আজ ২৫শে মার্চ। বাঙালি জাতি ও এই জাতি রাষ্ট্রের জন্যে এক ভয়াবহতম দিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তার এ দেশীয় দোসররা এই দিনে বাংলাদেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী সহ সকল বড় বড় শহর এবং এবং দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে, সাধারণ নিম্মবিত্ত মানুষের বাসস্থানে আগুন দিয়ে, মেশিনগান চালিয়ে, ট্যাঙ্ক দিয়ে গুলি চালিয়ে শুরু করে ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যা। সময় ও ভয়াবহতার বিচারে এ গণহত্যা্ আর্মেনিয় গণহত্যা, হিটলারের গনহত্যা, স্ট্যালিনের গনহত্যা এমন কি মাও দেজ দং এর কালচার বিপ্লবের নামে গণহত্যা, খেমারুজ গণহত্যাকেও হার মানায়। কারণ, পৃথিবীতে এত কম সময়ে এত বেশি সংখ্যক মানুষ এবং এমন নির্বিচারে হত্যা করা হয়নি।
আর সকল মৌলবাদী গণহত্যাকারী, তাই তারা যে নামেই হোক না কেন, তাদরে গণহত্যার যে পদ্ধতি এখানেও সেই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিলো। তারা মূলত একটি লিবারেল রাজনৈতিক আদর্শকে ধ্বংস করার জন্যে, একটি বিশেষ ধর্মালম্বীদের ধ্বংস করার জন্যে এথনিক ক্লিনজিং শুরু করে। সেই সঙ্গে সঙ্গে শুরু করে সরব ও নীরব নারী ধর্ষন। সরব নারী ধর্ষনের মাধমে প্রগতিশীল ও শিক্ষিত নারীকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। পাশাপাশি নীরব নারী ধর্ষনের মাধ্যমে তারা একটি জাতির ডিএনএ বদলে দেয়ার কাজ করে। যাতে ৫০ বছর পরে হলেও ওই জনগোষ্টিতে তাদের একটি বংশগতি রয়ে যায়।
বাংলাদেশ ওই ভয়াবহ গনহত্যা পার হয়ে, রক্ত সাগর পেরিয়ে আজ একটি স্বাধীন জাতি বটে- তবে স্থিতিশীল জাতি নয়। কারণ গত ৫৫ বছরে একবার মাত্র এদেশে স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। ভবিষ্যতে আগামী ৫০ বছরে হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তেমনি নিজ দেশের গণহত্যার প্রশ্নেও জাতি দ্বিধা বিভক্ত।
তবু সত্য হলো, জ্বলে পুড়ে ছার খার হলেও বাঙালি শেষ হয়ে যায় না। ভবিষ্যতের দিকে এগোয়, সকল বাধা, ইতিহাসের সকল ভালো ও মন্দ অধ্যায় পার হয়ে। তাই বাঙালি এই ভয়াবহ দিনের স্মরনে দাঁড়িয়েও স্বপ্ন দেখতে পারে কবি কাজী নজরুলের মত দৃপ্ত মন নিয়ে- ধ্বংসের মাঝে দাঁড়িয়ে পুষ্পের হাসি হাসতে পারার মতো- আজ না হোক কোন একদিন এই সকল শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বাঙালি জেগে উঠবেই।
Leave a Reply