ইউএনবি থেকে অনূদিত
ঋণের কিস্তি ছাড়ে বাধা, সংকটে এনবিআর
৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তি ছাড়ে বিলম্ব ঘটেছে, কারণ বাংলাদেশ নির্ধারিত সংস্কার শর্তগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জরুরি ভিত্তিতে আয় সংগ্রহ বাড়াতে কাজ শুরু করেছে।
৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আইএমএফ জানায়, পরবর্তী কিস্তি ছাড় পেতে হলে আগামী কয়েক মাসে এনবিআরকে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে।
রাজস্ব ঘাটতি, জ্বালানি খাতে সংস্কার বিলম্বে উদ্বেগ
আইএমএফের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, রাজস্ব আহরণে ঘাটতি, জ্বালানি খাতের সংস্কারে ধীর গতি এবং আর্থিক প্রতিবেদন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এর ফলে কিস্তি ছাড় আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. সলেহউদ্দিন আহমেদ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ
এই স্থগিতাদেশ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।
বর্তমানে দেশে কর-জিডিপি অনুপাত ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ৭ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করতে হবে এনবিআরকে।
বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্যমাত্রা
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, এই লক্ষ্য অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী, বাস্তবতাবিবর্জিত এবং চ্যালেঞ্জিং। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। বাকি চার মাসে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা আহরণ করতে হবে।
পরবর্তী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) জন্য আইএমএফ কর-জিডিপি অনুপাত ৯ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া তারা ভ্যাট অব্যাহতির পরিমাণ কমিয়ে একটি অভিন্ন ভ্যাট হার চালুর পরামর্শ দিয়েছে। তবে সরকার জানিয়েছে, ভ্যাট সংস্কার ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
চলমান আইএমএফ মিশন ও ফলাফলের গুরুত্ব
আইএমএফের পর্যালোচনা মিশন ৭ এপ্রিল শুরু হয়ে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এই মিশনের ফলাফল অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশ একযোগে দুটি কিস্তি পাবে কি না, কারণ জানুয়ারিতে পাওয়ার কথা ছিল চতুর্থ কিস্তি।
এ পর্যন্ত আইএমএফ দল অর্থ উপদেষ্টা, অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থ বিভাগের ম্যাক্রোইকোনমিক উইংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে পূর্বাভাস
আইএমএফ চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করেছে। তবে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য আইএমএফের পূর্বাভাস ৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কিছুটা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে কিছুটা আশার বার্তা দিয়েছে আইএমএফ। তাদের মতে, চলতি বছরের গড় মূল্যস্ফীতি হবে ৯ শতাংশ, যা আগের পূর্বাভাস থেকে কম।
সরকারের লক্ষ্য ৮ শতাংশ, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কমে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
Leave a Reply