মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

মাছ শিকারের রাজারা

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ১১.০০ পিএম

সারাক্ষণ রিপোর্ট

গ্রিসের উত্তরাঞ্চলের পর্বতময় এলাকায় অবস্থিত এক শান্ত হ্রদেযা প্রচুর মাছসমৃদ্ধবিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কিছু পাখি সমবেত হয়ে খাবারের মহোৎসবে মেতে ওঠে।

খাবারের লড়াই
ডালমেসিয়ান পেলিক্যানরা গ্রিসের উত্তরের কেরকিনি হ্রদে খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করে। এখানকার জেলেরা প্রায়ই ছোট নৌকা থেকে মাছের টুকরো হ্রদে ফেলেনযা পেলিক্যানদের ক্ষুধার তাড়না মেটাতে বেশ উপকারী হয়। বিশাল ঠোঁট দিয়ে তারা সেই টুকরোগুলো ধরার চেষ্টা করে। জেলেরা চলে যাওয়ার পরপাখিগুলো আবার আলাদা হয়ে যায় এবং তাদের স্বাভাবিক একাকী শিকারযাত্রায় ফিরে যায়।

ডানাওয়ালা দানব
ডালমেসিয়ান পেলিক্যান প্রজাতি পেলিক্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সব উড়তে সক্ষম পাখির মধ্যেও ওজনের দিক থেকে অন্যতম ভারী। এদের ওজন প্রায় ১৫ কেজি পর্যন্ত হয়। আকার বা ওজন যতই বিশাল হোক না কেনফটোগ্রাফার গাই এডওয়ার্ডস বলছেনবাতাসের সহায়তায় ওড়ার সময় এরা বেশ সুন্দর ভঙ্গিতে উড়তে পারে।

রঙিন রূপ
জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ডালমেসিয়ান পেলিক্যানের গলার থলে ম্লান হলুদ থেকে কমলা হয়ে যায় এবং প্রজনন ঋতু ঘনালে তা রক্তলাল বা গাঢ় টকটকে লাল রঙে রূপান্তরিত হয়। গাইয়ের মতেশীতকালে প্রায় ৩০০ ডালমেসিয়ান পেলিক্যান কেরকিনি হ্রদে দেখা যায়এদের মধ্য থেকে প্রায় ১০০ জোড়া এখানে বাসা বাঁধে।

পাখনার যত্ন
ডালমেসিয়ান পেলিক্যান দিনের একটি বড় অংশ পালক পরিচর্যায় ব্যয় করে। এরা ঠোঁট ব্যবহার করে লেজের কাছাকাছি অবস্থিত ইউরোপিজিয়াল গ্রন্থি থেকে তেল বের করে সেই তেল পালকে মাখে। এর ফলে পালক জলরোধীনমনীয় ও টেকসই থাকে।

বিশেষ সম্পর্ক
কেরকিনি হ্রদে ডালমেসিয়ান পেলিক্যান মানুষকে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সহনীয়ভাবে মেনে নেয়বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে তারা জেলেদের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এখানেপাখিগুলো নৌকায় থাকা আলোকচিত্রীদের আশেপাশে জমায়েত হয়খাবারের প্রত্যাশায়।

চিত্রবৈশিষ্ট্য
হ্রদে কিছুদিন কাটালেই বোঝা যায়প্রতিটি পেলিক্যানের স্বভাব ও চেহারায় আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। গাই জানান, “এদের প্রত্যেকের আলাদা চুলের ছাঁট’ আছে। অনেকে গলার থলের গায়ে চিহ্ন বা ছিদ্র নিয়ে চলেযা প্রায়ই মারামারিতে তৈরি হয়।

জল-স্কিইং
ঘাড় শক্ত করে এক ডালমেসিয়ান পেলিক্যান যখন হ্রদে নামেতখন এর পা দুটো প্রায় পানির ওপর স্কি করার মতো ভঙ্গিতে এগোয়গতি কমাতে সাহায্য করে। গাইয়ের ভাষায়, “শাটার স্পিড ধীর করে ছবিটি তুলতে গেলে শত শত চেষ্টা করতে হয়। পাখির চোখের অংশটিই স্পষ্ট থাকা চাইফলে ক্যামেরা প্যান করার কৌশল সঠিক হতে হয়।

মূল্যবান পাথর
পানির ধারে বা মাঝখানে বড় পাথরগুলো পেলিক্যানদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়শুকনো হওয়ার জন্য কিংবা পালক পরিচর্যার জন্য। গাই বলছেন, “এই গ্রেট করমোরান্ট এক পাথর নিয়ে বেজায় লড়াই করেছিল পেলিক্যানের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত পেলিক্যান জিতে গিয়েছিল। তবুও করমোরান্ট বারবার ফিরে এসে পেলিক্যানকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।” এখানে গ্রেটার ফ্লেমিংগোগ্রেট-ক্রেস্টেড গ্রিবএমনকি কোনও কোনও সময় সাদা লেজওয়ালা ঈগলও দেখা যায়।

