০৭:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন: হাফিজ ভারতের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে, বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে ঘাঁটি হিসেবে: গোয়েন্দা সূত্র এমিরেটস গাজার পুনর্নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তবে রাজনৈতিক স্পষ্টতা প্রয়োজন ৫০ বছরের একতা উদযাপন: উন্নতির পথে অঙ্গোলা দিল্লি বিস্ফোরণ: ফারিদাবাদে উদ্ধার ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরকসামগ্রীর সঙ্গে কি কোনো যোগ আছে? বিহার বিধানসভা নির্বাচনের এক্সিট পোল ২০২৫: এনডিএর পক্ষে জোরালো পূর্বাভাস, তেজস্বীর মহাজোটবন্ধনের সামনে বড় ধাক্কা ভালো মানুষ: মোহাম্মদ রিজওয়ানের নেতৃত্ব হারানো নিয়ে মুখ খুললেন শাহীন আফ্রিদি ঐকমত্যের বাইরে সংস্কার চাপিয়ে দিলে দায় নিতে হবে সরকারকেই: ফখরুল নিরাপদ পৃথিবীর বার্তা: বাংলাদেশে উদ্‌যাপিত হলো ‘ওয়ান হেলথ ডে ২০২৫’ বিকাশের উদ্ভাবনী ভূমিকার স্বীকৃতি: বাংলাদেশ ফিনটেক অ্যাওয়ার্ড ২০২৫-এ চারটি সম্মাননা অর্জন ফি অ্যান্ড এন-এর নতুন প্রধানের দৃষ্টিভঙ্গি: বৈশ্বিক অভিজ্ঞতায় নেতৃত্বের নতুন অনুপ্রেরণা

ঈদে বাড়ি ফিরছে মানুষ, কী অবস্থা সড়কের?

  • Sarakhon Report
  • ০৩:০৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
  • 99

পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জ প্রান্তে অনেক মানুষ মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছেন

শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। শেকড়ের টানে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর রেলস্টেশন, বাস টার্মিনালগুলোতে ছিল মানুষের ভিড়। তবে এবার ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছেন তারা।

ঢাকা ও ‌এর আশেপাশের যেসব স্থানে ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি যানজট দেখা যায়, তার মাঝে অন্যতম হলো‒ গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাট। এর বাইরে রয়েছে ঢাকার অদূরে অবস্থিত গার্মেন্টস অধ্যুষিত এলাকা সাভার।

এসব এলাকার স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় সাংবাদিক এবং যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর তুলনামূলকভাবে সড়কে যানজট কম।

কারণ হিসাবে তারা বলছেন, এবার ঈদে একসাথে টানা নয়দিন ছুটি পড়ায় মানুষ একসাথে না গিয়ে ধাপে ধাপে ঢাকা ছাড়ছেন। সেকারণে সড়কে যাত্রীদের চাপ অনেকটাই কম।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার শুরুতে ২৯শে মার্চ থেকে পাঁচ দিন টানা ছুটি ঘোষণা করেছিলো।

এরপর নির্বাহী আদেশে তেসরা এপ্রিলও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আজ শুক্রবার যেহেতু সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তাই আজ থেকে শুরু করে আগামী পাঁচই এপ্রিল পর্যন্ত টানা নয় দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে বেসরকারি চাকরিজীবীদের হিসাব এখানে আলাদা।

পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় গাড়ির দীর্ঘ লাইন

পোশাক শ্রমিকদের ঈদযাত্রা কাল

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা আছে এবং এগুলোর একটি বড় অংশের অবস্থান সাভারে। এসব কারখানায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন।

সাভারের স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকায় কিছু কিছু গার্মেন্টস ছুটি হয়েছে। তাই পর্যায়ক্রমে তারা নিজ নিজ জেলায় যচ্ছেন।

কিন্তু “আগামীকাল সব কারখানা ছুটি হবে। তাই কাল থেকে পোশাক শ্রমিকদের বড় অংশ ঘরমুখো হতে পারেন,” বলে ধারণা করছেন স্থানীয় সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস।

