সুশান্ত সিংহ
২৪ এপ্রিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিহারের একটি সমাবেশে দাঁড়িয়ে বিরলভাবে তাঁর প্রচলিত হিন্দি পরিহার করে ইংরেজিতে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন : ‘ভারত প্রত্যেক সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাকে শনাক্ত করে শাস্তি দেবে। আমরা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাদের অনুসরণ করব। সন্ত্রাসবাদ কখনও ভারতের মনোবল ভাঙতে পারবে না। সন্ত্রাসবাদকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।’ কাশ্মীরের ভারতশাসিত অংশে গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর এ-বার্তা শুধু দেশীয় রাজনীতির জন্যই নয়, পাকিস্তানের জন্যও নয়; বরং বিশ্বকে জানিয়ে দিল যে ভারত শক্তিশালী সামরিক প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কাশ্মীর এখন আবারও বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উত্তাপের অঞ্চলের একটি। ২২ এপ্রিল পাহেলগামে ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার দায় কোনো গোষ্ঠীর ওপর দৃঢ়ভাবে পড়েনি, তবু নৃশংস এ-হামলা ভারতকে পুনরায় সেই পরিচিত সঙ্কটময় মোড়ে দাঁড় করিয়েছে। অতীতের সন্ত্রাসী তৎপরতাও ভারতকে প্রতিবেশী পাকিস্তানে হামলা চালাতে প্ররোচিত করেছে; দিল্লির মতে, উপত্যকায় চলমান জঙ্গিবাদের উৎসই পাকিস্তান।
এ-মাসে মোদির ভাষণ ২০১৯-এর ঘটনার প্রতিধ্বনি তোলে, যখন কাশ্মীরে আত্মঘাতী গাড়িবোমায় ৪০ জন আধাসামরিক জওয়ান নিহত হলে ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাকিস্তানে আঘাত হানে। সেবার পাকিস্তান পাল্টা জবাব দেয়, একটি ভারতীয় জেট ভূপাতিত করে পাইলটকে আটক করে; দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশই বিস্তৃত সংঘর্ষের কিনারায় পৌঁছে যায়।
তবে ২০১৯-এর সঙ্কট ভাগ্যগুণেই প্রশমিত হয়। ভারতীয় বিমান হামলা লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় পাকিস্তানে প্রাণহানি ঘটেনি; আটক পাইলট দ্রুত ফেরত আসেন; উভয় সরকারই নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে বিজয়ের দাবি করে। যুক্তরাষ্ট্র-সহ বিদেশি শক্তির দৃঢ় মধ্যস্থতাও উত্তেজনা কমায়। ট্রাম্প প্রশাসনের তৎকালীন কর্মকর্তা লিসা কার্টিস জানান, দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে টেলিফোন কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা নামিয়ে আনতে রূপরেখা দেয়।
কিন্তু আজ পরিস্থিতি ততটা অনুকূল নয়। মোদি সরকারের কঠোর নীতি ও কেন্দ্রশাসন মুসলিম-অধ্যুষিত উপত্যকায় গভীর বিক্ষোভ জাগিয়েছে। সাম্প্রতিক গণহত্যা পাকিস্তান-ভারত বিদ্বেষ পুনর্জ্বালিয়েছে—ভারতে প্রতিশোধের দাবি জোরাল, আর পাকিস্তান দিল্লির নীতিকে কশাঘাত করছে।
দিল্লি চাইলে গোপন বদলার পথ নিতে পারত, কিন্তু জনচাপ দৃশ্যমান ব্যবস্থা চায়। প্রকাশ্য সামরিক পদক্ষেপ অস্বীকার করা যায় না। ২০১৯-এ পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চেয়েছিলেন; তাঁর উত্তরসূরি অসিম মুনির রাজনৈতিক চাপের মুখে শক্তি প্রদর্শনে উদগ্রীব, এবং হামলার আগেই যুদ্ধংদেহী বক্তব্য দিয়েছিলেন। এই মুহূর্তে ট্রাম্প প্রশাসন অঞ্চলটি উপেক্ষা করছে—রাষ্ট্রদূত নেই, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অনুমোদন ঝুলে আছে—আর নিকটবর্তী আফগানিস্তানে কোনো মার্কিন সেনা নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্র কতটা সক্রিয় হবে স্পষ্ট নয়। মোদির আপসহীন উক্তি, পাকিস্তানি সেনা নেতৃত্বের প্রতিউত্তর এবং চীনের ক্রমবর্ধমান সংশ্লিষ্টতা কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণহীন সংঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
