০৯:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
ঢাকার খিলক্ষেতের দুর্গা মন্দির ভাঙার অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাখ্যা রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৬) চিতা-বাঘের শেষ আলোঝলক ঢাকা শহরের বাস সেবা: আধুনিকায়নের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগন্নাথ মন্দির আর প্রসাদ বিতরণ নিয়ে কেন রাজনৈতিক বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে? মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ও গঙ্গা জলচুক্তি নবায়ন নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের বড় একটি ভুল, প্রতিশোধ বনাম সংস্কার সাকিব আল হাসান: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অমর কিংবদন্তি বাংলা নাটকের সুপারস্টার অপূর্বের জন্মদিন আজ

আইএমএফের চাপ, সংস্কারের স্থবিরতা: বাজেট স্বচ্ছতায় পিছিয়ে

  • Sarakhon Report
  • ০৬:০৩:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
  • 55

সারাক্ষণ রিপোর্ট

দ্বিবার্ষিক ওপেন বাজেট সার্ভে (OBS)‑এর সর্বশেষ সংস্করণ ২০২৩‑এ বাংলাদেশ মাত্র ৩৭ স্কোর পেয়ে ১২৫টি দেশের মধ্যে ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে। এই স্কোর ‘সাধারণ নাগরিকের তথ্যগত আলোচনার জন্য পর্যাপ্ত’ ৬১‑এর সীমানা থেকে অনেক দূরে, এমনকি বৈশ্বিক গড় ৪৫‑এরও নিচে। দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে পাকিস্তান (৩০)‑কে অল্প ব্যবধানে ছাপিয়ে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার (৩৭) সঙ্গে একই কাতারে আছে ।

দক্ষিণ এশীয় তুলনা: বাংলাদেশের অবস্থান

OBS‑এ ভারত ৫১ ও নেপাল ৫০ স্কোর পেয়ে তথ্যপ্রকাশে ‘সীমিত থেকে পর্যাপ্ত’ স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ৩৭‑এ থমকে আছে । অর্থাৎ আঞ্চলিক নেতৃত্বের জায়গাটিও হারিয়ে ফেলেছে ঢাকা।

প্রধান ঘাটতির উৎস: তথ্যপ্রকাশের দেরি ও প্রি‑বাজেট নীরবতা

দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার‑এ উদ্ধৃত OBS বিশ্লেষকেরা দেখিয়েছেন, বাজেটের প্রস্তুতি পর্যায়ে সরকার কোনও প্রি‑বাজেট স্টেটমেন্ট প্রকাশ করে না; ফলে নাগরিক ও অংশীজন‑ভিত্তিক অনেক আলোচনাই নথিভুক্ত হয় না। মাসিক ও ত্রৈমাসিক বাস্তবায়ন প্রতিবেদন অনলাইনে আসে কয়েক মাস দেরিতে, আর বছরের শেষ হিসাব বা নিরীক্ষা প্রতিবেদন ১৮ মাসের মধ্যে প্রকাশের আন্তর্জাতিক নিয়ম থাকলেও তা নিয়মিত মানা হচ্ছে না । এই দীর্ঘসূত্রতাই স্বচ্ছতা স্কোরকে আটকে রাখছে।

নাগরিক অংশগ্রহণ ও সংসদীয় তদারকি

OBS‑এ নাগরিক অংশগ্রহণে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ১১; আর সংসদ ও মহা‑হিসাব নিরীক্ষকের যৌথ তদারকি স্কোর ৩৭। অর্থাৎ বাজেট প্রণয়ন, অনুমোদন ও বাস্তবায়নের কোনও স্তরেই জনগণের মতামত বা সংসদীয় কমিটির সমালোচনামূলক নজরদারি কার্যকরভাবে ধরা পড়ছে না ।

আইনি কাঠামো বনাম বাস্তবায়ন

২০০৯ সালের পাবলিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট আইনে ত্রৈমাসিক বাস্তবায়ন প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক হলেও এর প্রকাশে ছয়‑নয় মাসের ল্যাগ থেকে যাচ্ছে। তথ্য অধিকার আইন থাকলেও বাজেট সংশ্লিষ্ট অনুরোধে উত্তর পেতে জটিল ধাপ পার হতে হয়, যা নাগরিক উন্মুক্ততার চেতনাকে দুর্বল করে।

