০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

ওয়ারেন বাফেট বিদায় নিলেও জাপানে বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্মুক্ত রাখলেন

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
  • 30

সারাক্ষণ রিপোর্ট

 বাফেটের বিদায় ও দীর্ঘ নেতৃত্বের ইতি টানা ঘোষণা

৯৪ বছর বয়সী ওয়ারেন বাফেট বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বার্ষিক সাধারণ সভায় জানিয়েছেন, তিনি চলতি বছর কোম্পানির প্রধান নির্বাহী পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। ১৯৬৫ সালে একটি টেক্সটাইল কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করা বার্কশায়ারের শেয়ারদর বাফেটের অধীনে প্রায় ৬৭,০০০ গুণ বেড়েছে। বার্ষিক রিটার্ন দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ, যা একই সময়ে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের দ্বিগুণ।

জাপানে বিনিয়োগ: একটি কৌশলগত পদক্ষেপ

যদিও বার্কশায়ারের অধিকাংশ বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক, তবে ২০১৯ সাল থেকে পাঁচটি প্রধান জাপানি ট্রেডিং হাউজ—মিতসুবিশি, মিতসুই, সুমিতোমো, ইতোচু ও মারুবেনিতে বিনিয়োগ শুরু করে। এই কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বিস্তৃত জ্বালানি, ইস্পাত, মোটরযান ও খাদ্যখাতে। এই বিনিয়োগের জন্য ইয়েনে ঋণ নেওয়া হয়, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্রথমবারের মতো এমন একটি উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত।

লম্বা মেয়াদে প্রতিশ্রুতি ও সম্ভাবনার ইঙ্গিত

বাফেট স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “পরবর্তী ৫০ বছরেও আমরা এই শেয়ারগুলো বিক্রি করার কথা ভাবব না।” বর্তমানে এই পাঁচটি জাপানি কোম্পানির বাজারমূল্য প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার হলেও, বাফেট বলেন, “আমি ২০ বিলিয়নের চেয়ে ১০০ বিলিয়ন পছন্দ করব,” যা ভবিষ্যতে জাপানে আরও বিনিয়োগের ইঙ্গিত দেয়।

নতুন নেতৃত্বে বার্কশায়ার: গ্রেগ অ্যাবেলের আবির্ভাব

বাফেটের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান গ্রেগ অ্যাবেল। তিনি ইতোমধ্যেই বার্কশায়ারের বিদ্যুৎ ও রেল খাতসহ বিমা ছাড়া অন্য ব্যবসাগুলোর দায়িত্বে রয়েছেন। মূল বিনিয়োগ সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতে অ্যাবেল নেবেন এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ দেখভাল করবেন টড কম্বস ও টেড ওয়েশলার।

বিনিয়োগ দর্শনের বিবর্তন: ‘সিগার বাট’ থেকে ‘ব্লু-চিপ’ কোম্পানি

১৯৫০-এর দশক থেকে ৭০-এর দশক পর্যন্ত বাফেট মূলত দুর্বল, কিন্তু কম দামে বিক্রি হওয়া কোম্পানিতে অল্পমেয়াদি লাভের জন্য বিনিয়োগ করতেন—যাকে তিনি “সিগার বাট” কৌশল বলতেন। পরে চার্লি মাঙ্গার, যিনি ২০২৩ সালে মারা যান, এটিকে “খারাপ অভ্যাস” বলে অভিহিত করেন। ১৯৭২ সালে ‘সিজ ক্যান্ডিস’-এ বিনিয়োগ ছিল বাফেটের দৃষ্টিভঙ্গির মোড় ঘোরানো একটি পদক্ষেপ।

এরপর থেকে তিনি এমন কোম্পানি বেছে নেন যাদের ব্র্যান্ড শক্তিশালী, ব্যবসায়িক মডেল টেকসই এবং যাদের প্রতিযোগীদের ঠেকাতে একটি ‘মোয়াট’ রয়েছে। যেমন, কোকা-কোলা ও অ্যাপল। যদিও ২০২৩-২৪ সালে অ্যাপলে কিছু শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে, তবুও এটি বার্কশায়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ রয়ে গেছে।

বাফেটকে ঘিরে প্রশংসা ও আবেগ

অ্যাপল সিইও টিম কুক বলেন, “ওয়ারেনের মতো আর কেউ নেই। আমি তার প্রজ্ঞা থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি।” কুক এক্স (সাবেক টুইটার)–এ বলেন, “ওয়ারেনকে জানা আমার জীবনের অন্যতম সৌভাগ্য।”

 ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ও নতুন অধ্যায়ের সূচনা

নতুন নেতৃত্বে কীভাবে বার্কশায়ার পরিচালিত হবে, এখনো তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। বাফেট ভবিষ্যতে বিনিয়োগ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন কিনা, তাও নিশ্চিত নয়। বিমা খাতের নেতৃত্বে থাকা ভাইস চেয়ারম্যান অজিত জৈনের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত।

এলআরটি ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা লুকাজ টোমিস্কি বলেন, “বাফেটের জীবিত অবস্থায়ই গ্রেগ অ্যাবেলকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।”