দাহ্য মিশ্রণ
কাশ্মীর সঙ্কটের কেন্দ্রে রয়েছে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ, কর্তৃত্ববাদী শাসন ও অনিরসন রাজনৈতিক ক্ষোভের মিশ্রণ। ২০১৯-এ সংবিধানের বিশেষ ধারা বিলুপ্ত করে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার সময় মোদি সরকার বলেছিল, এতে অঞ্চলটি ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে, স্থিতিশীলতা আসবে ও দ্রুত উন্নয়ন ঘটবে। বাস্তবে আদর্শগত উদ্দেশ্যই প্রাধান্য পায় : হিন্দুত্ববাদী বিজেপির বহুদিনের লক্ষ্য ছিল মুসলিম-অধ্যুষিত এই প্রাক্তন রাজ্যের বিশেষ স্ট্যাটাস বিলুপ্ত করে দিল্লির পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও কাশ্মীরি স্বাতন্ত্র্য ক্ষয় করা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশি পর্যটন বেড়েছে, কিন্তু বাস্তবে আতঙ্ক ও সহিংসতা নিয়তই সহযাত্রী। পাহেলগামসহ জায়গায় জায়গায় সশস্ত্র হামলা এবং দমনমূলক আইন-নিরাপত্তা মোতায়েন চলছেই। ২০১৯-এর পর বিশেষ মর্যাদা হারিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হওয়া কাশ্মীরি মুসলমানেরা আরও বঞ্চিত ও ক্ষমতাহীন বোধ করে। বহিরাগতদের জমি কেনার সুযোগ জনমিতিক পরিবর্তন ও স্থানীয় নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় তৈরি করেছে। তথ্য নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় প্রশাসন দুর্বলকরণ ও মতপ্রকাশ দমন উপত্যকাকে আরও অনিশ্চিত ও শাসন-অযোগ্য করেছে।
বহুবর্ষের নিরাপত্তা কড়াকড়ি, কারফিউ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা ও রাজনৈতিক নেতাদের আটকাবস্থার কারণে অবরুদ্ধতার ধারণা গভীর হয়েছে; পাঁচ বছর ধরে স্থানীয় নির্বাচন বন্ধ ছিল। এতে দিল্লির প্রতি সামান্য আস্থা অবশিষ্ট নেই; ফলস্বরূপ গোয়েন্দা তথ্যও কম মেলে, যা হয়তো সাম্প্রতিক হামলা ঠেকাতে পারত। মোদির কাশ্মীর নীতি তাঁর বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ—নিজেকে শক্ত নেতা হিসেবে তুলে ধরা, শত্রুর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধের অঙ্গীকার, এবং জাতীয় নিরাপত্তা সঙ্কটকে জনসমর্থন বাড়ানোর হাতিয়ার বানানো।
২০১৯-এর বিমান হামলা ও ২০১৬-এর তথাকথিত ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’কে দিল্লি সীমান্ত-পারের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নির্ণায়ক আঘাত বলে প্রচার করেছে, যদিও কৌশলগত সাফল্য সামান্য, রাজনৈতিক লাভই মুখ্য। প্রকাশ্য উৎস ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন ২০১৯-এর হামলায় জঙ্গি-ক্ষয় বা অবকাঠামো ধ্বংসের খুব কম প্রমাণ দেখায়। পরে পাকিস্তানের পাল্টাঘাতে ভারত একটি জেট হারায়, কিন্তু সৌভাগ্য ও বিদেশি মধ্যস্থতায় বড় সংঘর্ষ এড়াতে সক্ষম হয়। পাকিস্তানে কেউ নিহত না হওয়া এবং আটকা পাইলটের অক্ষত প্রত্যাবর্তন—দুটি দেশই নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে বিজয়ের গল্প বলে। ২০১৯-এর নির্বাচনপূর্ব মুহূর্তে এসব মোদিকে ‘পাকিস্তান-কে-শায়েস্তা-করা’ শক্ত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।
কঠোর দেখানো, কঠোর হওয়া