আন্তর্জাতিক চাপ ও আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি

বাংলাদেশ এখন ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের আইএমএফ সহায়তা প্যাকেজের আওতায় আছে। দ্বিতীয় পর্যালোচনায় তহবিল থেকে ১.১৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের সময় আইএমএফ স্পষ্টভাবে ‘নির্ভরযোগ্য ও সময়োপযোগী বাজেট রিপোর্টিং’‑কে মূল শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে । অর্থাৎ স্বচ্ছতার ঘাটতি কাটাতে না পারলে ভবিষ্যৎ কিস্তি ঝুঁকিতে।

স্বচ্ছতা বাড়াতে সম্ভাব্য সংস্কার

প্রথমত, বাজেট ঘোষণার এক মাস আগে অনলাইনে প্রি‑বাজেট স্টেটমেন্ট প্রকাশ করা দরকার, যাতে রাজস্ব‑ব্যয় কাঠামো ও ঋণপরিকল্পনা নিয়ে আগাম আলোচনা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত, ‘সিটিজেন বাজেট’ নামে সহজ ভাষার সংক্ষিপ্ত সংস্করণ জেলাভিত্তিক তথ্যসহ প্রকাশ করলে সাধারণ করদাতা বুঝতে পারবেন টাকাটা কোথায় যাচ্ছে। তৃতীয়ত, বাজেট বাস্তবায়নের মাসিক ও ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন ১২ সপ্তাহের মধ্যে খোলা‑ডেটা ফরম্যাটে দেওয়া উচিত, আর নিরীক্ষা প্রতিবেদন ১৮ মাসের অপেক্ষা না করে বছরে একটি নির্দিষ্ট তারিখে প্রকাশ করা উচিত। এই তিন স্তরের সংস্কারেই দ্রুত ৪০‑এর ঘর ছাড়িয়ে ৫০‑এর কাছাকাছি স্কোরে পৌঁছানো সম্ভব।

কর‑জিডিপি অনুপাতে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের জন্য বাজেটের স্বচ্ছতা কেবল ধারাবাহিক সূচক নয়—এটি রাজস্ব বাড়িয়ে সামাজিক খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর পূর্বশর্ত। তথ্যের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে না এলে আইএমএফ‑বিশ্বব্যাংক‑সহ অংশীদারদের আস্থা, দেশীয় করদাতার আলোচনার আগ্রহ, এমনকি বিদেশি ক্রেডিট‑রেটিং—সবই ঝুঁকিতে পড়বে। ২০২৫‑২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে যদি সরকার অন্তত প্রি‑বাজেট বিবৃতি ও নাগরিক‑বান্ধব বাজেট সংস্করণ প্রকাশের পথ খুলে দেয়, তবে বাজেট‑প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই রাজস্ব ও উন্নয়ন নিশ্চিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকার খিলক্ষেতের দুর্গা মন্দির ভাঙার অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাখ্যা

আইএমএফের চাপ, সংস্কারের স্থবিরতা: বাজেট স্বচ্ছতায় পিছিয়ে

০৬:০৩:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

দ্বিবার্ষিক ওপেন বাজেট সার্ভে (OBS)‑এর সর্বশেষ সংস্করণ ২০২৩‑এ বাংলাদেশ মাত্র ৩৭ স্কোর পেয়ে ১২৫টি দেশের মধ্যে ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে। এই স্কোর ‘সাধারণ নাগরিকের তথ্যগত আলোচনার জন্য পর্যাপ্ত’ ৬১‑এর সীমানা থেকে অনেক দূরে, এমনকি বৈশ্বিক গড় ৪৫‑এরও নিচে। দক্ষিণ এশিয়ার ভেতরে পাকিস্তান (৩০)‑কে অল্প ব্যবধানে ছাপিয়ে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার (৩৭) সঙ্গে একই কাতারে আছে ।

দক্ষিণ এশীয় তুলনা: বাংলাদেশের অবস্থান

OBS‑এ ভারত ৫১ ও নেপাল ৫০ স্কোর পেয়ে তথ্যপ্রকাশে ‘সীমিত থেকে পর্যাপ্ত’ স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ৩৭‑এ থমকে আছে । অর্থাৎ আঞ্চলিক নেতৃত্বের জায়গাটিও হারিয়ে ফেলেছে ঢাকা।

