উত্তর সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন বিরোধী প্রার্থী তুফান এরহুরমান। এই ফলাফল ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনে বিজয় ও ভোটের ফলাফল
তুর্কি রিপাবলিক অব নর্দার্ন সাইপ্রাস (টিআরএনসি)-এর নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় জানা গেছে, সমাজতান্ত্রিক ঘরানার রিপাবলিকান টার্কিশ পার্টির (সিটিপি) চেয়ারম্যান তুফান এরহুরমান ৬২.৭৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এরসিন তাতার পেয়েছেন ৩৫.৮১ শতাংশ ভোট।
মোট ২ লাখ ১৮ হাজারের বেশি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেন। রবিবার বিকেল ৩টা (জিএমটি) ভোটগ্রহণ শেষে তত্ত্বাবধান করেছিল টিআরএনসি সর্বোচ্চ নির্বাচন বোর্ড।
এরহুরমানের প্রতিক্রিয়া
জয়ের পর এরহুরমান বলেন, ‘এই নির্বাচনে কেউ পরাজিত নয়—আমরা সবাই মিলে জিতেছি।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতিতে আমি দায়িত্ব পালন করব তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে পরামর্শ করে। কেউ উদ্বিগ্ন হবেন না।’
৫৫ বছর বয়সী এই আইনজীবী নিকোসিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। এর আগে তিনি ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টিআরএনসির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন নেতা মেহমেত আলি তালাতের অধীনে গ্রিক সাইপ্রিয়টদের সঙ্গে ফেডারেল পুনর্মিলন আলোচনায় অংশ নেন।
তাতারের অবস্থান
৬৫ বছর বয়সী এরসিন তাতার তুরস্ক সরকারের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থী ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দ্বীপকে দুই স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত রাখার পক্ষে ছিলেন।
এরহুরমান বিপরীতে দ্বীপের পুনর্মিলনের আলোচনাকে পুনরায় শুরু করতে চান, যাতে তুর্কি ও গ্রিক সাইপ্রিয়টদের মধ্যে একটি ফেডারেল কাঠামো গঠিত হতে পারে।
বিভক্ত দ্বীপের প্রেক্ষাপট
১৯৭৪ সালে দক্ষিণ সাইপ্রাসে গ্রিস-পন্থী অভ্যুত্থানের পর দ্বীপটি বিভক্ত হয়। তুরস্ক ওই বছর সামরিক হস্তক্ষেপ করে, যা থেকে ১৯৮৩ সালে উত্তরাংশে গঠিত হয় টিআরএনসি। তবে এটি কেবল তুরস্কের দ্বারাই স্বীকৃত।
তুরস্ক বর্তমানে উত্তর সাইপ্রাসে প্রায় ৩৫ হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন রেখেছে।
২০০৪ সালে পুরো সাইপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিলেও, কেবল দক্ষিণ অংশ—যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত—পূর্ণ সদস্যপদ সুবিধা ভোগ করছে। অনেক তুর্কি সাইপ্রিয়ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বীকৃত সাইপ্রাস পাসপোর্ট ব্যবহার করলেও, তারা উত্তরাংশেই বসবাস করেন।
গ্রিক সাইপ্রিয়টরা “দুই রাষ্ট্র” প্রস্তাবকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুমোদিত দ্বি-অঞ্চলীয়, দ্বি-সম্প্রদায়ভিত্তিক ফেডারেশন কাঠামোর পরিপন্থী বলে দাবি করেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
গ্রিক সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডুলিডিস নতুন প্রেসিডেন্ট এরহুরমানকে অভিনন্দন জানিয়ে পুনরায় আলোচনায় বসার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।
অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সামাজিক মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তুরস্ক উত্তর সাইপ্রাসের ‘অধিকার ও সার্বভৌম স্বার্থ’ রক্ষা অব্যাহত রাখবে।
উত্তর সাইপ্রাসের এই নির্বাচন দ্বীপটির ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এরহুরমানের জয়ে আলোচনার পথ খুলতে পারে, যা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।