সাম্প্রতিক পাহেলগাম হামলা এ-কৌশলের ফাঁক উন্মোচন করেছে। সরকার বারবার দাবি করলেও যে আগের পদক্ষেপে নিবৃত্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে, বাস্তবে জঙ্গি তৎপরতা অব্যাহত এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থির। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের চক্র চলছেই, প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে পারমাণবিক শক্তিধর দু-পক্ষের উত্তেজনা বাড়ছে।
মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর স্মৃতিচারণে জানা যায়, ২০১৯-এর ভারতীয় বিমান হামলার পর দুই দেশ পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল; জরুরি মার্কিন হস্তক্ষেপে সঙ্কট ঠেকে। নির্বাচনী প্রচারে মোদি বারবার পারমাণবিক প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ভারত পাকিস্তানের ‘পারমাণবিক ভয়কে’ মিথ্যা প্রমাণ করেছে এবং ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র ‘দেওয়ালি’র পটকা নয়। এ-ঝাঁঝ দেখিয়ে তিনি কঠোরতার ভাবমূর্তি গড়েন।
কিন্তু সেই উচ্চকণ্ঠই মোদিকে কোণঠাসা করেছে। একবার দৃষ্টান্ত স্থাপনের পর তিনি প্রতিটি নতুন হামলায় শক্ত জবাব দিতে বাধ্য—শর্ত যাই হোক। পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার নিরন্তর জোর—জাতীয়তাবাদী মিডিয়ার উস্কানিতে—দীর্ঘমেয়াদি সংলাপের ক্ষেত্র সংকুচিত করে দিল্লিকে মূলত সামরিক চাপে ঠেলে দিচ্ছে।
সম্ভাব্য বিকল্পের মধ্যে সীমান্ত-পারের কামান বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, সন্দেহভাজন ঘাঁটিতে বিমান আঘাত কিংবা নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে সীমিত স্থল অভিযান রয়েছে—যেগুলো শক্ত বার্তা দেবে, তবে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পৌঁছানোর ঝুঁকি রাখে। পাল্টায় পাকিস্তানের গোলাবর্ষণ, বিমান হামলা বা বড় আকারের কনভেনশনাল অভিযানের আশঙ্কা থাকে; ভুল হিসাব বা দুর্ঘটনা পারমাণবিক তর্জন-গর্জন টানতে পারে।
পাকিস্তান বর্তমানে গভীর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সঙ্কটে; সেনাবাহিনী অজনপ্রিয় আর জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান কারাবন্দি। এর আগেও দেখা গেছে, কাশ্মীর ইস্যু উত্তেজনা সেনাবাহিনীর বৈধতা জোরদার করে। সেনাপ্রধান মুনিরের ওপরও বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরানোর চাপ আছে; তাঁর ‘কুইড প্রো কো প্লাস’ নীতি অনুযায়ী ভারতীয় হামলার পাল্টায় সমান বা তীব্র আঘাত হানার চেষ্টা হবে, যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণহীন উত্তেজনা ডেকে আনতে পারে।
পাকিস্তানের টালমাটাল অবস্থার মাঝেও তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধ শক্তিশালী, আর পেছনে রয়েছে চীন, যার কাশ্মীরে নিজস্ব স্বার্থ আছে। বহুবিলিয়ন ডলারের চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীর দিয়ে যায়। ২০১৯-এ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলে বেইজিং তীব্র আপত্তি জানায় এবং ২০২০-এর গ্রীষ্মে লাদাখে ভারতীয় এলাকায় সৈন্য ঢুকিয়ে সামরিক অচলাবস্থা সৃষ্টি করে। এতে ভারতের জন্য দুই-মুখো ফ্রন্টের আশঙ্কা যোগ হয় ও পাক সংঘাত-হিসাব জটিল হয়। রবিবার বেইজিং পাকিস্তানের ‘সার্বভৌমত্ব’ ও ‘যৌক্তিক নিরাপত্তা উদ্বেগ’-এর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে।
