সারাক্ষণ রিপোর্ট
মুর্শিদাবাদে দ্বিতীয় দিনের সহিংসতা
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় ওয়াকফ (সংশোধন) আইন নিয়ে চলমান বিক্ষোভ দ্বিতীয় দিনে গড়ালে সহিংসতা চরমে পৌঁছায়। এতে অন্তত তিনজন নিহত এবং বহু মানুষ, যার মধ্যে পুলিশ সদস্যও রয়েছে, আহত হন। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্ট অঞ্চলটিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয়।
কোথায় কী ঘটেছে
সুতী ও শমসেরগঞ্জ এলাকায় শুক্রবার শুরু হওয়া সহিংসতায় ক্ষুব্ধ জনতা বাড়িঘরে হামলা চালায়, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন হরগোবিন্দ দাস (৬৫) এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাস (৪০), যাদের পরিবার জানায়—তাদের বাড়ি থেকে টেনে বের করে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তৃতীয় নিহত ব্যক্তির নাম ইজাজ আহমেদ (২৫), যিনি সুতীতে গুলিবিদ্ধ হন।
রাজনীতিতে দোষারোপ
এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) এবং বিরোধী বিজেপির মধ্যে দোষারোপের রাজনীতি শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মুর্শিদাবাদে মোতায়েনকৃত ৩০০ বিএসএফ সদস্য ছাড়াও অতিরিক্ত আরও পাঁচ কোম্পানি মোতায়েন করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইন-শৃঙ্খলা) জাওয়েদ শামিম বলেন, “সামাজিকভাবে বিশৃঙ্খল কিছু গুজব ছড়ানোর ফলে সুতী ও শমসেরগঞ্জে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়।”
পরিবার ও পুলিশের বক্তব্য
নিহতদের পরিবার জানায়, হামলাকারীরা বাড়িতে ঢুকে দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করে ও বাড়ি লুট করে। হরগোবিন্দের নাতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “আমরা ছাদে উঠে প্রাণে বেঁচেছি।”
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং অপরাধীদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।
বিজেপি ও তৃণমূলের পাল্টাপাল্টি মন্তব্য
বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকার ভোট ব্যাংকের স্বার্থে এই সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীরবতা অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি কি ভোট ব্যাংকের রাজনীতিকে মানুষের নিরাপত্তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন?”
মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “আমরা কোনো সহিংসতা সমর্থন করি না। কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করছে। আমি সবার প্রতি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাই।”
ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে উত্তেজনার সূত্রপাত
সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, যা ইসলামী দাতব্য সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, তা নিয়েই এই উত্তেজনা। গত শনিবার রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর থেকেই মুর্শিদাবাদে বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা শুরু হয়।
আগের সংঘর্ষ এবং পুলিশের পদক্ষেপ
প্রথম দফার সহিংসতা শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার, যখন জঙ্গিপুরে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর পাথর ছোঁড়ে ও গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। শুক্রবার পুনরায় বিক্ষোভে সহিংসতা দেখা দিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে দু’জন আহত হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শনিবার ধুলিয়ান শহরে আবারও সহিংসতা দেখা দেয়। পুলিশের মহাপরিদর্শক রাজীব কুমার বলেন, “প্রথমে আমরা সংযতভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি, কিন্তু পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হলে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।”
কেন্দ্র ও বিএসএফ-এর তৎপরতা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সহিংসতা মোকাবেলায় রাজ্য প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহন। তিনি রাজ্য সরকারকে পরিস্থিতি সামলাতে এবং অন্যান্য সংবেদনশীল জেলাগুলোতেও সতর্কতা জারি রাখতে বলেন।
বিএসএফ-এর দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের উপ-মহাপরিদর্শক এনকে পাণ্ডে বলেন, “প্রশাসনের অনুরোধে আমরা শান্তি ফিরিয়ে আনার কাজে সহযোগিতা করছি।”
Leave a Reply