আজকের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণত সাভারের বাইপাইল ও নবীনগরে যানজট থাকে। আজ শুক্রবার সকালে ওই অঞ্চলে যানবাহনের ধীরগতি ছিল।

টিকেট কাটছেন ঘরমুখো মানুষ, স্থান – নারায়ণগঞ্জ

ওই সাংবাদিকের মতে, “অন্যবারের চেয়ে যানজট কম। এর কারণ আগে রাস্তায় কাজ চলতো, এবার তা হচ্ছে না। আর গার্মেন্টসগুলো পর্যায়ক্রমে ছুটি দিচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশও সক্রিয়।”

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহীনুর কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, এবার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি অনেক ভলান্টিয়ারও কাজ করছে। তাই ঈদের এই সময়টায় যানবাহনের চাপ সামলানোটা অন্য বছরের চেয়ে কিছুটা সহজ হচ্ছে।

তিনিউল্লেখ করেন, সাভারের বাইপাইলের যানজট সামলানো বরাবরই চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু এ বছর ছুটি বেশি থাকায় ও সড়কের কাজ কম হওয়ায় চাপটা আগের চেয়ে কম।

সদরঘাট ও রেলস্টেশনের কী অবস্থা

পদ্মা সেতু চালু না হওয়া পর্যন্ত ঈদের সময় ঢাকার সদরঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের চাপে তিল পরিমাণ জায়গা পাওয়া যেত না।

কিন্তু পদ্মা সেতুর কারণে বিগত কয়েক বছর ধরেই মানুষের লঞ্চ নির্ভরতা কমে গেছে। দ্রুত সময়ে বাড়ি ফেরার জন্য অনেকেই এখন লঞ্চের পরিবর্তে সড়কপথই বেছে নিয়েছেন।

এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সদরঘাটের পরিবহন পরিদর্শক মো. জহিরুল ইসলাম শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিবিসিকে বলেন, “৫০টার মতো লঞ্চ এখানে, কিন্তু যাত্রী নাই।”

তিনি জানান, এখন তারাই লঞ্চে করে বাড়ি ফিরছেন, যারা “লঞ্চে গিয়ে অভ্যস্ত”।

আগে ঈদের সময় ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এরকম ভিড় হতো (ছবিটি ২০২০ সালের)

যাত্রীদের ভিড় এত কম কেন? জানতে চাইলে তিনিও পদ্মা সেতুর কথাউল্লেখ করেন।

পাশাপাশি তিনি এও বলেন, সদরঘাট পর্যন্ত আসতেই অনেক লম্বা সময় লাগে। “যেহেতু এখন সড়ক পথে যাত্রার বিকল্প উপায় আছে, তাই মানুষ এই ট্রাফিকের ঝামেলা নিতে চায় না। বাসেই চলে যায়।”

দক্ষিণাঞ্চল ছাড়া দেশের অন্য প্রায় সব অঞ্চলের যোগাযোগের মাধ্যম হয় বাস, নয়তো ট্রেন।

আজ সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। তবে ট্রেন নির্ধারিত সময়ে প্ল্যাটফর্মে আসায় ও ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি কম।

পদ্মাসেতু চালুর আগে ঈদের সময়ে সদরঘাটের স্বাভাবিক চিত্র ছিল এমন (ছবিটি ২০২০ সালের)

মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের চিত্র

সড়কপথে ঢাকা ছাড়তে হলে প্রায় সকলেরই মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর অতিক্রম করতে হয়। তাই, ঈদের সময়ে এসব এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায় সাধারণত।

দক্ষিণবঙ্গের যারা সড়ক পথে যেতে চান, তাদেরকে মুন্সিগঞ্জের ওপর দিয়ে যেতে হয়। জানা গেছে, পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জ প্রান্তের টোল প্লাজায় শুক্রবার ভোর থেকে যানবাহনের উপচে পড়া ভিড়।