বেঁচে থাকার লড়াই
বিশ্বব্যাপী এই প্রজাতির সংখ্যা এখন মাত্র প্রায় ১২,০০০ প্রাপ্তবয়স্কে গিয়ে ঠেকেছেবাসস্থান ধ্বংসপাখির ফ্লু ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত প্রভাবের কারণে। তবু ইউরোপের কিছু অঞ্চলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংখ্যায় কিছুটা উন্নতি হয়েছেসংরক্ষণমূলক ব্যবস্থার ফলে। বিশেষ করে কেরকিনি হ্রদ ও ডানিউব ডেল্টায় কৃত্রিম প্রজনন মঞ্চ তৈরি করা হয়েছেযা ডালমেসিয়ান পেলিক্যানদের অন্যতম ইউরোপীয় প্রজননস্থল।

সমৃদ্ধ জলাভূমি
পেলিক্যানরা সাধারণত প্রতিদিন ১ থেকে ২ কেজি মাছ ধরেবেশিরভাগই কার্প জাতীয় মাছ। গাইয়ের কথায়, “আমি এত মাছ কোথাও দেখিনি।” তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাছের সংখ্যা ওঠানামা করেছেফলে কেউ কেউ পেশা হিসেবে মাছ ধরা ছেড়ে দিয়েছেন।

চোখের তারায়
ডালমেসিয়ান পেলিক্যানের বয়স নির্ধারণ করা কঠিনতবে উজ্জ্বল বা ফ্যাকাশে রঙের আইরিস দেখে বোঝা যায় এটি পরিণত পাখি। গাই জানালেন, “এই পেলিক্যানটি একবার নৌকার ওপরই নেমে পড়েছিলআমার থেকে মাত্র এক ফুট দূরে! এমন হলে আমরা প্রায়ই পিছিয়ে যাইকারণ চোখে ঠোঁটের বাড়ি কেউই চাই না।

শীতল ঠোঁট
কখনও কখনও কেরকিনি পর্বতমালা থেকে শীতল বাতাস বয়ে আসেযা হ্রদের উপর নেমে আসে। পর্বতমালার উচ্চতা প্রায় ২,০০০ মিটার। তবু পুরো হ্রদটি একসঙ্গে জমে যাওয়া বিরল। ২০১৮ সালেপ্রায় ১৫ বছর পর প্রথমবারের মতো হ্রদটি পুরোপুরি জমে গিয়েছিল।

 

তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছ?
ডালমেসিয়ান পেলিক্যানের এই ভঙ্গিটিই সবচেয়ে পরিচিত,” বলছেন গাই। বয়োজ্যেষ্ঠ ও প্রভাবশালী পাখিগুলো ডানা এমনভাবে মেলে রাখে যাতে তারা দেখতে একটু বড় লাগে এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সী পাখিদের ভয় দেখাতে পারে।” এই ছবি তিনি তুলেছেন হ্রদের তীরের সমান উচ্চতা থেকে, “নিচু থেকে ছবি তুললে মনে হয় পেলিক্যান নিচের দিকে তাকিয়ে আছেএতে তাদের আরো বেগবান ও রাশভারী দেখায়।

ভারী ওড়াওড়ি
অবিশ্বাস্য নয় যেডালমেসিয়ান পেলিক্যানের আকাশে ওঠার জন্য বিশাল ডানার প্রয়োজন হয়। এদের ডানার প্রসার প্রায় ২.৯ মিটার থেকে ৩.৪৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারেযা বিশ্বের বৃহত্তম ডানার বিস্তৃতির মধ্যে একটি।

সকালের সারি
ভোরের আকাশে করমোরান্টের ঝাঁক কাছের অরণ্যে রাত কাটিয়ে ফিরে আসে। তারা হ্রদে এসে খাবার খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েআর ডালমেসিয়ান পেলিক্যানদের একটি দল জেলেদের নৌকা ছাড়ার অপেক্ষায় থাকে। গাই লক্ষ করেছেনপেলিক্যান তুলনামূলকভাবে শান্ত স্বভাবের পাখিতারা প্রায় শব্দ করে নামাছ ধরার সময় কিংবা খাদ্যের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় শুধু কখনও কখনও হিস হিস ধরনের শব্দ করে।

পরিপাটি দেহসজ্জা
অনবরত পালক পরিচর্যার ফলে পেলিক্যানের দেহে সুন্দর পালকের ছোঁয়া থাকে। গাইয়ের ভাষায়, “আকাশ মেঘলা থাকলে আলোর তারতম্য বেশি হয় নাআর তখনই পালকের গঠন স্পষ্টভাবে বোঝা যায়সব নিখুঁত বিবরণ ফুটে ওঠে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024