সারাক্ষণ রিপোর্ট
২০২০ সালে চীনে বাংলাদেশি ৯৭ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছিল। পরে ২০২২ সালের আগে এটি বাড়িয়ে ৯৮ শতাংশ করা হয়, যেখানে নতুনভাবে চামড়া ও চামড়াজাতসহ ৩৮৩টি পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
চীন ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধার ঘোষণা দেয়, যা ২০২৬ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠকের পরই এই দুই বছর বাড়ানোর ঘোষণা আসে।
রফতানি বৃদ্ধি না হওয়ার কারণ
টানা ছয় বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকার পরও চীনে বাংলাদেশের রফতানি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চীনে রফতানি হয়েছিল ৭১ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশের মোট রফতানির মাত্র ১.৬ শতাংশ। অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৮৩ কোটি ডলার।
বিশাল উৎপাদনশীলতার দেশে রফতানি কেন কম?
ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে চীন
চীনকে বিশ্ব উৎপাদনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ধরা হয়। যদিও তারা অনেক পণ্য নিজেই উৎপাদন করে, তবু কিছু পণ্য আমদানি করে থাকে। বিভিন্ন দেশের জন্য শুল্ক সুবিধা থাকলেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য হারে রফতানি বাড়াতে পারেনি।
চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ
বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে চীনের অনেক বিনিয়োগ এখন ভিয়েতনামে স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং সেখানকার উৎপাদিত পণ্য চীনে রফতানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ যদি এই বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারত, তাহলে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য চীনের বিশাল বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সরবরাহ করা যেত। অবশ্য সেটা নির্ভর করে সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ওপর।
উৎপাদন ও অবকাঠামোগত প্রস্তুতি
বাংলাদেশে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা থাকলেও এর অগ্রগতি ধীরগতির। চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। পাশাপাশি দক্ষ কর্মীর অভাব ও উপযুক্ত অবকাঠামোর সংকট এ সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ
নতুন ঘোষণায় আশাবাদ সীমিত
২০২২ সালে বেইজিংয়ে বাংলাদেশ কমার্শিয়াল উইংয়ের করা এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চীনের বিশাল বাজার দখল করা বাংলাদেশের জন্য সহজ নয়। প্রচলিত পণ্যে চীনের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কঠিন।
বাণিজ্য ঘাটতি
দুই দেশের বাণিজ্যের ভারসাম্য বড় ধরনের ঘাটতির দিকে ঝুঁকে আছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, যার মধ্যে ১১ বিলিয়ন ডলারই আসে চীন থেকে। অথচ একই সময় চীন বছরে ২,৪০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করলেও বাংলাদেশ সরবরাহ করতে পেরেছে মাত্র ৬০০ মিলিয়ন ডলার।
চীনা বাজারে বাংলাদেশের সম্ভাবনা
প্রচলিত পণ্যের রফতানি কম
ওভেন পোশাক, নিটওয়্যার ও মৎস্যজাত পণ্যের রফতানি সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কমে গেছে।
নতুন পণ্য ও সম্ভাবনা
পরচুলা ও মানুষের মাথার চুল, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, কপার ও অ্যালুমিনিয়ামজাত সামগ্রীর রফতানি বেড়েছে।
পাটপণ্যের সম্ভাবনা
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন মনে করেন, পাটপণ্য রফতানিতে চীনের বাজার বিশাল সুযোগ এনে দিতে পারে। চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাটপণ্যের আমদানিকারক।
উপসংহার
চীনের শুল্কমুক্ত সুবিধা বাংলাদেশকে বড় ধরনের সম্ভাবনা দিলেও, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কর্মদক্ষতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে। চীন ২০২৮ সাল পর্যন্ত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় রাখার ঘোষণা দিলেও, বাংলাদেশের প্রকৃত লাভ করতে হলে নিজস্ব উৎপাদন কাঠামো ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি। নইলে বিশাল এই বাজারে প্রবেশ শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।