০৭:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫
তীব্র শীতে নাটোরে রেললাইন ফাটল ৪৬ হাজারের বেশি নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের উদ্বেগজনক চিত্র দেশে এখন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে: রিট খারিজ করল হাইকোর্ট এক ব্যক্তি এক ভোট: উপমহাদেশে সর্বজনীন ভোটাধিকারের সংগ্রামী ইতিহাস বেগম জিয়ার বিদেশযাত্রা কি আর ভাবছে না বিএনপি ও পরিবার? ছাত্রদল কি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে? ফেমি ওটেডোলার শক্তি বিপ্লব: নাইজেরিয়ার বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করতে জ্বালানি সম্রাটের নতুন দৌড় দক্ষিণ কোরিয়ার রিয়েলিটি শো দখলে নেটফ্লিক্স–ডিজনি প্লাস এর দৌড় শুরু গাজীপুর-১ বিএনপি মনোনয়ন নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১০ শরীরে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে পিনাট বাটার কি সত্যিই কার্যকর? বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা ও উপকারিতা

ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলেদের ভবিষ্যৎ বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি

  • Sarakhon Report
  • ০৫:০০:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫
  • 85

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ক্যানসারে আক্রান্ত অনেক শিশু কঠিন চিকিৎসা পদ্ধতির মুখোমুখি হয়, যেখানে দীর্ঘস্থায়ী কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষ করে যেসব ছেলের ক্যানসার কিশোর বয়সের আগেই শনাক্ত হয়, তারা তখনো শুক্রাণু সংরক্ষণ করার সুযোগ পায় না। ফলে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানীরা টেস্টিকুলার স্টেম সেল জমিয়ে রাখার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

প্রথম মানবদেহে স্পার্ম-উৎপাদনকারী স্টেম সেল প্রতিস্থাপন

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ মেডিকেল সেন্টারের বিজ্ঞানীরা ২০১১ সাল থেকে ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলেদের টেস্টিকুলার টিস্যু সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করছেন। সম্প্রতি, এক তরুণ—যার বয়স ছিল ১১ বছর যখন তার হাড়ে ক্যানসার ধরা পড়ে—তার দেহে সংরক্ষিত ওই টিস্যু পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ছোটবেলার কেমোথেরাপি তাকে সুস্থ করলেও ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের ক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা ছিল। তাই বাবা-মা এই সংরক্ষণ কর্মসূচিতে রাজি হয়ে টেস্টিকুলার টিস্যু জমা রেখেছিলেন।

গুরুত্ব ও প্রত্যাশা

বর্তমানে শিশুদের মধ্যে ক্যানসারে বেঁচে থাকার হার প্রায় ৮৫ শতাংশ। তবে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রোগী ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের মুখে পড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক ক্যানসার রোগীরা কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন শুরুর আগে শুক্রাণু, ডিম্বাণু বা ভ্রূণ সংরক্ষণ করতে পারেন। কিন্তু যারা কিশোর বয়স পেরোয়নি, তাদের জন্য এই সুযোগ থাকে না। সেই কারণেই পিউবার্টির আগে সংগ্রহ করা টেস্টিকুলার টিস্যু ও তার মধ্যে থাকা স্টেম সেল ভবিষ্যতে দেহে প্রতিস্থাপন করে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

গবেষণার পদ্ধতি

টেস্টিকুলার টিস্যুর মধ্যে স্পার্ম উৎপাদনকারী স্টেম সেল অবস্থান করে। পিউবার্টির আগে এগুলো সক্রিয় না থাকলেও, বয়ঃসন্ধি শুরু হলে শুক্রাণু তৈরি করতে শুরু করে। গবেষকরা প্রথমে ক্ষুদ্র পরিমাণ টেস্টিকুলার টিস্যু সংগ্রহ করে তা হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করেন। পরে প্রয়োজন হলে সেখান থেকে স্টেম সেল আলাদা করে দেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয়। বর্তমানে পদ্ধতিটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকায় নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, কবে বা ঠিক কীভাবে পর্যাপ্ত শুক্রাণু উৎপাদন সম্ভব হবে। তবে এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী সফলতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ইতিপূর্বে বানরের ওপর করা পরীক্ষায় সংরক্ষিত টেস্টিকুলার টিস্যু থেকে জন্ম নেওয়া সুস্থ সন্তানের নজির পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বেলজিয়ামে অন্য একদল গবেষক সম্প্রতি পুরো টেস্টিকুলার টিস্যু প্রতিস্থাপন করেছেন। তারা আশা করছেন, এ ধরনের পরীক্ষামূলক গবেষণার সাফল্য ভবিষ্যতে ক্যানসারজয়ী শিশুদের বাবা-মা হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, মেয়েদের ক্ষেত্রেও অনুরূপ পদ্ধতিতে ওভারিয়ান টিস্যু সংরক্ষণ ও পরে দেহে প্রতিস্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

গবেষণায় অংশ নেওয়া তরুণ জানিয়েছেন, তিনি পুরো বিষয়টিকে অপেক্ষার একটি ধাপ হিসেবে দেখছেন। যদি এই পদ্ধতি সফল হয়, তবে অন্য অনেকের মতো তিনিও ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের সুযোগ পেতে পারেন। আর যদি সফল না-ও হয়, তবু বিজ্ঞান এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে।