স্থানীয় সাংবাদিক সুমিত সরকার ওই এলাকা থেকে ঘুরে এসে দুপুরে বিবিসিকে বলেন, “ভোর থেকে ওখানে হাজার হাজার যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল।”

বাড়ি ফেরার জন্য যারা টিকেট জোগাড় করতে পারেননি, তারাই মূলত মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “যাত্রীরা বলছেন যে অনলাইনে তারা টিকেট কাটতে পারেননি। আর কাউন্টারে গিয়ে অনেকে দেখেছেন কয়েকগুণ বেশি ভাড়া।”

“এসব কারণে এবং যানজট এড়িয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্যই তারা মোটরসাইকেলে যাচ্ছেন।”

গাজীপুরে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন

ওই সাংবাদিক জানান, এই রুটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ এবং এরপর অনেকেই টিকেটের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন।

পুলিশ পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ধলেশ্বরী থেকে মাওয়া, এর মাঝে আটটি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ যাত্রীদেরকে বলেছে, বাইক যেন স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে চলে এবং বাইকে যেন দুইজনের বেশি না চড়ে।

মুন্সীগঞ্জের হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জিলানী বিবিসিকে বলেন, গত দু’দিন ধরে মোটরসাইকেলের জন্য পদ্মা সেতুতে আলাদা লেন করা হয়েছে। তাই, মোটরসাইকেল সামলাতে খুব বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না।

“এখানে যানবাহনের চাপ আছে, কিন্তু যানজট নেই” জানিয়ে তিনি বলেন, “রাস্তাঘাট সুন্দর। কোথাও বাধা পড়ে না। তাই যানবাহনগুলো যেতে পারছে।”

গাজীপুরে অনেকেই পণ্যবাহী যানবাহনে করে বাড়ি ফিরছেন

গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে আহামরি কোনও যানজট বা ভীড় নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা।

স্থানীয় সাংবাদিক আরিফ খান আবির বিবিসিকে বলেন, সংযোগ সড়কগুলোতে অটোরিকশার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু মহাসড়কে তেমন কোনো যানজট নেই। তবে ধীরগতি রয়েছে।

এবারও ঈদের সময় গণপরিবহনে বেশি ভাড়া হওয়ায় অনেকে তীব্র রোদ উপেক্ষা করে পণ্যবাহী যানবাহনে করেও বাড়ি ফিরছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকের সাথে কথা বলেও জানা গেছে, এবার যানজট কম। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের আশঙ্কা থাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াহিদ মোরশেদও বিবিসিকে বলেন, তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, এ বছর এখন পর্যন্ত খুব একটা যানজট দেখা যাচ্ছে না।

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন: হাফিজ ভারতের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে, বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে ঘাঁটি হিসেবে: গোয়েন্দা সূত্র

ঈদে বাড়ি ফিরছে মানুষ, কী অবস্থা সড়কের?

০৩:০৩:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। শেকড়ের টানে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর রেলস্টেশন, বাস টার্মিনালগুলোতে ছিল মানুষের ভিড়। তবে এবার ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছেন তারা।

ঢাকা ও ‌এর আশেপাশের যেসব স্থানে ঈদের সময় সবচেয়ে বেশি যানজট দেখা যায়, তার মাঝে অন্যতম হলো‒ গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাট। এর বাইরে রয়েছে ঢাকার অদূরে অবস্থিত গার্মেন্টস অধ্যুষিত এলাকা সাভার।

এসব এলাকার স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় সাংবাদিক এবং যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর তুলনামূলকভাবে সড়কে যানজট কম।

কারণ হিসাবে তারা বলছেন, এবার ঈদে একসাথে টানা নয়দিন ছুটি পড়ায় মানুষ একসাথে না গিয়ে ধাপে ধাপে ঢাকা ছাড়ছেন। সেকারণে সড়কে যাত্রীদের চাপ অনেকটাই কম।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার শুরুতে ২৯শে মার্চ থেকে পাঁচ দিন টানা ছুটি ঘোষণা করেছিলো।

