০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

বাংলাদেশীদের বিদেশ যাত্রা নিয়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা,অভিবাসন ও অন্য বাস্তবতা

  • Sarakhon Report
  • ০৪:৫২:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
  • 72

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বাংলাদেশ থেকে বিদেশ ভ্রমণ এখন আর আগের মতো সহজ নয়। নানা দেশের কঠোর ভিসা নীতির কারণে পর্যটনসহ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশ যাত্রা সীমিত হয়ে পড়েছে। বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উপমহাদেশীয় গন্তব্যগুলোতে বাংলাদেশীদের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। এর পেছনে যেমন রয়েছে অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারের চ্যালেঞ্জ, তেমনি রয়েছে অবৈধ অভিবাসন ও ভুল কাগজপত্র ব্যবহারের মতো জটিল বাস্তবতা।

পর্যটক সেজে অভিবাসনের প্রবণতা: প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত

ভিয়েতনামথাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় সংকট

বিগত কয়েক বছরে বহু বাংলাদেশী ‘পর্যটক’ পরিচয়ে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডে গিয়েও দেশে ফেরেননি। তারা ট্যুরিস্ট ভিসার সীমা অতিক্রম করে সেখানেই অবৈধভাবে বসবাস শুরু করেছেন অথবা চোরাই পথে তৃতীয় দেশে পাড়ি দিয়েছেন। এসব পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে বাংলাদেশীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ কিংবা জটিল করে দিতে বাধ্য করেছে।

গন্তব্য সীমিত হয়ে যাওয়ার বাস্তব চিত্র

দেশ বর্তমান অবস্থা মূল সমস্যা
ভিয়েতনাম ভিসা বন্ধ পর্যটকের ছদ্মাবরণে অবৈধ অভিবাসন
সিঙ্গাপুর কঠিন ভিসা প্রক্রিয়া নতুন পাসপোর্টধারীদের অগ্রাহ্য
থাইল্যান্ড সীমিত ভিসা অতিরিক্ত আবেদন
মালয়েশিয়া শর্ত কঠোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যু
ভারত কার্যত বন্ধ রাজনৈতিক অস্থিরতা
সংযুক্ত আরব আমিরাত দিনে মাত্র ৩০-৫০টি ভিসা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ
পাকিস্তান আগ্রহ কমেছে নিরাপত্তা উদ্বেগ ও যুদ্ধ

ধন্যবাদ স্পষ্ট করে জানানোর জন্য। নিচে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরের বক্তব্য বাদ দিয়ে নতুন একজন বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ যোগ করে প্রতিবেদনটি সংশোধন করা হলো:

অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা: বেকারত্ব ও বিনিয়োগহীনতা

বিশ্লেষক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মনে করেন, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ কর্মসংস্থানের অভাবে বিদেশমুখী হয়ে উঠছে। তাঁর মতে, দেশে বিনিয়োগ না বাড়লে কিংবা দক্ষতা উন্নয়নের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হলে, অবৈধ পথে বিদেশ গমনের প্রবণতা আরও বাড়বে। বিশেষ করে পর্যটক সেজে বিদেশে গিয়ে সেখানেই থেকে যাওয়ার ঘটনা দেশের পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি রোধে সরকারকে পরিকল্পিত অভিবাসন নীতি গ্রহণ এবং বিদেশগামীদের জন্য কঠোর যাচাই-বাছাই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট অবস্থান ও তাৎপর্য

  1. হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স সূচক (২০২৫)
    • বাংলাদেশ: ৯৫তম
    • উত্তর কোরিয়া: ৯৪তম
    • লিবিয়া: ৯৫তম (বাংলাদেশের সঙ্গে সমান অবস্থান)
    • সূচক বোঝায়: বাংলাদেশী পাসপোর্টে গন্তব্য সীমিত ও গ্রহণযোগ্যতা কম।

  1. নোমাড ক্যাপিটালিস্ট সূচক
    • বাংলাদেশ: ১৮১তম
    • স্কোর: মাত্র ৩৮
    • স্কোর ৫০-এর নিচে থাকলে বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।

এই দুটি সূচক থেকে স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশী পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন কমছে।

পর্যটন শিল্পে ভবিষ্যত প্রবণতা: কোথায় সম্ভাবনা?

সহজ গন্তব্য:

  • চীন: বর্তমানে চীনের ভিসা সহজলভ্য।
  • মালদ্বীপ ও শ্রীলংকা: অন-অ্যারাইভাল সুবিধায় ভ্রমণ সহজ।

কঠিন গন্তব্য:

  • মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ: ভিসা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
  • ইউরোপ ও আমেরিকা: নিরাপত্তা, অভিবাসন শর্ত কঠোর হওয়ায় ভিসা পাওয়া কঠিন।

নীতিগত বিশ্লেষণ: কী করণীয়?

রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক পদক্ষেপ জোরদার করা

    • পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা বাড়ানো।

দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন ও ভিসা যাচাই প্রক্রিয়া সংহত করা

    • সরকারি-বেসরকারি খাতে যৌথ উদ্যোগে বিদেশগামীদের প্রস্তুত করা।

পর্যটন নীতি পুনর্মূল্যায়ন

    • যে সব দেশ এখনও ভিসা প্রদান করছে, সেসব দেশকে কেন্দ্র করে পর্যটন প্রচারণা চালানো।

বিশ্ব এখন অভিবাসন ও নিরাপত্তা নীতিতে কঠোর অবস্থানে আছে। এর মাঝে বাংলাদেশীদের জন্য বৈধভাবে বিদেশ গমনের পথ সীমিত হচ্ছে। তাই জাতীয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করাই হবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মূল চাবিকাঠি।