পাহেলগাম হামলার পরে ভারতের প্রতিক্রিয়ার বিকল্পগুলো সীমিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। শীর্ষ কোনো জঙ্গি বা পাক গোয়েন্দা-সামরিক কর্মকর্তার গোপন হত্যা জনমতকে শান্ত করবে না। সীমান্ত-পারের বিমান হামলা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ—মুনিরের অধীনে পাকিস্তান শক্ত জবাব দেবে। ভারতীয় বাহিনীর আধুনিকায়ন ধীর, আর পূর্বে চীনের সঙ্গে সংঘাতে তারা ব্যস্ত, ফলে দ্বিমুখো সংঘাত টেনে নেওয়া কঠিন।
পাকিস্তান সীমিত সংঘাতকে বিদেশি মধ্যস্থতায় ‘পরিকল্পিত উত্তেজনা’ হিসেবে কাজে লাগিয়ে অভ্যন্তরীণ সমর্থন আদায়ের পথ দেখতেও পারে। কিন্তু অর্থনীতি নাজুক, আর পশ্চিম সীমান্তে আফগানিস্তান-ইরান ইস্যু জটিল। চীনা স্বার্থ ভারতের হিসাব জটিল করে; ‘কুইড প্রো কো প্লাস’ দ্রুত উত্তেজনা বাড়াতে পারে।
সবচেয়ে ভয়ংকর হবে, যদি ভারতীয় হামলা পাকিস্তানের বড় পাল্টাঘাত উসকে দেয় এবং তা শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। উচ্চ সতর্কতা ও প্রবল জাতীয়তাবাদী আবেগের মাঝে ভুল হিসাব বা দুর্ঘটনাজনিত পারমাণবিক উত্তেজনার ঝুঁকি ধারণার চেয়েও বেশি। চরম অবস্থায় এটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নিতে পারে, পারমাণবিক সন্ত্রাসের ছায়া নামিয়ে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। ২০১৯-এর শান্ত সমাপ্তি পরেরবারেও পুনরাবৃত্ত হবে—এমন আশায় ভর করা যায় না।
যুদ্ধের যুগ
বিহারে মোদির সাম্প্রতিক কড়া বক্তৃতা কেবল সন্ত্রাসী হামলার জবাব নয়; এটি এক উচ্চঝুঁকির নাটকের সর্বশেষ অঙ্ক, যা অঞ্চলটিকে বিপজ্জনক স্পর্শকাতর বিন্দুতে এনে দাঁড় করিয়েছে। অভ্যন্তরীণ সঙ্কট ও বহির্চাপের ভেতরে কাশ্মীরের ট্র্যাজেডিকে রাজনৈতিক নাট্যমঞ্চ বানানোর লোভ এখন প্রবল। মোদি হয়তো ভুলে গেছেন, ২০২২-এ তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেছিলেন : ‘এটি যুদ্ধের যুগ নয়।’
অতীতে আন্তর্জাতিক শক্তি—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র—দক্ষিণ এশীয় সঙ্কটে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। ২০১৯-এ মার্কিন ও পশ্চিমা কূটনীতিকেরা দুই দেশকে বারবার সংযত হতে চাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ বিশ্ব ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে ক্লান্ত; হস্তক্ষেপের স্পৃহা কম। আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহার পাকিস্তানের কৌশলগত ওজন হ্রাস করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, ভারত-পাকিস্তান ‘যা-ই হোক একভাবে মিটিয়ে নেবে’, যা কূটনৈতিক শূন্যতা নির্দেশ করে।
বহিঃচাপের এই অভাব এবং মোদি-মুনির উভয়েরই ‘কঠোর’ চেহারা দেখানোর ঘরোয়া প্রয়োজন পরিস্থিতিকে অনন্যভাবে জ্বলন্ত করে তুলেছে। চার বছরের গুলি-বিরতি সামান্যই সান্ত্বনা দেয়; মূল বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি, আন্তঃআস্থা তৈরির প্রচেষ্টা নেই। যুদ্ধবিরতি নড়বড়ে ও উল্টে যেতে পারে। দুই নেতাই কঠোর ভঙ্গিতে অনুপ্রাণিত—সমঝোতার ক্ষেত্র সংকুচিত, মুখোমুখি সংঘর্ষের সম্ভাবনা বেড়েছে। ইচ্ছাকৃত হোক বা দুর্ঘটনাজনিত, যে-কোনো উত্তেজনা দ্রুত বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে, যার মাশুল গোটা দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বকে গুনতে হবে।
(লেখাটি ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিন থেকে অনূদিত)