০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

সরকার চায় বলেই চিন্ময় কারাবন্দি?

  • Sarakhon Report
  • ০৫:০১:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
  • 38

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কি সরকারের ইচ্ছায় কারাগারে থাকতে হচ্ছে? মামলার ধরনে এমন প্রশ্ন উঠছে৷ চিন্তক ফরহাদ মজহার মনে করেন, বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রকে ‘ভুয়া‘ মামলায় পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে৷

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্যের এ অভিযোগের জবাবে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলি বলেন,” আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে কাউকে আইনজীবী হতে বাধা দেইনি। কোনো লিখিত নাই। তবে যেহেতু একজন আইনজীবী নিহত হয়েছেন, তাই আইনজীবীরা আবেগে কেউ চিন্ময়ের পক্ষে যাচ্ছেন না। আর ৮২ জন আইনজীবীকে অন্য মামলায় আসামি করা হয়েছে। ”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,” চিন্ময় দাসকে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো একান্তই রাষ্ট্রের বিষয়। রাষ্ট্র চেয়েছে, গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।” ভার্চুয়াল শুনানির ব্যাপারে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলি বলেন, “চিন্ময়কে আদালতে নিলে ঝামেলা হয়। তাই ভার্চুয়াল শুনানি হয়েছে।”

‘এখানে আইন, সংবিধান কিছুই মানা হচ্ছে না’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন,”এটা পাবলিক নয়, সরকার তাকে (চিন্ময়) মামলায় ঢুকাচ্ছে। সরকার চাইছে তাকে কারাগারে রাখতে, তাই কারাগারে রাখছে। এখানে আইন, সংবিধানের প্রশ্ন তুলে কী লাভ হবে? যারা চিন্ময়ের বিরুদ্ধে, তাদের প্রতি সরকারের দুর্বলতা আছে। সব মুসলমান কিন্তু এটা চাইছে না। আমিও তো একজন মুসলমান। আমি তো এটা চাই না। যে বিচারপতি তাকে জামিন দিয়েছেন, তিনি একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম।”

তার কথা, ‘‘তাকে নতুন মামলায় জড়ানো হলো, হত্যা মামলায়। এক গ্রুপ দাবি করলো আর তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো। এখন যেটা হলো, এই মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে আগে জামিন চাইতে হবে। সেখানে জামিন না পেলে উচ্চ আদালতে যাওয়া যাবে। কিন্তু চট্টগ্রামের আদালতে তো কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারবে না। ফলে তার জামিন কীভাবে হবে বলা মুশকিল।”

“আসলে সরকার তাকে কারাগারে রাখতে চাইছে। কোনো এক গোষ্ঠীকে খুশি করতে এটা করা হচ্ছে। এখানে আইন, সংবিধান কিছু মানা হচ্ছে না,” বলেন তিনি।

‘চিন্ময়ের বিরুদ্ধে দুইটি মামলাই ভুয়া’

চিন্তক ফরহাদ মজহার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে কারাবন্দি রাখার বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছেন৷ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে একবার সরাসরিও এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন৷ নতুন মামলায় চিন্ময়কে আটক দেখানোর পর ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন,” চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহেরমামলা ভুয়া। এর কোনো ভিত্তি নাই। এই মামলাটি করেছেন বিএনপির একজন সদস্য। তাকে বিএনপি দল থেকে বরখাস্ত করেছে, কিন্তু মামলা তোলেনি। মামলাটি ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। কে একজন গেরুয়া পতাকা উড়িয়েছে এটার জন্য তো তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা না। যে উড়িয়েছে, তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে বড়জোর। আর পতাকা ওড়ানো হয়েছিল উনি যেখানে বক্তৃতা দেন, সেখান থেকে বেশ দূরে।  দ্বিতীয়ত, আপনি যখন গণঅভ্যুত্থানের পরে ব্রিটিশ কলোনিয়াল রাষ্ট্রদ্রোহের আইনে মামলা করবেন, সেটা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী। ওই আইনটি একেবারেই নাগরিক অধিকারের বিরোধী। গণ অভ্যুত্থানের পর নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া হয়েছে। তারা তো তাদের অধিকারের কথা বলতে পারেন। আর জামিন পাওয়া তো অধিকার।”

তিনি মনে করেন, ” যারা বাংলাদেশের ভিতরে দিল্লির হিন্দুত্ববাদী স্বার্থ রক্ষা করে, তারা পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা লাগাবার জন্য এটা করছে।আজকে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।”

“পরের যে হত্যা মামলা, এজাহারে কি তার নাম আছে? এজাহারে নাম না থাকার পরও তাকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা অযৌক্তিক। তিনি তো ঘটনার সময় পুলিশ কাস্টডিতে ছিলেন,” বলেন তিনি।

ফরহাদ মজহার আরো বলেন,”বাংলাদেশের নতুন যে আইজিপি, তার সঙ্গে আইন উপদেষ্টা, তাদের তো বোঝা উচিত এটা দিল্লির স্বার্থের পক্ষে যাচ্ছে। তারা কি দিল্লির পক্ষে কাজ করছেন, যাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিপন্ন হয়ে পড়ে? এতে সরকার দুর্বল হয়।”

ডয়চে ভেলে বাংলা

 

সরকার চায় বলেই চিন্ময় কারাবন্দি?

