সারাক্ষণ রিপোর্ট
কেলি জেরার্ডি এমন একজন নারী, যিনি মহাকাশ বিজ্ঞানের সঙ্গে নিজের নারীত্ব ও ব্যক্তিত্বকে সমন্বয় করে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছেন। তিনি বলেন, “আমি কখনোই আমার নারীত্ব বা ব্যক্তিত্বকে চাপা দিইনি অন্যদের চোখে ‘পেশাদার’ দেখানোর জন্য।”
২০২৩ সালের নভেম্বরে, প্রথমবারের মতো মহাকাশে যাওয়ার পর পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে তার চোখে পানি চলে আসে। কারণ, তখন তিনি তার ৭ বছর বয়সী মেয়ে ডেল্টা ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে একই গ্রহে ছিলেন না। সেই আবেগঘন মুহূর্তে তিনি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলেছিলেন, “হাই, ডেল্টা।” এই মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং বর্তমানে তার ইনস্টাগ্রাম ফলোয়ার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।
নারীত্ব ও বিজ্ঞানের মিলন
জেরার্ডি চান, মানুষ যেন বোঝে—বিজ্ঞান ভালোবাসা মানেই শুষ্কতা নয়। তিনি বলেন, “আপনি যদি আমাকে চোখ বন্ধ করে একজন মহাকাশচারীর ছবি আঁকতে বলেন, আমি আমার মতো কাউকে ভাববো না। অথচ আমার মেয়ে আঁকলে সে একজন মেয়েকেই আঁকে।” তিনি বুঝেছেন, প্রতিনিধিত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয় মহাকাশ অভিযানের প্রস্তুতি
জেরার্ডি ২০২৬ সালে দ্বিতীয়বার মহাকাশে যাবেন। এই অভিযানে তার সঙ্গে থাকবেন কানাডার শাওনা পান্ডিয়া এবং আয়ারল্যান্ডের নোরা প্যাটেন—তিনজনই জীববৈজ্ঞানিক গবেষক। তিনজনেই নারীত্বের দারুণ উদাহরণ এবং উচ্চমাত্রার দক্ষতা সম্পন্ন।
প্রথম অভিযানে তিনি ভার্জিন গ্যালাকটিক-এর একটি গবেষণা মিশনে অংশ নেন, যেখানে মহাশূন্যে তরলের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা হয়। এবার আরও বিস্তারিত গবেষণা হবে। প্রথম অভিযানে তার কোনো অসুস্থতা হয়নি, শুধু অতিরিক্ত হাসির কারণে গালে ব্যথা পেয়েছিলেন।
স্বপ্নের পথে মা‘র সমর্থন
কেলির মা ম্যারিয়ন জেরার্ডি সবসময় তার পাশে থেকেছেন। দ্বিতীয়বার মহাকাশে যাওয়ার খবর পাওয়ার পর, তিনি কেলিকে “ক্যারিয়ার শাওয়ার” দেন—যা একধরনের পেশাগত অর্জনের উদযাপন।
নিজেকে প্রকাশে নির্লজ্জ সাহসী
জেরার্ডি মহাকাশে যাওয়ার সময় মেকআপ করে গিয়েছিলেন, হাতে ছিল বন্ধুত্বের ব্রেসলেট—টেলর সুইফট কনসার্টে যেগুলো আদান-প্রদান করা হয়। এই মুহূর্তকে তিনি নিজের বিবাহ বা সন্তানের জন্মদিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন। পরবর্তীতে মহাকাশে যাওয়া ব্রেসলেটগুলো খুলে তার ভক্তদের দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি এমন একজন হতে চাইনি, যে অন্যদের চোখে পেশাদার দেখানোর জন্য নিজের নারীত্ব বা স্বকীয়তা চাপা দেয়। আমি চাই, পেশাদারিত্বের ছবিটা এমন হোক, যেখানে আমিও থাকি।”
অনুপ্রেরণার উৎস
অনেক নারী কেলির গল্প শুনে আবার পড়াশোনা শুরু করেছেন বা স্বপ্নের চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। তিনি তার ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) যাত্রাও শেয়ার করেন, যাতে সন্তান নিতে সমস্যা হওয়া নারীরা একাকী না বোধ করেন।
তবে সমালোচনা তাকে কাঁপায় না। তিনি বলেন, “আমি আমার আত্মার সঙ্গে মিল খায় এমন কিছু করছি। তাই নেতিবাচক কথাবার্তার জন্য আমার সময় নেই।”
কেলির দুনিয়া—একটি মহাকাশ থিমে সাজানো ঘর
যখন মহাকাশ প্রশিক্ষণে ব্যস্ত থাকেন না, তখন কেলি স্পেস-থিমে পোশাক ডিজাইন করেন, ঘর সাজান, শিশুদের জন্য বই লেখেন (তার লেখা “লুনা মুনা” সিরিজ বেশ জনপ্রিয়) এবং প্রিয় গায়িকা টেলর সুইফটের গান “Florida!!!” শুনে সময় কাটান।
তার বাড়িতে মহাকাশের থিম প্রত্যেক জায়গা—ডাইনিং রুমে গ্রহ আর নক্ষত্রের মোজাইক, বসার ঘরে চাঁদের আকারের ল্যাম্প, দেয়ালে তার মহাকাশচারি পোশাকে পপ-আর্ট পোস্টার, টেবিলের কোণে রকেট ফিগার।
মেয়েকে বার্তা: সীমাহীন সম্ভাবনা
জেরার্ডির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার মেয়েকে বুঝিয়ে দেওয়া—জীবনে একটিমাত্র আগ্রহ বেছে নিতে হয় না। তিনি বলেন, “সবাই জানতে চায়, আমার মেয়ে কি আমার পথে হাঁটবে। সত্যি বলতে, আমি চাই শুধু সে যেন নিজের সীমাহীন সম্ভাবনার দিকেই এগিয়ে যায়, যেমনটা আমি গিয়েছি। আমি চাই, সে জানুক—আকাশও সীমা নয়।”
Leave a Reply