সারাক্ষণ রিপোর্ট
ভূমিকা
সিঙ্গাপুরে সামাজিক সম্প্রীতি ও কঠোর আইনগত পরিবেশের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সিঙ্গাপুরেরই এক নাগরিক। অভিযোগ উঠেছে, তিনি বাংলাদেশি নাগরিক আমির হামজাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে স্থানীয় অভিবাসী কর্মীদের জন্য ধর্মীয় উপদেশের আয়োজন করেন। আমির হামজা তাঁর দেশে আল-কায়েদা-সমর্থিত একটি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।

মামলার সারসংক্ষেপ
- অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম: আব্দুস সাত্তার (বয়স ৫১)
- প্রধান অভিযোগসমূহ:
- সিঙ্গাপুরে বৈধ কর্মী পাস ছাড়া বিদেশি বক্তাকে (আমির হামজা) দিয়ে ধর্মীয় বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দেওয়া
- পুলিশের অনুমতি ছাড়া জনসমাবেশ আয়োজন
- বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স না থাকা
- ডরমিটরি অপারেটর প্রতিষ্ঠানের নাম: “এসবিএম ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড অটোমেশন”
- তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে, কারণ ডরমিটরিতে যারা বাসিন্দা নন, এমন বহিরাগতদের প্রবেশ ও বের হওয়ার তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি
ঘটনার পটভূমি
- সময় ও স্থান: ৯ আগস্ট ২০২৪, লান্টানা লজ (টেক পার্ক ক্রিসেন্ট, টুয়াস সাউথ অ্যাভিনিউ ৪ এর কাছে)
- ওই সময় আব্দুস সাত্তার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ছিলেন
- অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি বাংলাদেশি বক্তা আমির হামজাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁর ভ্রমণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় সমন্বয় করেন
- আরেক বাংলাদেশি নাগরিক, উল্লাহ মোহাম্মদ নেয়ামত, সেখানে গান পরিবেশন করেন বলে জানা গেছে

অভিযোগের বিস্তারিত
- সিঙ্গাপুর পুলিশ বাহিনী ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য:
- আমির হামজা সমবেত লোকজনের সামনে ধর্মীয় বক্তব্য রাখেন
- উল্লাহ মোহাম্মদ নেয়ামত গান পরিবেশন করেন
- ডরমিটরির সাধারণ বাসিন্দা নন এমন অনেক মানুষ ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেন, কিন্তু তাদের উপস্থিতির তালিকা সংরক্ষণ করা হয়নি
- ১২ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পুলিশে রিপোর্ট করা হলে জানা যায় আমির হামজা ইতিমধ্যে (১০ আগস্ট ২০২৪) সিঙ্গাপুর ত্যাগ করেছেন
আমির হামজা: কথিত সন্ত্রাসী যোগসূত্র
- সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে:
- আমির হামজার বক্তব্য বিচ্ছিন্নতাবাদী ও উগ্র মতাদর্শকে উসকে দেয়, যা সিঙ্গাপুরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর
- সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী কে. শানমুগাম (৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সংসদে):

-
- আমির হামজা বক্তৃতায় অ-মুসলিমদের “কাফির” বলেছেন
- কিছু চরমপন্থীকে ধর্মীয় নিষ্ঠার আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন
- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরও দাবি:
- আমির হামজা ভাষণে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে “নির্যাতনকারী” বলেছেন
- তিনি অভিযোগ করেন যে ভিন্নমতাবলম্বীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে
পটভূমিতে আইনি ত্রুটি এবং নিরাপত্তা
- আমির হামজা সিঙ্গাপুরে প্রবেশের সময় ভিন্ন নামে পাসপোর্ট ব্যবহার করেন; তাই অভিবাসন তথ্যভান্ডারে তাঁর পরিচয় মেলেনি
- এটাই ছিল তাঁর প্রথম সিঙ্গাপুর সফর, ফলে বায়োমেট্রিক তথ্য আগেই সিস্টেমে সংরক্ষিত ছিল না
- বাংলাদেশে ২০২১ সালে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়
- ২০১৫ সালে সিঙ্গাপুরেও ২৭ জন বাংলাদেশি নির্মাণশ্রমিককে উগ্রপন্থা ছড়ানোর অভিযোগে আটক ও ফেরত পাঠানো হয়েছিল

বিচারকার্য এবং পরবর্তী পদক্ষেপ
- আব্দুস সাত্তার ও এসবিএম ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড অটোমেশনের মামলার পরবর্তী শুনানি ২৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে
- সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ ডরমিটরি ও অন্যান্য স্থানে জনসমাবেশ আয়োজনের বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে
- অস্বাভাবিক জমায়েত বা বিদেশি বক্তাদের মাধ্যমে উগ্রবাদী মতবাদ প্রচারের চেষ্টা রোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো আরও সতর্ক থাকবে
উপসংহার
সিঙ্গাপুরে বিদেশি বক্তার মাধ্যমে সন্দেহভাজন উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার এবং স্থানীয় নাগরিকের সম্পৃক্ততার এই ঘটনা দেশটির সামাজিক সম্প্রীতি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে। সরকারি সংস্থাগুলো এখন আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে, যেন বেআইনি জনসমাবেশ বা অনুমতিহীন ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের ঘটনা ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
তথ্যসূত্র: দি স্ট্রেইট টাইমস, সিঙ্গাপুর
Leave a Reply