ওয়ারেন বাফেট বিদায় নিলেও জাপানে বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্মুক্ত রাখলেন

১০:০০:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

 বাফেটের বিদায় ও দীর্ঘ নেতৃত্বের ইতি টানা ঘোষণা

৯৪ বছর বয়সী ওয়ারেন বাফেট বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বার্ষিক সাধারণ সভায় জানিয়েছেন, তিনি চলতি বছর কোম্পানির প্রধান নির্বাহী পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। ১৯৬৫ সালে একটি টেক্সটাইল কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করা বার্কশায়ারের শেয়ারদর বাফেটের অধীনে প্রায় ৬৭,০০০ গুণ বেড়েছে। বার্ষিক রিটার্ন দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ, যা একই সময়ে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের দ্বিগুণ।

জাপানে বিনিয়োগ: একটি কৌশলগত পদক্ষেপ

যদিও বার্কশায়ারের অধিকাংশ বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক, তবে ২০১৯ সাল থেকে পাঁচটি প্রধান জাপানি ট্রেডিং হাউজ—মিতসুবিশি, মিতসুই, সুমিতোমো, ইতোচু ও মারুবেনিতে বিনিয়োগ শুরু করে। এই কোম্পানিগুলোর ব্যবসা বিস্তৃত জ্বালানি, ইস্পাত, মোটরযান ও খাদ্যখাতে। এই বিনিয়োগের জন্য ইয়েনে ঋণ নেওয়া হয়, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্রথমবারের মতো এমন একটি উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত।

লম্বা মেয়াদে প্রতিশ্রুতি ও সম্ভাবনার ইঙ্গিত

বাফেট স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “পরবর্তী ৫০ বছরেও আমরা এই শেয়ারগুলো বিক্রি করার কথা ভাবব না।” বর্তমানে এই পাঁচটি জাপানি কোম্পানির বাজারমূল্য প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার হলেও, বাফেট বলেন, “আমি ২০ বিলিয়নের চেয়ে ১০০ বিলিয়ন পছন্দ করব,” যা ভবিষ্যতে জাপানে আরও বিনিয়োগের ইঙ্গিত দেয়।

নতুন নেতৃত্বে বার্কশায়ার: গ্রেগ অ্যাবেলের আবির্ভাব

বাফেটের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান গ্রেগ অ্যাবেল। তিনি ইতোমধ্যেই বার্কশায়ারের বিদ্যুৎ ও রেল খাতসহ বিমা ছাড়া অন্য ব্যবসাগুলোর দায়িত্বে রয়েছেন। মূল বিনিয়োগ সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতে অ্যাবেল নেবেন এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ দেখভাল করবেন টড কম্বস ও টেড ওয়েশলার।

বিনিয়োগ দর্শনের বিবর্তন: ‘সিগার বাট’ থেকে ‘ব্লু-চিপ’ কোম্পানি

১৯৫০-এর দশক থেকে ৭০-এর দশক পর্যন্ত বাফেট মূলত দুর্বল, কিন্তু কম দামে বিক্রি হওয়া কোম্পানিতে অল্পমেয়াদি লাভের জন্য বিনিয়োগ করতেন—যাকে তিনি “সিগার বাট” কৌশল বলতেন। পরে চার্লি মাঙ্গার, যিনি ২০২৩ সালে মারা যান, এটিকে “খারাপ অভ্যাস” বলে অভিহিত করেন। ১৯৭২ সালে ‘সিজ ক্যান্ডিস’-এ বিনিয়োগ ছিল বাফেটের দৃষ্টিভঙ্গির মোড় ঘোরানো একটি পদক্ষেপ।

এরপর থেকে তিনি এমন কোম্পানি বেছে নেন যাদের ব্র্যান্ড শক্তিশালী, ব্যবসায়িক মডেল টেকসই এবং যাদের প্রতিযোগীদের ঠেকাতে একটি ‘মোয়াট’ রয়েছে। যেমন, কোকা-কোলা ও অ্যাপল। যদিও ২০২৩-২৪ সালে অ্যাপলে কিছু শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে, তবুও এটি বার্কশায়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ রয়ে গেছে।

বাফেটকে ঘিরে প্রশংসা ও আবেগ

অ্যাপল সিইও টিম কুক বলেন, “ওয়ারেনের মতো আর কেউ নেই। আমি তার প্রজ্ঞা থেকে অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি।” কুক এক্স (সাবেক টুইটার)–এ বলেন, “ওয়ারেনকে জানা আমার জীবনের অন্যতম সৌভাগ্য।”

 ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ও নতুন অধ্যায়ের সূচনা

নতুন নেতৃত্বে কীভাবে বার্কশায়ার পরিচালিত হবে, এখনো তা পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। বাফেট ভবিষ্যতে বিনিয়োগ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন কিনা, তাও নিশ্চিত নয়। বিমা খাতের নেতৃত্বে থাকা ভাইস চেয়ারম্যান অজিত জৈনের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত।

এলআরটি ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা লুকাজ টোমিস্কি বলেন, “বাফেটের জীবিত অবস্থায়ই গ্রেগ অ্যাবেলকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।”