০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

অনলাইন জুয়ার পেছনে দেশী বিদেশী চক্র (পর্ব ৩)

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • 61

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বিশাল চক্রের জাল: দেশি-বিদেশি পরিচালনা

অনলাইন জুয়ার পেছনে রয়েছে দেশি-বিদেশি মাফিয়া চক্র। এরা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন ফেক ওয়েবসাইট, এন্ড্রয়েড অ্যাপ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বাজির প্ল্যাটফর্ম চালায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং ফিলিপাইন থেকে পরিচালিত কিছু সাইট বাংলাদেশের তরুণদের বিশেষভাবে লক্ষ্য করে কাজ করছে।

বিভিন্ন জুয়া সাইটের নাম যেমন “Babu88”, “1xBet”, “Betwinner”, “Mostbet” ইত্যাদি, খোলামেলা অ্যাড, ফ্রি বোনাস ও দ্রুত উত্তোলনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আকৃষ্ট করে।

বিনামূল্যে অ্যাপঅথচ কোটি টাকার লেনদেন

এই চক্রগুলো Play Store, Telegram চ্যানেল, WhatsApp গ্রুপ, এমনকি TikTok ও Facebook পেজের মাধ্যমে সহজে অ্যাপ ছড়িয়ে দেয়।
যে অ্যাপগুলো Play Store থেকে মুছে ফেলা হয়, তা আবার APK ফাইল আকারে গ্রাহকদের ফোনে ইনস্টল করিয়ে দেওয়া হয়।

এইসব অ্যাপে অবৈধ পেমেন্ট গেটওয়ে সংযুক্ত থাকে, যেখানে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ), ক্রিপ্টোকারেন্সি, এমনকি আন্তর্জাতিক ভিসা কার্ড ব্যবহার করেও লেনদেন সম্ভব হয়। একেকটি সাইটে দিনে লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুরছে।

বাংলাদেশি এজেন্টদের ভূমিকা

এই চক্রগুলো বাংলাদেশের ভেতরে ‘এজেন্ট’ নিয়োগ করে। তাদের কাজ হলো—

  • অ্যাপ ডাউনলোডে উৎসাহ দেওয়া
  • প্রথম ইনভেস্টমেন্টে কমিশন পাওয়া
  • নিয়মিত খেলার জন্য ‘রিওয়ার্ড’ দেওয়া
  • লোকাল পেমেন্ট সিস্টেম চালু রাখা

বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এইসব এজেন্টদের অনেকেই রেস্টুরেন্ট, শো-রুম বা মোবাইল শপের আড়ালে কাজ করছেন। কিছু এলাকায় তারা “ভিআইপি খেলা” নামে পরিচিত।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবন্ধকতা

বেশিরভাগ ওয়েবসাইট দেশের বাইরে হোস্ট করা হওয়ায় পুলিশ বা বিটিআরসির পক্ষে তা বন্ধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। VPN ব্যবহার করে সহজেই দেশের ভিতরে নিষিদ্ধ হওয়া সাইটে প্রবেশ করা যায়।

পুলিশের একটি ইউনিটের কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী,
“এই চক্রগুলো প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত। তারা দ্রুত ওয়েবসাইট বদলায়, নতুন ডোমেইন খোলে, এবং অ্যাপের আপডেট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দেয়।”

অর্থ পাচারের সরাসরি মাধ্যম

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) এর তথ্য মতে, কিছু অনলাইন জুয়ার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি, গিফট কার্ড, এবং অনলাইন মানি ট্রান্সফার সিস্টেমের মাধ্যমে এই লেনদেন গোপনে করা হয়।

একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “প্রথমে বড় অঙ্কের জেতার আশ্বাস দিয়ে ব্যবহারকারীকে অর্থ জমা করানো হয়, এরপর সেই অর্থ সরাসরি দেশান্তরে চলে যায়।”

বিশেষজ্ঞ মতামত: একে সাইবার অপরাধ হিসেবে দেখা দরকার

সাইবার অপরাধ বিশ্লেষক ইঞ্জিনিয়ার সালমান রহমান বলেন,
“এই জিনিসটা এখন শুধু জুয়া নয়—এটা অর্থপাচার, সাইবার ফ্রড এবং মানসিক নির্যাতনের মিলিত রূপ। এটিকে সাইবার অপরাধ আইনে বিচার না করলে সমস্যার গভীরতা বাড়তেই থাকবে।”

