সারাক্ষণ রিপোর্ট
আর্থিক সংকটে নিমজ্জিত কৃষক পরিবার
বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের কৃষক পরিবারগুলো বর্তমানে চরম আর্থিক সংকটে দিন পার করছে। ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, কৃষি সহায়তার অভাব এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা—এই সমস্ত কারণ মিলে কৃষকদের জীবিকা এখন প্রায় অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
ফসল ফলালেও নেই নিশ্চয়তা
রংপুর, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ ও মাদারীপুরের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধান, পাট, আলু বা সবজির উৎপাদনে তারা আগের মতো পরিশ্রম করলেও বাজারে গিয়ে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না। অনেক ক্ষেত্রেই মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
একজন কৃষক বলেন, “১২০০ টাকায় সার কিনি, ১৫০০ টাকায় কীটনাশক। কিন্তু বাজারে ধান বিক্রি করি ৯০০ টাকায় মণ। কীভাবে চলবো?”
ধার-দেনা আর এনজিও ঋণের চক্র
অর্থ সংকটে পড়ে অনেক কৃষক এনজিও বা মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু ফসল থেকে প্রত্যাশিত আয় না হওয়ায় তারা এক ঋণ শোধ করতে গিয়ে আরেক ঋণের ফাঁদে পড়ছেন। এতে পরিবারে অভাব-অনটন ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কুড়িগ্রামের এক কৃষাণী জানান, “ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। এখন ওরা সপ্তাহে সপ্তাহে কিস্তির জন্য চাপ দেয়। ঘরে খাবার নেই, কী দেব?”
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় বন্ধ
এই টাকার সংকটের ফলে কৃষক পরিবারগুলো প্রথমে কাটা পড়ছে চিকিৎসা ও শিক্ষার খরচে। শিশুদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে, বৃদ্ধদের চিকিৎসা বন্ধ। অনেক মা-বাবা সন্তানদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন বিসর্জন দিচ্ছেন শুধুমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর জন্য।
সরকারের সহায়তা সীমিত, অনেকেই পাচ্ছেন না
যদিও সরকার কৃষকদের জন্য প্রণোদনা, কৃষি ঋণ ও ভর্তুকি ঘোষণা করেছে, কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে অনেক কৃষক বলছেন তারা এসব সুবিধা পান না। প্রকৃত কৃষকের তালিকা না থাকা, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব অনেককে বাদ রাখছে।
বিশ্লেষক মত: দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রয়োজন
কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কৃষক পরিবারের আর্থিক সংকট কাটাতে হলে উৎপাদন খরচ হ্রাস, ন্যায্য দাম নিশ্চিতকরণ, সরাসরি কৃষকদের কাছে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। একই সঙ্গে ঋণ সহায়তায় সুদহীন বা স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
Leave a Reply