বাংলাদেশীদের বিদেশ যাত্রা নিয়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা,অভিবাসন ও অন্য বাস্তবতা

০৪:৫২:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বাংলাদেশ থেকে বিদেশ ভ্রমণ এখন আর আগের মতো সহজ নয়। নানা দেশের কঠোর ভিসা নীতির কারণে পর্যটনসহ কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশ যাত্রা সীমিত হয়ে পড়েছে। বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উপমহাদেশীয় গন্তব্যগুলোতে বাংলাদেশীদের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। এর পেছনে যেমন রয়েছে অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারের চ্যালেঞ্জ, তেমনি রয়েছে অবৈধ অভিবাসন ও ভুল কাগজপত্র ব্যবহারের মতো জটিল বাস্তবতা।

পর্যটক সেজে অভিবাসনের প্রবণতা: প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত

ভিয়েতনামথাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় সংকট

বিগত কয়েক বছরে বহু বাংলাদেশী ‘পর্যটক’ পরিচয়ে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডে গিয়েও দেশে ফেরেননি। তারা ট্যুরিস্ট ভিসার সীমা অতিক্রম করে সেখানেই অবৈধভাবে বসবাস শুরু করেছেন অথবা চোরাই পথে তৃতীয় দেশে পাড়ি দিয়েছেন। এসব পরিস্থিতি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে বাংলাদেশীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ কিংবা জটিল করে দিতে বাধ্য করেছে।

গন্তব্য সীমিত হয়ে যাওয়ার বাস্তব চিত্র

দেশ বর্তমান অবস্থা মূল সমস্যা
ভিয়েতনাম ভিসা বন্ধ পর্যটকের ছদ্মাবরণে অবৈধ অভিবাসন
সিঙ্গাপুর কঠিন ভিসা প্রক্রিয়া নতুন পাসপোর্টধারীদের অগ্রাহ্য
থাইল্যান্ড সীমিত ভিসা অতিরিক্ত আবেদন
মালয়েশিয়া শর্ত কঠোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যু
ভারত কার্যত বন্ধ রাজনৈতিক অস্থিরতা
সংযুক্ত আরব আমিরাত দিনে মাত্র ৩০-৫০টি ভিসা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ
পাকিস্তান আগ্রহ কমেছে নিরাপত্তা উদ্বেগ ও যুদ্ধ

ধন্যবাদ স্পষ্ট করে জানানোর জন্য। নিচে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরের বক্তব্য বাদ দিয়ে নতুন একজন বিশেষজ্ঞের বিশ্লেষণ যোগ করে প্রতিবেদনটি সংশোধন করা হলো:

অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা: বেকারত্ব ও বিনিয়োগহীনতা

বিশ্লেষক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মনে করেন, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ কর্মসংস্থানের অভাবে বিদেশমুখী হয়ে উঠছে। তাঁর মতে, দেশে বিনিয়োগ না বাড়লে কিংবা দক্ষতা উন্নয়নের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হলে, অবৈধ পথে বিদেশ গমনের প্রবণতা আরও বাড়বে। বিশেষ করে পর্যটক সেজে বিদেশে গিয়ে সেখানেই থেকে যাওয়ার ঘটনা দেশের পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি রোধে সরকারকে পরিকল্পিত অভিবাসন নীতি গ্রহণ এবং বিদেশগামীদের জন্য কঠোর যাচাই-বাছাই ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট অবস্থান ও তাৎপর্য

  1. হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স সূচক (২০২৫)
    • বাংলাদেশ: ৯৫তম
    • উত্তর কোরিয়া: ৯৪তম
    • লিবিয়া: ৯৫তম (বাংলাদেশের সঙ্গে সমান অবস্থান)
    • সূচক বোঝায়: বাংলাদেশী পাসপোর্টে গন্তব্য সীমিত ও গ্রহণযোগ্যতা কম।

  1. নোমাড ক্যাপিটালিস্ট সূচক
    • বাংলাদেশ: ১৮১তম
    • স্কোর: মাত্র ৩৮
    • স্কোর ৫০-এর নিচে থাকলে বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।

এই দুটি সূচক থেকে স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশী পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন কমছে।

পর্যটন শিল্পে ভবিষ্যত প্রবণতা: কোথায় সম্ভাবনা?

সহজ গন্তব্য:

  • চীন: বর্তমানে চীনের ভিসা সহজলভ্য।
  • মালদ্বীপ ও শ্রীলংকা: অন-অ্যারাইভাল সুবিধায় ভ্রমণ সহজ।

কঠিন গন্তব্য:

  • মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ: ভিসা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
  • ইউরোপ ও আমেরিকা: নিরাপত্তা, অভিবাসন শর্ত কঠোর হওয়ায় ভিসা পাওয়া কঠিন।

নীতিগত বিশ্লেষণ: কী করণীয়?

রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক পদক্ষেপ জোরদার করা

    • পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা বাড়ানো।

দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন ও ভিসা যাচাই প্রক্রিয়া সংহত করা

    • সরকারি-বেসরকারি খাতে যৌথ উদ্যোগে বিদেশগামীদের প্রস্তুত করা।

পর্যটন নীতি পুনর্মূল্যায়ন

    • যে সব দেশ এখনও ভিসা প্রদান করছে, সেসব দেশকে কেন্দ্র করে পর্যটন প্রচারণা চালানো।

বিশ্ব এখন অভিবাসন ও নিরাপত্তা নীতিতে কঠোর অবস্থানে আছে। এর মাঝে বাংলাদেশীদের জন্য বৈধভাবে বিদেশ গমনের পথ সীমিত হচ্ছে। তাই জাতীয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করাই হবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মূল চাবিকাঠি।