০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য ঘাটতি: শত ভাগ শুল্কমুক্ত হলেও বাড়ছে না রফতানি

  • Sarakhon Report
  • ০৫:০৫:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫
  • 101

সারাক্ষণ রিপোর্ট

চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, বড় রপ্তানিকারক এবং দ্বিতীয় আমদানিকারক দেশ। ১৪১ কোটির জনসংখ্যার এই বাজার বাংলাদেশের জন্য অনেক সম্ভাবনা তৈরি করলেও বাস্তবে বাংলাদেশের রপ্তানি খুব কম।

চীন বাংলাদেশকে ১০০% শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার পরেও রপ্তানি বাড়েনি, বরং বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে আসন্ন প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

‌চীন থেকে ১% রপ্তানি এলেই আয় ২৫ বিলিয়ন ডলার

অর্থনীতিবিদদের মতে, চীনের আমদানির মাত্র ১ শতাংশ যদি বাংলাদেশ থেকে আসে, তাহলে প্রতিবছর ২৫ বিলিয়ন ডলার আয় সম্ভব। এজন্য দরকার রপ্তানি বৈচিত্র্য এবং মানসম্মত পণ্যে গুরুত্ব দেওয়া।

চীন কমদামি পণ্যে আগে থেকেই অনেক এগিয়ে, তাই সস্তা পণ্য রপ্তানিতে বেশি লাভ নেই। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—ভ্যালু অ্যাডেড বা উচ্চমূল্যের পণ্যে গুরুত্ব দিতে হবে।

‌রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাড়লেও রপ্তানি কম

  • ২০২০: ৯৭% পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা
  • ২০২২: ৯৮% পণ্যে সুবিধা, চামড়াজাত পণ্য যুক্ত
  • ২০২৩: আরও ৩৮৩টি পণ্য যুক্ত
  • ২০২৪ (ডিসেম্বর): স্বল্পোন্নত দেশের সব পণ্যেই শুল্কমুক্ত সুবিধা

তবুও রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি।

‌চীন কেন বাংলাদেশি পণ্য নিচ্ছে না?

সাবেক বিজিএমইএ নেতা মনে করেন,
চীনের নিজেদের উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেশি, তাই তারা স্থানীয়ভাবেই অনেক কিছু উৎপাদন করে নেয়। আমরা একই ধরনের পণ্য রপ্তানি করি, ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ি।

তার মতে, চীনে উচ্চমানের পোশাক ও পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তাই সেই ধরনের পণ্যে নজর দেওয়া উচিত।

‌বাংলাদেশের রপ্তানি কমআমদানি বেশি

বাংলাদেশের রপ্তানি অনেকটাই চীন থেকে আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল। তাই রপ্তানির পাশাপাশি আমদানি কমিয়ে ঘাটতি কমানো জরুরি।

অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন, দেশেই কাঁচামাল উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হলে চীন থেকে আমদানি কমবে। অন্যদিকে উচ্চমানের পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আয় বাড়বে।

‌চীনের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান খুব দুর্বল

আইটিসি-এর তথ্য অনুযায়ী (২০২৪):

  • চীন মোট আমদানি করেছে: ৯৭৫৩.৫৪ কোটি ডলারের পণ্য
  • বাংলাদেশ থেকে আমদানি: মাত্র ৪৫১.৯২ কোটি ডলার (৪.৬৩%)
  • এই হার আগের বছর ছিল:
    • ২০২৩: ৪.৩২%
    • ২০২২: ৪.০৩%

‌বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য ঘাটতির চিত্র

  • ২০২২-২৩ অর্থবছরে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি: ১৫ বিলিয়ন ডলার
  • শুধু চীনের সঙ্গে ঘাটতি: ১৭ বিলিয়ন ডলার (অর্থাৎ আরও বেশি!)
  • বাংলাদেশের রপ্তানি: ৬৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার
  • চীনের বিনিয়োগ (২০২২-২৩): মাত্র ৯ কোটি ৩২ লাখ ডলার (২০১৮-১৯-এ ছিল ১১৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলার)

‌চীনের বাজার ধরতে হলে কী করতে হবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন:

  • রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে
  • উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে
  • উচ্চমানের পণ্য ও ভ্যালু অ্যাডেড পণ্যে জোর দিতে হবে
  • চীনের বিনিয়োগ বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে

সারাংশ:
বাংলাদেশের সামনে চীনের বিশাল বাজারে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও সেটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য, মান এবং চীনের বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে এই ঘাটতি আরও বাড়বে। আসন্ন চীন সফর এ ক্ষেত্রে একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য ঘাটতি: শত ভাগ শুল্কমুক্ত হলেও বাড়ছে না রফতানি

