১০:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

বিশ্ব যখন টালমাটাল, তখনও উড়ছে রঙিন প্রজাপতিরা

  • Sarakhon Report
  • ১২:৩০:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • 42

আইমি নেজুকুমাতাথিল

প্রকৃতির রূপে আশার বার্তা

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য সংকট এবং নগরায়ণের মধ্যে কিছু প্রাণী আজও টিকে থাকার অসাধারণ সক্ষমতা দেখাচ্ছে। এমনই এক প্রজাতি হচ্ছে রঙিন প্রজাপতি ‘পেইন্টেড লেডি’। তাদের অভিযোজন ক্ষমতা এবং অবিশ্বাস্য যাত্রা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের গভীর সংযোগ রয়েছে।

,০০০ মাইলের বিস্ময়কর যাত্রা

বর্তমানে লক্ষ লক্ষ পেইন্টেড লেডি প্রজাপতি আফ্রিকার সাহারা-উপদ্বীপ অঞ্চল থেকে উত্তর মেরু পর্যন্ত প্রায় ৪,৫০০ মাইলের এক মহাযাত্রায় উড়ছে। বছরে এই যাত্রার পরিমাপ দাঁড়ায় ৯,০০০ মাইল। পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশেই এই প্রজাপতির দেখা মেলে — শুধু অ্যান্টার্কটিকা বাদে। গত বছর গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন, একদল পেইন্টেড লেডি বাতাসে ভর করে আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর উপকূলে পৌঁছেছে — যা প্রথম কোনো প্রামাণ্য দলিলভুক্ত মহাসাগরীয় পতঙ্গ অভিবাসন।

অভিযোজনেই বাঁচার চাবিকাঠি

এই প্রজাপতিরা বিভিন্ন ফুল থেকে পরাগরেণু সংগ্রহ করে। খাদ্যের জন্য নির্দিষ্ট ফুলের ওপর নির্ভর না করে, পার্ক, বাগান ও কৃষিক্ষেতের নানা গাছে তারা খাবার খুঁজে নেয়। শহর, রাস্তা বা নির্মাণাধীন এলাকার কাছাকাছিও ডিম পাড়ে, যেখানে মাটি খোঁড়া থাকে। ফল গাছে পরাগায়ন ঘটিয়ে তারা মানুষের উপকারও করে।

প্রজাপতির রিলে রেস

একটি পূর্ণ অভিবাসনচক্রে প্রায় ১০ প্রজন্ম সময় নেয়। যে প্রজাপতিরা আফ্রিকা থেকে যাত্রা শুরু করে, তারা আর ফিরে আসে না। প্রতিটি প্রজন্ম পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ‘ব্যাটন’ তুলে দেয় — একেবারে রিলে রেসের মতো। বসন্তে তারা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে মিলিত হয়ে ডিম পাড়ে, এরপর সেই প্রজন্ম উত্তর ইউরোপে যায়। পরের শীতকালে তারা আফ্রিকার সবুজ সাভানায় ফিরে আসে — ক্লান্ত, তবে জীবনচঞ্চল।

নতুন আবিষ্কারের পথচলা

২০২৩ সালে স্পেনের ইনস্টিটুট বোতানিক ডে বার্সেলোনার গবেষক ড. জেরার্ড তালাভেরা ও ছয়টি দেশের বিজ্ঞানীরা এই প্রজাপতিদের শীতকালীন আবাসস্থল অনুসন্ধান করেন। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তারা আধা-শুষ্ক সাভানায় থাকে এবং ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণের আর্দ্র অঞ্চলে চলে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই বাসস্থানগুলো কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা জানা সংরক্ষণ প্রচেষ্টার জন্য জরুরি।

বিজ্ঞান ও ঐক্যের বার্তা

ড. তালাভেরা ও তাঁর আন্তর্জাতিক দলের গবেষণা আমাদের শিখিয়েছে, বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা ও আন্তসীমান্ত প্রচেষ্টায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য সংরক্ষণ সম্ভব। পেইন্টেড লেডির গল্প আমাদের বলে— দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর যাত্রায় ডানা ক্ষয় হলেও, নতুনভাবে টিকে থাকার পথ এখনও খোলা। একসঙ্গে কাজ করলে, বর্তমান সময়ের জরুরি সমস্যাগুলোরও সমাধান সম্ভব।

 

 

 

সূত্র: এই নিবন্ধটি মূলত প্রকাশিত হয়েছে The New York Times (International Edition) পত্রিকায়। লিখেছেন কবি ও প্রাবন্ধিক আইমি নেজুকুমাতাথিল এবং ফটোগ্রাফার লুকাস ফগলিয়া।ফগলিয়া তাঁর নতুন বই “Constant Bloom”-এ প্রজাপতির এই যাত্রা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