এরপর নির্বাহী আদেশে তেসরা এপ্রিলও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আজ শুক্রবার যেহেতু সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তাই আজ থেকে শুরু করে আগামী পাঁচই এপ্রিল পর্যন্ত টানা নয় দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে বেসরকারি চাকরিজীবীদের হিসাব এখানে আলাদা।

পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় গাড়ির দীর্ঘ লাইন

পোশাক শ্রমিকদের ঈদযাত্রা কাল

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা আছে এবং এগুলোর একটি বড় অংশের অবস্থান সাভারে। এসব কারখানায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন।

সাভারের স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই এলাকায় কিছু কিছু গার্মেন্টস ছুটি হয়েছে। তাই পর্যায়ক্রমে তারা নিজ নিজ জেলায় যচ্ছেন।

কিন্তু “আগামীকাল সব কারখানা ছুটি হবে। তাই কাল থেকে পোশাক শ্রমিকদের বড় অংশ ঘরমুখো হতে পারেন,” বলে ধারণা করছেন স্থানীয় সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস।

আজকের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণত সাভারের বাইপাইল ও নবীনগরে যানজট থাকে। আজ শুক্রবার সকালে ওই অঞ্চলে যানবাহনের ধীরগতি ছিল।

টিকেট কাটছেন ঘরমুখো মানুষ, স্থান – নারায়ণগঞ্জ

ওই সাংবাদিকের মতে, “অন্যবারের চেয়ে যানজট কম। এর কারণ আগে রাস্তায় কাজ চলতো, এবার তা হচ্ছে না। আর গার্মেন্টসগুলো পর্যায়ক্রমে ছুটি দিচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশও সক্রিয়।”

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহীনুর কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, এবার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি অনেক ভলান্টিয়ারও কাজ করছে। তাই ঈদের এই সময়টায় যানবাহনের চাপ সামলানোটা অন্য বছরের চেয়ে কিছুটা সহজ হচ্ছে।

তিনিউল্লেখ করেন, সাভারের বাইপাইলের যানজট সামলানো বরাবরই চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু এ বছর ছুটি বেশি থাকায় ও সড়কের কাজ কম হওয়ায় চাপটা আগের চেয়ে কম।

সদরঘাট ও রেলস্টেশনের কী অবস্থা

পদ্মা সেতু চালু না হওয়া পর্যন্ত ঈদের সময় ঢাকার সদরঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের চাপে তিল পরিমাণ জায়গা পাওয়া যেত না।

কিন্তু পদ্মা সেতুর কারণে বিগত কয়েক বছর ধরেই মানুষের লঞ্চ নির্ভরতা কমে গেছে। দ্রুত সময়ে বাড়ি ফেরার জন্য অনেকেই এখন লঞ্চের পরিবর্তে সড়কপথই বেছে নিয়েছেন।

এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সদরঘাটের পরিবহন পরিদর্শক মো. জহিরুল ইসলাম শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিবিসিকে বলেন, “৫০টার মতো লঞ্চ এখানে, কিন্তু যাত্রী নাই।”

তিনি জানান, এখন তারাই লঞ্চে করে বাড়ি ফিরছেন, যারা “লঞ্চে গিয়ে অভ্যস্ত”।

আগে ঈদের সময় ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এরকম ভিড় হতো (ছবিটি ২০২০ সালের)

যাত্রীদের ভিড় এত কম কেন? জানতে চাইলে তিনিও পদ্মা সেতুর কথাউল্লেখ করেন।

পাশাপাশি তিনি এও বলেন, সদরঘাট পর্যন্ত আসতেই অনেক লম্বা সময় লাগে। “যেহেতু এখন সড়ক পথে যাত্রার বিকল্প উপায় আছে, তাই মানুষ এই ট্রাফিকের ঝামেলা নিতে চায় না। বাসেই চলে যায়।”

