সারাক্ষণ রিপোর্ট
ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনার নতুন দিক খুলতে, ভারতকে ২৬% পরস্পর শুল্কের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই শুল্ক আগামী বুধবার থেকে পুরোপুরি কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব ও বিশ্লেষণ
- রপ্তানি ও জিডিপি:
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন বাজারে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় রপ্তানিতে এই শুল্ক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পূর্বের অর্থবছরে ৮.২% থেকে কমে এই বছর জিডিপি বৃদ্ধির হার প্রায় ৬.৫% হতে পারে। - ক্ষতির মাত্রা:
বর্তমান শুল্কের কারণে জিডিপিতে ৭০ থেকে ৯০ ভিত্তি পয়েন্টের অতিরিক্ত ক্ষতি এবং রপ্তানি রাজস্ব প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে।
এএনজেড ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ ধিরাজ নিম বলেন, “এটি অত্যন্ত বড় আকারের ক্ষতি এবং গ্রহণযোগ্য নয়।”
প্রভাবিত প্রধান সেক্টরসমূহ
- ক্ষতির সম্ভাব্য সেক্টর:
ইলেকট্রনিক্স, রত্ন ও গয়না, এবং অটোমোবাইল শিল্পে মার্কিন শুল্কের কারণে গুরুতর ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। - ফার্মাসিউটিক্যাল খাত:
ফার্মাসিউটিক্যাল রপ্তানিকে শুল্কমুক্ত রাখা হয়েছে, যা সাময়িক স্বস্তির খবর হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে।
বাজার প্রতিক্রিয়া ও তুলনামূলক সুবিধা
- শেয়ার বাজারের অবস্থা:
নিফটি ৫০ ও সেনসেক্স সূচক দুপুরে যথাক্রমে প্রায় ০.২% ও ০.২৭% কমে গেছে। উদ্বোধনী সময়ে রুপি ডলারের তুলনায় কিছুটা দুর্বল হলেও দুপুরে তা পুনরুদ্ধার হয়েছে। - অন্যান্য এশিয়ান দেশের তুলনা:
ভারতের রপ্তানিতে তুলনামূলক কম শুল্ক থাকায় চীন, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য এশিয়ান দেশের তুলনায় কিছু সুবিধার আশা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা জানান, “বাজার মনে করে ২৬% শুল্কের হার দীর্ঘস্থায়ী হবে না এবং আলোচনার মাধ্যমে এ হার কমে আসবে।”
সাম্প্রতিক বাণিজ্য আলোচনা
- মার্কিন কর্মকর্তাদের পরিদর্শন:
গত সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তাদের একটি দল ভারত পরিদর্শন করেছে। - আলোচনার লক্ষ্য:
উভয় দেশের চলমান আলোচনার উদ্দেশ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ৫০০ বিলিয়নে উন্নীত করা।
ভারতীয় সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পারস্পরিক লাভজনক ও বহুমুখী সেক্টরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য আলোচনা চলছে।”
নীতিমালা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
- সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব:
চীন, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিপরীতে, ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে আরও সহযোগিতামূলক মনোভাব গ্রহণ করেছে। - শুল্ক হ্রাসের পদক্ষেপ:
বছরের শুরুতে বড় মোটরসাইকেল, বিলাসবহুল গাড়ি ও বার্বনের শুল্ক কমিয়ে মার্কিন চাপ প্রশমনের চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে ডাল, সয়াবিন এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানি শুল্ক কমানোর পরিকল্পনাও চলছে। - ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ:
ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের “অস্বাভাবিকভাবে ভারী অথবা দ্বিগুণ পরীক্ষা ও প্রত্যয়ন প্রক্রিয়া” এর বিরুদ্ধে দাবি জানিয়েছিল, যার ফলে মার্কিন রপ্তানি বার্ষিক কমপক্ষে ৫.৩ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেতে পারে- যদি বাধা দূর হয়।
বৈশ্বিক প্রভাব ও নীতিগত সহায়তা
- বিশ্বব্যাপী প্রভাব:
বিশ্লেষকরা সতর্ক, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সত্ত্বেও ট্রাম্পের “ইনডেপেনডেন্স ডে” ঘোষণা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, যা ভারতের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। - অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ:
মার্কিন অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হ্রাস এবং দুর্বল বৈশ্বিক বাণিজ্যগত চাঞ্চল্য ভারতীয় রপ্তানের বাইরের চাহিদাকে প্রভাবিত করতে পারে। দুর্বল কর্পোরেট আস্থা ও বিনিয়োগের মনোভাব পতনের ফলে দেশের ক্যাপেক্স চক্রও প্রভাবিত হতে পারে। - ভবিষ্যৎ নীতিগত সমর্থন:
Morgan Stanley অনুযায়ী, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরবর্তী মুদ্রা নীতিমালা ঘোষণায় নিরপেক্ষ থেকে সহায়ক নীতিতে সরে যেতে পারে। যদিও ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হ্রাসের সম্ভাবনা বেড়ে গেলেও, উভয় পক্ষ ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট হ্রাসকে মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করছে।