০৫:০৫:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, বড় রপ্তানিকারক এবং দ্বিতীয় আমদানিকারক দেশ। ১৪১ কোটির জনসংখ্যার এই বাজার বাংলাদেশের জন্য অনেক সম্ভাবনা তৈরি করলেও বাস্তবে বাংলাদেশের রপ্তানি খুব কম।

চীন বাংলাদেশকে ১০০% শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার পরেও রপ্তানি বাড়েনি, বরং বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে আসন্ন প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

‌চীন থেকে ১% রপ্তানি এলেই আয় ২৫ বিলিয়ন ডলার

অর্থনীতিবিদদের মতে, চীনের আমদানির মাত্র ১ শতাংশ যদি বাংলাদেশ থেকে আসে, তাহলে প্রতিবছর ২৫ বিলিয়ন ডলার আয় সম্ভব। এজন্য দরকার রপ্তানি বৈচিত্র্য এবং মানসম্মত পণ্যে গুরুত্ব দেওয়া।

চীন কমদামি পণ্যে আগে থেকেই অনেক এগিয়ে, তাই সস্তা পণ্য রপ্তানিতে বেশি লাভ নেই। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—ভ্যালু অ্যাডেড বা উচ্চমূল্যের পণ্যে গুরুত্ব দিতে হবে।

‌রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাড়লেও রপ্তানি কম

  • ২০২০: ৯৭% পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা
  • ২০২২: ৯৮% পণ্যে সুবিধা, চামড়াজাত পণ্য যুক্ত
  • ২০২৩: আরও ৩৮৩টি পণ্য যুক্ত
  • ২০২৪ (ডিসেম্বর): স্বল্পোন্নত দেশের সব পণ্যেই শুল্কমুক্ত সুবিধা

তবুও রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়েনি।

‌চীন কেন বাংলাদেশি পণ্য নিচ্ছে না?

সাবেক বিজিএমইএ নেতা মনে করেন,
চীনের নিজেদের উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেশি, তাই তারা স্থানীয়ভাবেই অনেক কিছু উৎপাদন করে নেয়। আমরা একই ধরনের পণ্য রপ্তানি করি, ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ি।

তার মতে, চীনে উচ্চমানের পোশাক ও পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তাই সেই ধরনের পণ্যে নজর দেওয়া উচিত।

‌বাংলাদেশের রপ্তানি কমআমদানি বেশি

বাংলাদেশের রপ্তানি অনেকটাই চীন থেকে আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল। তাই রপ্তানির পাশাপাশি আমদানি কমিয়ে ঘাটতি কমানো জরুরি।

অনেক ব্যবসায়ী মনে করেন, দেশেই কাঁচামাল উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হলে চীন থেকে আমদানি কমবে। অন্যদিকে উচ্চমানের পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আয় বাড়বে।

‌চীনের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান খুব দুর্বল

আইটিসি-এর তথ্য অনুযায়ী (২০২৪):

  • চীন মোট আমদানি করেছে: ৯৭৫৩.৫৪ কোটি ডলারের পণ্য
  • বাংলাদেশ থেকে আমদানি: মাত্র ৪৫১.৯২ কোটি ডলার (৪.৬৩%)
  • এই হার আগের বছর ছিল:
    • ২০২৩: ৪.৩২%
    • ২০২২: ৪.০৩%

‌বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য ঘাটতির চিত্র

  • ২০২২-২৩ অর্থবছরে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি: ১৫ বিলিয়ন ডলার
  • শুধু চীনের সঙ্গে ঘাটতি: ১৭ বিলিয়ন ডলার (অর্থাৎ আরও বেশি!)
  • বাংলাদেশের রপ্তানি: ৬৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার
  • চীনের বিনিয়োগ (২০২২-২৩): মাত্র ৯ কোটি ৩২ লাখ ডলার (২০১৮-১৯-এ ছিল ১১৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলার)

‌চীনের বাজার ধরতে হলে কী করতে হবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন:

  • রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে
  • উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে
  • উচ্চমানের পণ্য ও ভ্যালু অ্যাডেড পণ্যে জোর দিতে হবে
  • চীনের বিনিয়োগ বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে

সারাংশ:
বাংলাদেশের সামনে চীনের বিশাল বাজারে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও সেটা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য, মান এবং চীনের বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে এই ঘাটতি আরও বাড়বে। আসন্ন চীন সফর এ ক্ষেত্রে একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।