উপসংহার

ক্যানসারজয়ী শিশুদের ভবিষ্যতের সন্তান ধারণের সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য টেস্টিকুলার স্টেম সেল প্রতিস্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক উদ্যোগ। যদিও পদ্ধতিটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে, পশু পরীক্ষায় পাওয়া সাফল্য অনেককে আশাবাদী করে তুলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে যদি এ পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবে ক্যানসার জয় করা অসংখ্য শিশুর কাছে সুস্থ ও পূর্ণাঙ্গ জীবনের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

তীব্র শীতে নাটোরে রেললাইন ফাটল

ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলেদের ভবিষ্যৎ বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি

০৫:০০:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ক্যানসারে আক্রান্ত অনেক শিশু কঠিন চিকিৎসা পদ্ধতির মুখোমুখি হয়, যেখানে দীর্ঘস্থায়ী কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষ করে যেসব ছেলের ক্যানসার কিশোর বয়সের আগেই শনাক্ত হয়, তারা তখনো শুক্রাণু সংরক্ষণ করার সুযোগ পায় না। ফলে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানীরা টেস্টিকুলার স্টেম সেল জমিয়ে রাখার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

প্রথম মানবদেহে স্পার্ম-উৎপাদনকারী স্টেম সেল প্রতিস্থাপন

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গ মেডিকেল সেন্টারের বিজ্ঞানীরা ২০১১ সাল থেকে ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলেদের টেস্টিকুলার টিস্যু সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করছেন। সম্প্রতি, এক তরুণ—যার বয়স ছিল ১১ বছর যখন তার হাড়ে ক্যানসার ধরা পড়ে—তার দেহে সংরক্ষিত ওই টিস্যু পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ছোটবেলার কেমোথেরাপি তাকে সুস্থ করলেও ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের ক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা ছিল। তাই বাবা-মা এই সংরক্ষণ কর্মসূচিতে রাজি হয়ে টেস্টিকুলার টিস্যু জমা রেখেছিলেন।

গুরুত্ব ও প্রত্যাশা

বর্তমানে শিশুদের মধ্যে ক্যানসারে বেঁচে থাকার হার প্রায় ৮৫ শতাংশ। তবে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রোগী ভবিষ্যতে বন্ধ্যাত্বের মুখে পড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক ক্যানসার রোগীরা কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন শুরুর আগে শুক্রাণু, ডিম্বাণু বা ভ্রূণ সংরক্ষণ করতে পারেন। কিন্তু যারা কিশোর বয়স পেরোয়নি, তাদের জন্য এই সুযোগ থাকে না। সেই কারণেই পিউবার্টির আগে সংগ্রহ করা টেস্টিকুলার টিস্যু ও তার মধ্যে থাকা স্টেম সেল ভবিষ্যতে দেহে প্রতিস্থাপন করে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

গবেষণার পদ্ধতি

টেস্টিকুলার টিস্যুর মধ্যে স্পার্ম উৎপাদনকারী স্টেম সেল অবস্থান করে। পিউবার্টির আগে এগুলো সক্রিয় না থাকলেও, বয়ঃসন্ধি শুরু হলে শুক্রাণু তৈরি করতে শুরু করে। গবেষকরা প্রথমে ক্ষুদ্র পরিমাণ টেস্টিকুলার টিস্যু সংগ্রহ করে তা হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করেন। পরে প্রয়োজন হলে সেখান থেকে স্টেম সেল আলাদা করে দেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয়। বর্তমানে পদ্ধতিটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকায় নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, কবে বা ঠিক কীভাবে পর্যাপ্ত শুক্রাণু উৎপাদন সম্ভব হবে। তবে এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী সফলতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ইতিপূর্বে বানরের ওপর করা পরীক্ষায় সংরক্ষিত টেস্টিকুলার টিস্যু থেকে জন্ম নেওয়া সুস্থ সন্তানের নজির পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বেলজিয়ামে অন্য একদল গবেষক সম্প্রতি পুরো টেস্টিকুলার টিস্যু প্রতিস্থাপন করেছেন। তারা আশা করছেন, এ ধরনের পরীক্ষামূলক গবেষণার সাফল্য ভবিষ্যতে ক্যানসারজয়ী শিশুদের বাবা-মা হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, মেয়েদের ক্ষেত্রেও অনুরূপ পদ্ধতিতে ওভারিয়ান টিস্যু সংরক্ষণ ও পরে দেহে প্রতিস্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

গবেষণায় অংশ নেওয়া তরুণ জানিয়েছেন, তিনি পুরো বিষয়টিকে অপেক্ষার একটি ধাপ হিসেবে দেখছেন। যদি এই পদ্ধতি সফল হয়, তবে অন্য অনেকের মতো তিনিও ভবিষ্যতে সন্তান ধারণের সুযোগ পেতে পারেন। আর যদি সফল না-ও হয়, তবু বিজ্ঞান এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে।

উপসংহার

ক্যানসারজয়ী শিশুদের ভবিষ্যতের সন্তান ধারণের সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য টেস্টিকুলার স্টেম সেল প্রতিস্থাপন একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক উদ্যোগ। যদিও পদ্ধতিটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে, পশু পরীক্ষায় পাওয়া সাফল্য অনেককে আশাবাদী করে তুলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে যদি এ পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবে ক্যানসার জয় করা অসংখ্য শিশুর কাছে সুস্থ ও পূর্ণাঙ্গ জীবনের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।