সারাক্ষণ রিপোর্ট
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির পরবর্তী কিস্তি পেতে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক তথ্য ও নীতিমালা পর্যালোচনা করা আইএমএফ প্রতিনিধিদলের মূল লক্ষ্য। দুই সপ্তাহব্যাপী এ আলোচনায় ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের শর্ত ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
প্রতিনিধিদলের আগমন ও সময়সূচি
- প্রতিনিধিদল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
- সফরের প্রথম দিন (৬ এপ্রিল) এবং শেষ দিন (১৭ এপ্রিল) তারা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
- সফরের শেষে (১৭ এপ্রিল) একটি প্রেস ব্রিফিং করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক
সফরকালে আইএমএফ প্রতিনিধিদল অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ জ্বালানি নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিইআরসি), এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে। এসব বৈঠকে—
- ঋণ ছাড়ের জন্য নির্ধারিত শর্ত পূরণের অবস্থা
- সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামো
- সংশ্লিষ্ট আর্থিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি
পর্যালোচনা করা হবে।
ইতোমধ্যে পাওয়া ঋণের কিস্তি
বাংলাদেশ সরকার ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই ঋণ কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে তিনটি কিস্তি পেয়েছে—
- প্রথম কিস্তি: ৪৭৬.৩ মিলিয়ন ডলার (ছাড়ের তারিখ: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)
- দ্বিতীয় কিস্তি: ৬৮১ মিলিয়ন ডলার (ছাড়ের তারিখ: ডিসেম্বর ২০২৩)
- তৃতীয় কিস্তি: ১.১৫ বিলিয়ন ডলার (ছাড়ের তারিখ: জুন ২০২৪)
এই তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ প্রায় ২.৩১ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। বাকি দুই কিস্তি (চতুর্থ ও পঞ্চম), যার পরিমাণ ২.৩৯ বিলিয়ন ডলার, এখনও ছাড় হয়নি।
একত্রে দুই কিস্তি ছাড়ের পরিকল্পনা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর প্রাক-বাজেট আলোচনায় ইঙ্গিত মিলেছে যে, আইএমএফ ও বাংলাদেশ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একত্রে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর অনুযায়ী, কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণে অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হওয়ায় একসঙ্গে দুই কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ঋণ ছাড়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ
চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ে সরকারের জন্য তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে—
মুদ্রা বিনিময় হারকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৫ শতাংশ পরিমাণ অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব নীতি বিভাগের প্রশাসনিক কাজ পৃথকীকরণ।
এসব শর্ত পূরণের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে আসন্ন কিস্তিগুলো সময়মতো ছাড় হওয়া।
সারসংক্ষেপ
এই সফরে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজস্ব সংগ্রহ-ব্যবস্থাপনা, এবং বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হারসহ গুরুত্বপূর্ণ সব দিক গভীরভাবে পর্যালোচনা করবে। ঋণের পরবর্তী কিস্তি দ্রুত ছাড় নিশ্চিত করতে সরকার কীভাবে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে অগ্রসর হচ্ছে, সে বিষয়টিও স্পষ্ট হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।