০২:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

গুয়েলফ ট্রেজার: ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বিরল সংগ্রহ নিয়ে মালিকানা বিতর্ক

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
  • 51

সারাক্ষণ রিপোর্ট

জার্মানির বার্লিনে অবস্থিত মিউজিয়াম অব অ্যাপ্লায়েড আর্টসে রাখা গুয়েলফ ট্রেজার হলো মধ্যযুগের গির্জার বিভিন্ন মূল্যবান ধর্মীয় শিল্পকর্মের সংগ্রহ।
এতে রয়েছে:

  • সোনা, রূপা ও তামার তৈরি ক্রুশ ও রেলিক
  • তুষারভালুকের দাঁতের তৈরি মূর্তি

এই সংগ্রহের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার

বিতর্কের সূচনা: নাৎসি আমলের বিক্রয়

২০০৮ সালে চারজন ইহুদি শিল্প ব্যবসায়ীর উত্তরসূরিরা দাবি করেন,
১৯৩৫ সালে নাৎসিদের চাপের মুখে জোর করে এই ট্রেজার বিক্রি করা হয়।
একাধিক নতুন জার্মান নথিতে এই দাবির পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়।

সম্প্রতি, অ্যালিস কোখ নামের এক ব্যবসায়ীর পরিবারও এই দলে যুক্ত হয়েছে, যিনি এর আগে বিবেচনায় আসেননি।

অ্যালিস কোখ ও বৈষম্যমূলক কর

আইনজীবী জর্গ রসবাখ জানান:

  • অ্যালিস কোখকে রাইখ ফ্লাইট ট্যাক্স নামে একটি বৈষম্যমূলক কর দিতে বাধ্য করা হয়
  • কর দিতে গিয়ে তাকে গুয়েলফ ট্রেজার বিক্রি করতে হয়
  • কর ছিল ১.২ মিলিয়ন রাইখমার্কস, যা আজকের মূল্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার
  • কর দেওয়ার চার মাস পর কোখ পালিয়ে যান সুইজারল্যান্ডে

জার্মানিতে দাবি খারিজএরপর যুক্তরাষ্ট্রে মামলা

  • ২০১৪ সালে জার্মানির উপদেষ্টা কমিশন উত্তরসূরিদের দাবি খারিজ করে দেয়
  • যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করা হলে, ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয়, কারণ তারা এ বিষয়ে বিচার করতে পারে না বলে জানায়

নতুন দলিল ও পুনরায় দাবি

  • ১৯২৯ সালে কিছু ব্যবসায়ী মুনাফার জন্য ট্রেজারটি কিনেছিলেন
  • ১৯৩৫ সালে প্রুশিয়া রাজ্য (নাৎসি নেতার অধীনে) এর বড় অংশ কিনে নেয়

২০২২ সালে রসবাখ নতুন নথিপত্রসহ আবার যোগাযোগ করেন ফাউন্ডেশনের সঙ্গে

  • আলোচনা না হওয়ায়, ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কোখ পরিবারের পক্ষ থেকে পুনরায় দাবি করা হয়
  • একই সময়ে অন্য উত্তরসূরিরাও দাবি তোলেন

শুনানি নিয়ে জটিলতা ও সরকারি হস্তক্ষেপ

  • ফাউন্ডেশন শুরুতে দাবিদারদের শনাক্ত করতে সময় নিচ্ছিল
  • উত্তরসূরিরা অভিযোগ করেন, ফাউন্ডেশন ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করছে
  • জার্মান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চাপের মুখে অবশেষে শুনানিতে রাজি হয় উপদেষ্টা কমিশন

ফাউন্ডেশন প্রেসিডেন্ট হারমান পার্জিংগার বলেন:
“নতুন প্রমাণ পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করেছে। তাই সাবধানে এগোতে হবে।”

বিদায় নিচ্ছে পুরনো কমিশনআসছে নতুন ট্রাইব্যুনাল

  • এটি হতে পারে বর্তমান উপদেষ্টা কমিশনের শেষ মামলাগুলোর একটি
  • জার্মান সরকার ও ১৬টি প্রদেশ নতুন বাধ্যতামূলক সালিশি ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে
  • নতুন ব্যবস্থায়, একতরফাভাবে মামলা করা যাবে—দুই পক্ষের সম্মতির প্রয়োজন হবে না

উত্তরসূরিরা অভিযোগ করেছেন,
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে কমিশনে মামলা পাঠাতে রাজি হতো না—এটি ন্যায়বিচারে বাধা সৃষ্টি করত

আরেক পক্ষের সম্ভাব্য দাবি

এই মামলায় আরও একটি পক্ষ যুক্ত হতে পারে—হারমান নেটারের পরিবার

  • নেটার ছিলেন এক জুয়েলার, যিনি গুয়েলফ ট্রেজারের ২৫ শতাংশের মালিক
  • এখনো তারা আনুষ্ঠানিক দাবি করেননি, তবে আলোচনায় রয়েছেন

উপসংহার: নতুন বিচারব্যবস্থার সূচনা

গুয়েলফ ট্রেজার মামলাটি শুধু একটি মূল্যবান ঐতিহাসিক সংগ্রহের মালিকানা নিয়ে নয়—
এটি নাৎসি আমলে লুট হওয়া সম্পদের সঠিক বিচারপ্রক্রিয়ার প্রশ্নও সামনে এনেছে।

নতুন ট্রাইব্যুনাল কবে থেকে কাজ শুরু করবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তবে এটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থা নিয়ে আসবে বলে আশা করা যায়।