বিশ্ব যখন টালমাটাল, তখনও উড়ছে রঙিন প্রজাপতিরা

১২:৩০:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

আইমি নেজুকুমাতাথিল

প্রকৃতির রূপে আশার বার্তা

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য সংকট এবং নগরায়ণের মধ্যে কিছু প্রাণী আজও টিকে থাকার অসাধারণ সক্ষমতা দেখাচ্ছে। এমনই এক প্রজাতি হচ্ছে রঙিন প্রজাপতি ‘পেইন্টেড লেডি’। তাদের অভিযোজন ক্ষমতা এবং অবিশ্বাস্য যাত্রা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের গভীর সংযোগ রয়েছে।

,০০০ মাইলের বিস্ময়কর যাত্রা

বর্তমানে লক্ষ লক্ষ পেইন্টেড লেডি প্রজাপতি আফ্রিকার সাহারা-উপদ্বীপ অঞ্চল থেকে উত্তর মেরু পর্যন্ত প্রায় ৪,৫০০ মাইলের এক মহাযাত্রায় উড়ছে। বছরে এই যাত্রার পরিমাপ দাঁড়ায় ৯,০০০ মাইল। পৃথিবীর প্রায় সব মহাদেশেই এই প্রজাপতির দেখা মেলে — শুধু অ্যান্টার্কটিকা বাদে। গত বছর গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন, একদল পেইন্টেড লেডি বাতাসে ভর করে আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর উপকূলে পৌঁছেছে — যা প্রথম কোনো প্রামাণ্য দলিলভুক্ত মহাসাগরীয় পতঙ্গ অভিবাসন।

অভিযোজনেই বাঁচার চাবিকাঠি

এই প্রজাপতিরা বিভিন্ন ফুল থেকে পরাগরেণু সংগ্রহ করে। খাদ্যের জন্য নির্দিষ্ট ফুলের ওপর নির্ভর না করে, পার্ক, বাগান ও কৃষিক্ষেতের নানা গাছে তারা খাবার খুঁজে নেয়। শহর, রাস্তা বা নির্মাণাধীন এলাকার কাছাকাছিও ডিম পাড়ে, যেখানে মাটি খোঁড়া থাকে। ফল গাছে পরাগায়ন ঘটিয়ে তারা মানুষের উপকারও করে।

প্রজাপতির রিলে রেস

একটি পূর্ণ অভিবাসনচক্রে প্রায় ১০ প্রজন্ম সময় নেয়। যে প্রজাপতিরা আফ্রিকা থেকে যাত্রা শুরু করে, তারা আর ফিরে আসে না। প্রতিটি প্রজন্ম পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ‘ব্যাটন’ তুলে দেয় — একেবারে রিলে রেসের মতো। বসন্তে তারা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে মিলিত হয়ে ডিম পাড়ে, এরপর সেই প্রজন্ম উত্তর ইউরোপে যায়। পরের শীতকালে তারা আফ্রিকার সবুজ সাভানায় ফিরে আসে — ক্লান্ত, তবে জীবনচঞ্চল।

নতুন আবিষ্কারের পথচলা

২০২৩ সালে স্পেনের ইনস্টিটুট বোতানিক ডে বার্সেলোনার গবেষক ড. জেরার্ড তালাভেরা ও ছয়টি দেশের বিজ্ঞানীরা এই প্রজাপতিদের শীতকালীন আবাসস্থল অনুসন্ধান করেন। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তারা আধা-শুষ্ক সাভানায় থাকে এবং ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণের আর্দ্র অঞ্চলে চলে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই বাসস্থানগুলো কিভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা জানা সংরক্ষণ প্রচেষ্টার জন্য জরুরি।

বিজ্ঞান ও ঐক্যের বার্তা

ড. তালাভেরা ও তাঁর আন্তর্জাতিক দলের গবেষণা আমাদের শিখিয়েছে, বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা ও আন্তসীমান্ত প্রচেষ্টায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য সংরক্ষণ সম্ভব। পেইন্টেড লেডির গল্প আমাদের বলে— দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর যাত্রায় ডানা ক্ষয় হলেও, নতুনভাবে টিকে থাকার পথ এখনও খোলা। একসঙ্গে কাজ করলে, বর্তমান সময়ের জরুরি সমস্যাগুলোরও সমাধান সম্ভব।

 

 

 

সূত্র: এই নিবন্ধটি মূলত প্রকাশিত হয়েছে The New York Times (International Edition) পত্রিকায়। লিখেছেন কবি ও প্রাবন্ধিক আইমি নেজুকুমাতাথিল এবং ফটোগ্রাফার লুকাস ফগলিয়া।ফগলিয়া তাঁর নতুন বই “Constant Bloom”-এ প্রজাপতির এই যাত্রা ছবির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।