অনলাইন জুয়ার পেছনে দেশী বিদেশী চক্র (পর্ব ৩)

০৭:০০:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বিশাল চক্রের জাল: দেশি-বিদেশি পরিচালনা

অনলাইন জুয়ার পেছনে রয়েছে দেশি-বিদেশি মাফিয়া চক্র। এরা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন ফেক ওয়েবসাইট, এন্ড্রয়েড অ্যাপ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বাজির প্ল্যাটফর্ম চালায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং ফিলিপাইন থেকে পরিচালিত কিছু সাইট বাংলাদেশের তরুণদের বিশেষভাবে লক্ষ্য করে কাজ করছে।

বিভিন্ন জুয়া সাইটের নাম যেমন “Babu88”, “1xBet”, “Betwinner”, “Mostbet” ইত্যাদি, খোলামেলা অ্যাড, ফ্রি বোনাস ও দ্রুত উত্তোলনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আকৃষ্ট করে।

বিনামূল্যে অ্যাপঅথচ কোটি টাকার লেনদেন

এই চক্রগুলো Play Store, Telegram চ্যানেল, WhatsApp গ্রুপ, এমনকি TikTok ও Facebook পেজের মাধ্যমে সহজে অ্যাপ ছড়িয়ে দেয়।
যে অ্যাপগুলো Play Store থেকে মুছে ফেলা হয়, তা আবার APK ফাইল আকারে গ্রাহকদের ফোনে ইনস্টল করিয়ে দেওয়া হয়।

এইসব অ্যাপে অবৈধ পেমেন্ট গেটওয়ে সংযুক্ত থাকে, যেখানে মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ), ক্রিপ্টোকারেন্সি, এমনকি আন্তর্জাতিক ভিসা কার্ড ব্যবহার করেও লেনদেন সম্ভব হয়। একেকটি সাইটে দিনে লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুরছে।

বাংলাদেশি এজেন্টদের ভূমিকা

এই চক্রগুলো বাংলাদেশের ভেতরে ‘এজেন্ট’ নিয়োগ করে। তাদের কাজ হলো—

  • অ্যাপ ডাউনলোডে উৎসাহ দেওয়া
  • প্রথম ইনভেস্টমেন্টে কমিশন পাওয়া
  • নিয়মিত খেলার জন্য ‘রিওয়ার্ড’ দেওয়া
  • লোকাল পেমেন্ট সিস্টেম চালু রাখা

বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এইসব এজেন্টদের অনেকেই রেস্টুরেন্ট, শো-রুম বা মোবাইল শপের আড়ালে কাজ করছেন। কিছু এলাকায় তারা “ভিআইপি খেলা” নামে পরিচিত।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবন্ধকতা

বেশিরভাগ ওয়েবসাইট দেশের বাইরে হোস্ট করা হওয়ায় পুলিশ বা বিটিআরসির পক্ষে তা বন্ধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। VPN ব্যবহার করে সহজেই দেশের ভিতরে নিষিদ্ধ হওয়া সাইটে প্রবেশ করা যায়।

পুলিশের একটি ইউনিটের কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী,
“এই চক্রগুলো প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত। তারা দ্রুত ওয়েবসাইট বদলায়, নতুন ডোমেইন খোলে, এবং অ্যাপের আপডেট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দেয়।”

অর্থ পাচারের সরাসরি মাধ্যম

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) এর তথ্য মতে, কিছু অনলাইন জুয়ার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি, গিফট কার্ড, এবং অনলাইন মানি ট্রান্সফার সিস্টেমের মাধ্যমে এই লেনদেন গোপনে করা হয়।

একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “প্রথমে বড় অঙ্কের জেতার আশ্বাস দিয়ে ব্যবহারকারীকে অর্থ জমা করানো হয়, এরপর সেই অর্থ সরাসরি দেশান্তরে চলে যায়।”

বিশেষজ্ঞ মতামত: একে সাইবার অপরাধ হিসেবে দেখা দরকার

সাইবার অপরাধ বিশ্লেষক ইঞ্জিনিয়ার সালমান রহমান বলেন,
“এই জিনিসটা এখন শুধু জুয়া নয়—এটা অর্থপাচার, সাইবার ফ্রড এবং মানসিক নির্যাতনের মিলিত রূপ। এটিকে সাইবার অপরাধ আইনে বিচার না করলে সমস্যার গভীরতা বাড়তেই থাকবে।”