আমেরিকার দরিদ্রদের জন্য উচ্চশিক্ষা কীভাবে ব্যর্থ হলো

গুয়েলফ ট্রেজার: ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বিরল সংগ্রহ নিয়ে মালিকানা বিতর্ক

১০:০০:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

জার্মানির বার্লিনে অবস্থিত মিউজিয়াম অব অ্যাপ্লায়েড আর্টসে রাখা গুয়েলফ ট্রেজার হলো মধ্যযুগের গির্জার বিভিন্ন মূল্যবান ধর্মীয় শিল্পকর্মের সংগ্রহ।
এতে রয়েছে:

  • সোনা, রূপা ও তামার তৈরি ক্রুশ ও রেলিক
  • তুষারভালুকের দাঁতের তৈরি মূর্তি

এই সংগ্রহের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার

বিতর্কের সূচনা: নাৎসি আমলের বিক্রয়

২০০৮ সালে চারজন ইহুদি শিল্প ব্যবসায়ীর উত্তরসূরিরা দাবি করেন,
১৯৩৫ সালে নাৎসিদের চাপের মুখে জোর করে এই ট্রেজার বিক্রি করা হয়।
একাধিক নতুন জার্মান নথিতে এই দাবির পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়।

সম্প্রতি, অ্যালিস কোখ নামের এক ব্যবসায়ীর পরিবারও এই দলে যুক্ত হয়েছে, যিনি এর আগে বিবেচনায় আসেননি।

অ্যালিস কোখ ও বৈষম্যমূলক কর

আইনজীবী জর্গ রসবাখ জানান:

  • অ্যালিস কোখকে রাইখ ফ্লাইট ট্যাক্স নামে একটি বৈষম্যমূলক কর দিতে বাধ্য করা হয়
  • কর দিতে গিয়ে তাকে গুয়েলফ ট্রেজার বিক্রি করতে হয়
  • কর ছিল ১.২ মিলিয়ন রাইখমার্কস, যা আজকের মূল্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার
  • কর দেওয়ার চার মাস পর কোখ পালিয়ে যান সুইজারল্যান্ডে

জার্মানিতে দাবি খারিজএরপর যুক্তরাষ্ট্রে মামলা

  • ২০১৪ সালে জার্মানির উপদেষ্টা কমিশন উত্তরসূরিদের দাবি খারিজ করে দেয়
  • যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করা হলে, ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয়, কারণ তারা এ বিষয়ে বিচার করতে পারে না বলে জানায়

নতুন দলিল ও পুনরায় দাবি

  • ১৯২৯ সালে কিছু ব্যবসায়ী মুনাফার জন্য ট্রেজারটি কিনেছিলেন
  • ১৯৩৫ সালে প্রুশিয়া রাজ্য (নাৎসি নেতার অধীনে) এর বড় অংশ কিনে নেয়

২০২২ সালে রসবাখ নতুন নথিপত্রসহ আবার যোগাযোগ করেন ফাউন্ডেশনের সঙ্গে

  • আলোচনা না হওয়ায়, ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কোখ পরিবারের পক্ষ থেকে পুনরায় দাবি করা হয়
  • একই সময়ে অন্য উত্তরসূরিরাও দাবি তোলেন

শুনানি নিয়ে জটিলতা ও সরকারি হস্তক্ষেপ

  • ফাউন্ডেশন শুরুতে দাবিদারদের শনাক্ত করতে সময় নিচ্ছিল
  • উত্তরসূরিরা অভিযোগ করেন, ফাউন্ডেশন ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করছে
  • জার্মান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চাপের মুখে অবশেষে শুনানিতে রাজি হয় উপদেষ্টা কমিশন

ফাউন্ডেশন প্রেসিডেন্ট হারমান পার্জিংগার বলেন:
“নতুন প্রমাণ পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করেছে। তাই সাবধানে এগোতে হবে।”

বিদায় নিচ্ছে পুরনো কমিশনআসছে নতুন ট্রাইব্যুনাল

  • এটি হতে পারে বর্তমান উপদেষ্টা কমিশনের শেষ মামলাগুলোর একটি
  • জার্মান সরকার ও ১৬টি প্রদেশ নতুন বাধ্যতামূলক সালিশি ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে
  • নতুন ব্যবস্থায়, একতরফাভাবে মামলা করা যাবে—দুই পক্ষের সম্মতির প্রয়োজন হবে না

উত্তরসূরিরা অভিযোগ করেছেন,
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে কমিশনে মামলা পাঠাতে রাজি হতো না—এটি ন্যায়বিচারে বাধা সৃষ্টি করত

আরেক পক্ষের সম্ভাব্য দাবি

এই মামলায় আরও একটি পক্ষ যুক্ত হতে পারে—হারমান নেটারের পরিবার

  • নেটার ছিলেন এক জুয়েলার, যিনি গুয়েলফ ট্রেজারের ২৫ শতাংশের মালিক
  • এখনো তারা আনুষ্ঠানিক দাবি করেননি, তবে আলোচনায় রয়েছেন

উপসংহার: নতুন বিচারব্যবস্থার সূচনা

গুয়েলফ ট্রেজার মামলাটি শুধু একটি মূল্যবান ঐতিহাসিক সংগ্রহের মালিকানা নিয়ে নয়—
এটি নাৎসি আমলে লুট হওয়া সম্পদের সঠিক বিচারপ্রক্রিয়ার প্রশ্নও সামনে এনেছে।

নতুন ট্রাইব্যুনাল কবে থেকে কাজ শুরু করবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তবে এটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থা নিয়ে আসবে বলে আশা করা যায়।