দক্ষিণাঞ্চল ছাড়া দেশের অন্য প্রায় সব অঞ্চলের যোগাযোগের মাধ্যম হয় বাস, নয়তো ট্রেন।

আজ সকাল থেকেই কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। তবে ট্রেন নির্ধারিত সময়ে প্ল্যাটফর্মে আসায় ও ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি কম।

পদ্মাসেতু চালুর আগে ঈদের সময়ে সদরঘাটের স্বাভাবিক চিত্র ছিল এমন (ছবিটি ২০২০ সালের)

মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরের চিত্র

সড়কপথে ঢাকা ছাড়তে হলে প্রায় সকলেরই মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর অতিক্রম করতে হয়। তাই, ঈদের সময়ে এসব এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায় সাধারণত।

দক্ষিণবঙ্গের যারা সড়ক পথে যেতে চান, তাদেরকে মুন্সিগঞ্জের ওপর দিয়ে যেতে হয়। জানা গেছে, পদ্মা সেতুর মুন্সিগঞ্জ প্রান্তের টোল প্লাজায় শুক্রবার ভোর থেকে যানবাহনের উপচে পড়া ভিড়।

স্থানীয় সাংবাদিক সুমিত সরকার ওই এলাকা থেকে ঘুরে এসে দুপুরে বিবিসিকে বলেন, “ভোর থেকে ওখানে হাজার হাজার যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল।”

বাড়ি ফেরার জন্য যারা টিকেট জোগাড় করতে পারেননি, তারাই মূলত মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “যাত্রীরা বলছেন যে অনলাইনে তারা টিকেট কাটতে পারেননি। আর কাউন্টারে গিয়ে অনেকে দেখেছেন কয়েকগুণ বেশি ভাড়া।”

“এসব কারণে এবং যানজট এড়িয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্যই তারা মোটরসাইকেলে যাচ্ছেন।”

গাজীপুরে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন

ওই সাংবাদিক জানান, এই রুটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ এবং এরপর অনেকেই টিকেটের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন।

পুলিশ পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ধলেশ্বরী থেকে মাওয়া, এর মাঝে আটটি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ যাত্রীদেরকে বলেছে, বাইক যেন স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতিতে চলে এবং বাইকে যেন দুইজনের বেশি না চড়ে।

মুন্সীগঞ্জের হাসাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জিলানী বিবিসিকে বলেন, গত দু’দিন ধরে মোটরসাইকেলের জন্য পদ্মা সেতুতে আলাদা লেন করা হয়েছে। তাই, মোটরসাইকেল সামলাতে খুব বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না।

“এখানে যানবাহনের চাপ আছে, কিন্তু যানজট নেই” জানিয়ে তিনি বলেন, “রাস্তাঘাট সুন্দর। কোথাও বাধা পড়ে না। তাই যানবাহনগুলো যেতে পারছে।”

গাজীপুরে অনেকেই পণ্যবাহী যানবাহনে করে বাড়ি ফিরছেন

গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীদের ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে আহামরি কোনও যানজট বা ভীড় নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা।

স্থানীয় সাংবাদিক আরিফ খান আবির বিবিসিকে বলেন, সংযোগ সড়কগুলোতে অটোরিকশার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু মহাসড়কে তেমন কোনো যানজট নেই। তবে ধীরগতি রয়েছে।

এবারও ঈদের সময় গণপরিবহনে বেশি ভাড়া হওয়ায় অনেকে তীব্র রোদ উপেক্ষা করে পণ্যবাহী যানবাহনে করেও বাড়ি ফিরছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকের সাথে কথা বলেও জানা গেছে, এবার যানজট কম। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের আশঙ্কা থাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী ওয়াহিদ মোরশেদও বিবিসিকে বলেন, তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, এ বছর এখন পর্যন্ত খুব একটা যানজট দেখা যাচ্ছে না।

বিবিসি নিউজ বাংলা