০৫:০১:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কি সরকারের ইচ্ছায় কারাগারে থাকতে হচ্ছে? মামলার ধরনে এমন প্রশ্ন উঠছে৷ চিন্তক ফরহাদ মজহার মনে করেন, বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্রকে ‘ভুয়া‘ মামলায় পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে৷

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্যের এ অভিযোগের জবাবে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলি বলেন,” আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে কাউকে আইনজীবী হতে বাধা দেইনি। কোনো লিখিত নাই। তবে যেহেতু একজন আইনজীবী নিহত হয়েছেন, তাই আইনজীবীরা আবেগে কেউ চিন্ময়ের পক্ষে যাচ্ছেন না। আর ৮২ জন আইনজীবীকে অন্য মামলায় আসামি করা হয়েছে। ”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,” চিন্ময় দাসকে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো একান্তই রাষ্ট্রের বিষয়। রাষ্ট্র চেয়েছে, গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।” ভার্চুয়াল শুনানির ব্যাপারে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আলি বলেন, “চিন্ময়কে আদালতে নিলে ঝামেলা হয়। তাই ভার্চুয়াল শুনানি হয়েছে।”

‘এখানে আইন, সংবিধান কিছুই মানা হচ্ছে না’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন,”এটা পাবলিক নয়, সরকার তাকে (চিন্ময়) মামলায় ঢুকাচ্ছে। সরকার চাইছে তাকে কারাগারে রাখতে, তাই কারাগারে রাখছে। এখানে আইন, সংবিধানের প্রশ্ন তুলে কী লাভ হবে? যারা চিন্ময়ের বিরুদ্ধে, তাদের প্রতি সরকারের দুর্বলতা আছে। সব মুসলমান কিন্তু এটা চাইছে না। আমিও তো একজন মুসলমান। আমি তো এটা চাই না। যে বিচারপতি তাকে জামিন দিয়েছেন, তিনি একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম।”

তার কথা, ‘‘তাকে নতুন মামলায় জড়ানো হলো, হত্যা মামলায়। এক গ্রুপ দাবি করলো আর তাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো। এখন যেটা হলো, এই মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে আগে জামিন চাইতে হবে। সেখানে জামিন না পেলে উচ্চ আদালতে যাওয়া যাবে। কিন্তু চট্টগ্রামের আদালতে তো কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারবে না। ফলে তার জামিন কীভাবে হবে বলা মুশকিল।”

“আসলে সরকার তাকে কারাগারে রাখতে চাইছে। কোনো এক গোষ্ঠীকে খুশি করতে এটা করা হচ্ছে। এখানে আইন, সংবিধান কিছু মানা হচ্ছে না,” বলেন তিনি।

‘চিন্ময়ের বিরুদ্ধে দুইটি মামলাই ভুয়া’

চিন্তক ফরহাদ মজহার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে কারাবন্দি রাখার বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছেন৷ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে একবার সরাসরিও এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন৷ নতুন মামলায় চিন্ময়কে আটক দেখানোর পর ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন,” চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহেরমামলা ভুয়া। এর কোনো ভিত্তি নাই। এই মামলাটি করেছেন বিএনপির একজন সদস্য। তাকে বিএনপি দল থেকে বরখাস্ত করেছে, কিন্তু মামলা তোলেনি। মামলাটি ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। কে একজন গেরুয়া পতাকা উড়িয়েছে এটার জন্য তো তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা না। যে উড়িয়েছে, তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে বড়জোর। আর পতাকা ওড়ানো হয়েছিল উনি যেখানে বক্তৃতা দেন, সেখান থেকে বেশ দূরে।  দ্বিতীয়ত, আপনি যখন গণঅভ্যুত্থানের পরে ব্রিটিশ কলোনিয়াল রাষ্ট্রদ্রোহের আইনে মামলা করবেন, সেটা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী। ওই আইনটি একেবারেই নাগরিক অধিকারের বিরোধী। গণ অভ্যুত্থানের পর নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া হয়েছে। তারা তো তাদের অধিকারের কথা বলতে পারেন। আর জামিন পাওয়া তো অধিকার।”

তিনি মনে করেন, ” যারা বাংলাদেশের ভিতরে দিল্লির হিন্দুত্ববাদী স্বার্থ রক্ষা করে, তারা পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা লাগাবার জন্য এটা করছে।আজকে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।”

“পরের যে হত্যা মামলা, এজাহারে কি তার নাম আছে? এজাহারে নাম না থাকার পরও তাকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা অযৌক্তিক। তিনি তো ঘটনার সময় পুলিশ কাস্টডিতে ছিলেন,” বলেন তিনি।

ফরহাদ মজহার আরো বলেন,”বাংলাদেশের নতুন যে আইজিপি, তার সঙ্গে আইন উপদেষ্টা, তাদের তো বোঝা উচিত এটা দিল্লির স্বার্থের পক্ষে যাচ্ছে। তারা কি দিল্লির পক্ষে কাজ করছেন, যাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিপন্ন হয়ে পড়ে? এতে সরকার দুর্বল হয়।”

ডয়চে ভেলে বাংলা