১১:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

অনলাইন জুয়ায় ভাঙনের গল্প ঘরে ঘরে (পর্ব ২)

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
  • 53

সারাক্ষণ রিপোর্ট

পরিবারে নেমে আসছে দুর্যোগ

রংপুরের দিনমজুর শরিফুল ইসলাম অনলাইন বাজিতে প্রথম দিকে কিছু টাকা লাভ করেছিলেন। এরপর তার দৈনিক আয়ের সিংহভাগই চলে যেতে থাকে জুয়ার পেছনে। তার স্ত্রী জানান, “সে এখন সংসারের খরচ দেয় না। ঘর বিক্রি করেও জুয়াতে বাজি ধরেছে। দুই সন্তানের খাবার জোটানো মুশকিল হয়ে গেছে।”
এ ধরনের অসংখ্য পরিবার আজ আর্থিক অনিশ্চয়তা, পারস্পরিক অবিশ্বাস ও বিচ্ছিন্নতার শিকার।

তরুণদের অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য পেয়েছে, কিছু তরুণ চুরি, ছিনতাই, প্রতারণা বা পাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কেবল অনলাইন জুয়ায় অর্থ জোগাড় করার জন্য।

একটি থানার ওসি বলেন, “যেসব তরুণ আগে মাদকের সঙ্গে যুক্ত ছিল, এখন তাদের একটা বড় অংশ অনলাইন জুয়ায় যুক্ত হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাদক ব্যবসায়ের আয়ের অর্থও জুয়ায় খরচ করছে।”

দাম্পত্য কলহবিবাহ বিচ্ছেদ ও মানসিক রোগ

অনলাইন জুয়া দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ ও পারিবারিক কলহ সৃষ্টি করে। অনেক নারী অভিযোগ করছেন, স্বামী অনলাইন বাজিতে জড়িয়ে পড়ার ফলে তাদের সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে।

একজন নারী বলেন, “আমার স্বামী রাতে ঘুমায় না, শুধু মোবাইলে বাজি ধরে। তার সন্দেহ হচ্ছে আমি তাকে বাঁধা দিচ্ছি, তাই মারধরও করে। এখন আমি বাবার বাড়িতে। ডিভোর্স দেব কিনা সেই বিবেচনায় আছি।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগবিদ ডা. শামীম আহমেদ বলেন,
“অনলাইন জুয়া এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক আসক্তি, যার কারণে ব্যক্তি হতাশা, মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা এবং আত্মহত্যার চিন্তায় আক্রান্ত হতে পারেন।”

সামাজিক ও ধর্মীয় পরিণতি

অনলাইন জুয়া সামাজিক মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন ও ধর্মীয় নীতিবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম বলেন,
“কিছু যুবক এতটাই আসক্ত হয়ে গেছে যে তারা নামাজ, রোজা, এমনকি ঈদের জামাতেও আসে না। দিন-রাত ফোনে ব্যস্ত থাকে বাজির খোঁজে।”

বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা

সমাজবিজ্ঞানী ড. জুবায়ের খান বলেন,
“এই পরিস্থিতি সামাজিক মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। যদি দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে আগামী প্রজন্ম মূল্যবোধহীন, নৈতিকভাবে ভঙ্গুর ও অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠবে।”

অনলাইন জুয়ায় ভাঙনের গল্প ঘরে ঘরে (পর্ব ২)

০৭:০০:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

পরিবারে নেমে আসছে দুর্যোগ

রংপুরের দিনমজুর শরিফুল ইসলাম অনলাইন বাজিতে প্রথম দিকে কিছু টাকা লাভ করেছিলেন। এরপর তার দৈনিক আয়ের সিংহভাগই চলে যেতে থাকে জুয়ার পেছনে। তার স্ত্রী জানান, “সে এখন সংসারের খরচ দেয় না। ঘর বিক্রি করেও জুয়াতে বাজি ধরেছে। দুই সন্তানের খাবার জোটানো মুশকিল হয়ে গেছে।”
এ ধরনের অসংখ্য পরিবার আজ আর্থিক অনিশ্চয়তা, পারস্পরিক অবিশ্বাস ও বিচ্ছিন্নতার শিকার।

তরুণদের অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য পেয়েছে, কিছু তরুণ চুরি, ছিনতাই, প্রতারণা বা পাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কেবল অনলাইন জুয়ায় অর্থ জোগাড় করার জন্য।

একটি থানার ওসি বলেন, “যেসব তরুণ আগে মাদকের সঙ্গে যুক্ত ছিল, এখন তাদের একটা বড় অংশ অনলাইন জুয়ায় যুক্ত হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাদক ব্যবসায়ের আয়ের অর্থও জুয়ায় খরচ করছে।”

দাম্পত্য কলহবিবাহ বিচ্ছেদ ও মানসিক রোগ

অনলাইন জুয়া দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ ও পারিবারিক কলহ সৃষ্টি করে। অনেক নারী অভিযোগ করছেন, স্বামী অনলাইন বাজিতে জড়িয়ে পড়ার ফলে তাদের সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে।

একজন নারী বলেন, “আমার স্বামী রাতে ঘুমায় না, শুধু মোবাইলে বাজি ধরে। তার সন্দেহ হচ্ছে আমি তাকে বাঁধা দিচ্ছি, তাই মারধরও করে। এখন আমি বাবার বাড়িতে। ডিভোর্স দেব কিনা সেই বিবেচনায় আছি।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগবিদ ডা. শামীম আহমেদ বলেন,
“অনলাইন জুয়া এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক আসক্তি, যার কারণে ব্যক্তি হতাশা, মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা এবং আত্মহত্যার চিন্তায় আক্রান্ত হতে পারেন।”

সামাজিক ও ধর্মীয় পরিণতি

অনলাইন জুয়া সামাজিক মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন ও ধর্মীয় নীতিবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম বলেন,
“কিছু যুবক এতটাই আসক্ত হয়ে গেছে যে তারা নামাজ, রোজা, এমনকি ঈদের জামাতেও আসে না। দিন-রাত ফোনে ব্যস্ত থাকে বাজির খোঁজে।”

বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তা

সমাজবিজ্ঞানী ড. জুবায়ের খান বলেন,
“এই পরিস্থিতি সামাজিক মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। যদি দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে আগামী প্রজন্ম মূল্যবোধহীন, নৈতিকভাবে ভঙ্গুর ও অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠবে।”