সারাক্ষণ রিপোর্ট
হামলায় জড়িতদের পরিচয়
পাহালগামের কাছে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর একদিনের ব্যবধানে পাঁচ হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে তদন্ত সংস্থাগুলো। এদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি নাগরিক এবং দুজন জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা। প্রায় দুই দশকে কাশ্মীরে এটাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
ভারতের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তানি নাগরিকদের মধ্যে রয়েছে আসিফ ফৌজি (ছদ্মনাম মূসা), সুলেমান শাহ (ছদ্মনাম ইউনুস) এবং আবু তালহা (ছদ্মনাম আসিফ)। বাকি দুজন কাশ্মীরি—আদিল গুরি (আনন্তনাগের বিজবেহারার বাসিন্দা, ২০১৮ সালে পাকিস্তানে যান) এবং আহসান (পুলওয়ামার বাসিন্দা, তিনিও একই বছরে পাকিস্তানে যান)।
প্রশিক্ষণ ও অতীত কর্মকাণ্ড
কাশ্মীরি এই দুই সন্ত্রাসী সম্প্রতি পাকিস্তানে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে ভারতে অনুপ্রবেশ করে। অন্যদিকে, আসিফ ফৌজি ও সুলেমান শাহ ইতোমধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরে সক্রিয় ছিল এবং পূর্ববর্তী পুঞ্চ হামলাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।
ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে হত্যার অভিযোগ
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাহালগামের বাইসরান চত্বরে হামলাকারীরা সাধারণ নাগরিকদের—বিশেষত পুরুষদের—ধর্ম প্রমাণ করতে বাধ্য করছিল। কেউ কেউকে ইসলামি দোয়া পাঠ করতে বলা হয়, আবার কারও ক্ষেত্রে শরীরের চিহ্ন (যেমন খৎনা) দেখাতে বলা হয়।
সরকারি এক কর্মকর্তা জানান, ‘‘যেসব পর্যটক এই ধর্মীয় যাচাইয়ে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান, তাদের কাছ থেকে সঙ্গে সঙ্গে জীবন কেড়ে নেওয়া হয়।’’
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো এবং কাশ্মীরের পর্যটন খাতে বিঘ্ন ঘটানো।’’
মোস্ট ওয়ান্টেড ও পুরস্কার ঘোষণা
জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন ইতোমধ্যে তিন সন্দেহভাজনের স্কেচ প্রকাশ করেছে এবং প্রত্যেকের সম্পর্কে তথ্য দিলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মতে, হামলায় ব্যবহৃত ছদ্মনাম ‘মূসা’ আগেই ২০২৪ সালের মে মাসে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি কনভয়ে হামলার সঙ্গেও যুক্ত ছিল।
তদন্ত প্রক্রিয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ
বাইসরান চত্বরে কোনো সিসিটিভি না থাকায় তদন্তকারীরা প্রধানত বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার ওপর নির্ভর করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, হামলার পর সন্ত্রাসীরা পীর পাঞ্জাল অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় পালিয়ে যায়।
এখন তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) আইজি বিজয় সাখারে। এনআইএ ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে, এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ সহযোগিতা করছে।
হাফিজ সাঈদের ডেপুটি কাসুরির ভূমিকা
লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান হাফিজ সাঈদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাইফুল্লাহ কাসুরির ভূমিকা নিয়েও তদন্ত চলছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিওতে কাসুরি ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বলেন, ‘‘২০২৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কাশ্মীর হবে ‘পবিত্রদের ভূমি’।’’ এছাড়া তিনি দাবি করেন, ‘‘আসন্ন দিনগুলোতে মুজাহিদিনদের হামলার মাত্রা বাড়বে এবং কাশ্মীর মুক্ত হবে।’’
পাকিস্তান সংযোগ ও প্রযুক্তিগত প্রমাণ
তৃতীয় এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ‘‘এত পরিকল্পিত ও আধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের হামলা লস্কর-ই-তৈয়বার সংগঠনের সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়।’’ তদন্তকারীরা হামলার পেছনে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার কিছু প্রযুক্তিগত প্রমাণও খুঁজে পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই হামলায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে রিয়েল-টাইম গোয়েন্দা তথ্য এবং স্থানীয় পর্যায়ে আগাম পর্যবেক্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।’’
উপসংহার
কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ঘিরে পাহালগামের এ হামলা কেবল প্রাণঘাতীই নয়, বরং এর রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্যও স্পষ্ট। এতে করে ভারতের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
( এই রিপোর্ট তৈরিতে হিন্দুস্তান টাইমস ও পিটিআই এর তথ্য সূত্র’র সহযোগীতা নেয়া হয়েছে)