সারাক্ষণ রিপোর্ট
বিশ্বজুড়ে ৫০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে অন্ত্রের ক্যান্সার বা কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি ‘নেচার’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এই বৃদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাব্য কারণ—শৈশবে অন্ত্রে একটি বিশেষ প্রজাতির ই. কোলি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।
গবেষণার মূল তথ্য
এই গবেষণায় ১১টি দেশের ৯৮১ জন ক্যান্সার রোগীর টিউমারের জেনেটিক তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা যায়, যারা ৪০ বছরের নিচে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অর্ধেকেরও বেশি টিউমারে কোলিব্যাকটিন নামের একটি বিষাক্ত মিউটেশনের চিহ্ন ছিল। কোলিব্যাকটিন হচ্ছে একটি বিষ, যা Escherichia coli (ই. কোলি)-এর নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতি তৈরি করে।
এই মিউটেশনগুলো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জিনে প্রথম ১০ বছরের মধ্যেই ক্ষতি করতে শুরু করে, অর্থাৎ এই সংক্রমণ শিশুকালেই ঘটছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
কোন দেশে বেশি ঝুঁকি?
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দেশে অকাল ক্যান্সারের হার বেশি, সেসব দেশের শিশুদের মলের নমুনায় কোলিব্যাকটিন উৎপাদনকারী ই. কোলি ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক বেশি। গবেষকরা ধারণা করছেন, সিজারিয়ান ডেলিভারির উচ্চ হার, অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং কিছু প্রোবায়োটিক পণ্যের মাধ্যমে এসব ব্যাকটেরিয়া শিশুদের অন্ত্রে বাসা বাঁধছে।
খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব
আরও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইবার কম এবং রেড মিট ও চিনি বেশি এমন পশ্চিমা ধাঁচের খাদ্যাভ্যাস কোলিব্যাকটিন বহনকারী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটাতে পারে। এমন খাদ্য অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে দুর্বল করে দেয়, ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের রক্ষা-প্রাচীর ভেঙে দিয়ে কোষে প্রবেশ করে ক্ষতি করে।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সম্ভাবনা
গবেষকরা বলছেন, এই মিউটেশনগুলো শনাক্ত করার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের আগেভাগেই চিহ্নিত করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মল পরীক্ষার মাধ্যমে কোলিব্যাকটিন-সৃষ্ট মিউটেশন শনাক্তের একটি টেস্ট চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়াও, ভবিষ্যতে সম্ভাব্য চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে:
- ই. কোলির বিষক্রিয়া রোধে ওষুধ,
- উপকারী ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য বাড়াতে কার্যকর প্রোবায়োটিক,
- বিশেষ ভাইরাস (ফেজ) ব্যবহার করে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস।
তবে এসব গবেষণা এখনো ল্যাব পর্যায়ে এবং মানুষের ওপর প্রয়োগের জন্য আরও সময় ও গবেষণা প্রয়োজন।
উপসংহার
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অকাল অন্ত্র ক্যান্সার নিয়ে বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়ায় বড় ধরনের অগ্রগতি। সময়মতো শনাক্তকরণ, সচেতনতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে ভবিষ্যতে এই বিপজ্জনক প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হতে পারে।