ চায়।”
আলোচনার নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণ
মালিক বলেন, পিটিআই নেতারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎ ব্যবহার করছেন, ৯৮টি আবেদন এর প্রমাণ। তবে বিচারপতি আরবাব তাহির বলেন, “আপনি যদি সঠিকভাবে নিয়ম কার্যকর করতেন, তবে এত আবেদন জমা পড়ত না।”
বিচারপতি ডোগর বলেন, “সাক্ষাৎ শেষে মিডিয়ার সামনে কথা বলার প্রয়োজন কী? শুধু সাক্ষাৎ করুন এবং চলে যান। আমরা তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নেব যে সাক্ষাতের পর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলবেন না।”
তিনি আরও বলেন, এটি একটি ছোট বিষয়, দুই দিনের সাক্ষাৎ চাওয়া হয়েছে মাত্র।
আদালতের নির্দেশনা ও নিষেধাজ্ঞা
নাভিদ মালিক বলেন, তারা সপ্তাহে দুইবার সাক্ষাৎ ব্যবস্থা করতে রাজি, যদি দেখা শেষে রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। তবে তিনি প্রস্তাব দেন, যেন সপ্তাহে শুধু একদিন সাক্ষাৎ রাখা হয়।
বিচারপতি ডোগর জানান, সিনিয়র আইনজীবী সালমান আকরম রাজা আশ্বাস দিয়েছেন যে সাক্ষাতের পর রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া হবে না।
রাজা জানান, অক্টোবরের পর থেকে কোনো সাক্ষাৎ হয়নি।
আদালত নির্দেশ দেয়, কেবলমাত্র পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সমন্বয়কারী সাক্ষাতের জন্য আগতদের তালিকা দিতে পারবেন। সবাই যেন ইচ্ছামতো সাক্ষাৎ চাইতে না পারেন। পাশাপাশি, সাক্ষাতের পর কোনো মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা যাবে না।
ইমরান খানের সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে আদালত নির্দেশ দেয়, সংশ্লিষ্ট ট্রায়াল কোর্টে আবেদন করতে হবে।
শেষ কথা
আইএইচসি-র এই রায়ে ইমরান খানের পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা আবারও নির্ধারিত দিনে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেলেন। তবে আদালত কড়া শর্ত জুড়ে দিয়েছে, যেন এই সাক্ষাৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়।
Leave a Reply