প্রধান ঘাটতির উৎস: তথ্যপ্রকাশের দেরি ও প্রি‑বাজেট নীরবতা

দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার‑এ উদ্ধৃত OBS বিশ্লেষকেরা দেখিয়েছেন, বাজেটের প্রস্তুতি পর্যায়ে সরকার কোনও প্রি‑বাজেট স্টেটমেন্ট প্রকাশ করে না; ফলে নাগরিক ও অংশীজন‑ভিত্তিক অনেক আলোচনাই নথিভুক্ত হয় না। মাসিক ও ত্রৈমাসিক বাস্তবায়ন প্রতিবেদন অনলাইনে আসে কয়েক মাস দেরিতে, আর বছরের শেষ হিসাব বা নিরীক্ষা প্রতিবেদন ১৮ মাসের মধ্যে প্রকাশের আন্তর্জাতিক নিয়ম থাকলেও তা নিয়মিত মানা হচ্ছে না । এই দীর্ঘসূত্রতাই স্বচ্ছতা স্কোরকে আটকে রাখছে।

নাগরিক অংশগ্রহণ ও সংসদীয় তদারকি

OBS‑এ নাগরিক অংশগ্রহণে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ১১; আর সংসদ ও মহা‑হিসাব নিরীক্ষকের যৌথ তদারকি স্কোর ৩৭। অর্থাৎ বাজেট প্রণয়ন, অনুমোদন ও বাস্তবায়নের কোনও স্তরেই জনগণের মতামত বা সংসদীয় কমিটির সমালোচনামূলক নজরদারি কার্যকরভাবে ধরা পড়ছে না ।

আইনি কাঠামো বনাম বাস্তবায়ন

২০০৯ সালের পাবলিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট আইনে ত্রৈমাসিক বাস্তবায়ন প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক হলেও এর প্রকাশে ছয়‑নয় মাসের ল্যাগ থেকে যাচ্ছে। তথ্য অধিকার আইন থাকলেও বাজেট সংশ্লিষ্ট অনুরোধে উত্তর পেতে জটিল ধাপ পার হতে হয়, যা নাগরিক উন্মুক্ততার চেতনাকে দুর্বল করে।

আন্তর্জাতিক চাপ ও আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি

বাংলাদেশ এখন ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের আইএমএফ সহায়তা প্যাকেজের আওতায় আছে। দ্বিতীয় পর্যালোচনায় তহবিল থেকে ১.১৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের সময় আইএমএফ স্পষ্টভাবে ‘নির্ভরযোগ্য ও সময়োপযোগী বাজেট রিপোর্টিং’‑কে মূল শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে । অর্থাৎ স্বচ্ছতার ঘাটতি কাটাতে না পারলে ভবিষ্যৎ কিস্তি ঝুঁকিতে।

স্বচ্ছতা বাড়াতে সম্ভাব্য সংস্কার

প্রথমত, বাজেট ঘোষণার এক মাস আগে অনলাইনে প্রি‑বাজেট স্টেটমেন্ট প্রকাশ করা দরকার, যাতে রাজস্ব‑ব্যয় কাঠামো ও ঋণপরিকল্পনা নিয়ে আগাম আলোচনা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত, ‘সিটিজেন বাজেট’ নামে সহজ ভাষার সংক্ষিপ্ত সংস্করণ জেলাভিত্তিক তথ্যসহ প্রকাশ করলে সাধারণ করদাতা বুঝতে পারবেন টাকাটা কোথায় যাচ্ছে। তৃতীয়ত, বাজেট বাস্তবায়নের মাসিক ও ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন ১২ সপ্তাহের মধ্যে খোলা‑ডেটা ফরম্যাটে দেওয়া উচিত, আর নিরীক্ষা প্রতিবেদন ১৮ মাসের অপেক্ষা না করে বছরে একটি নির্দিষ্ট তারিখে প্রকাশ করা উচিত। এই তিন স্তরের সংস্কারেই দ্রুত ৪০‑এর ঘর ছাড়িয়ে ৫০‑এর কাছাকাছি স্কোরে পৌঁছানো সম্ভব।

কর‑জিডিপি অনুপাতে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের জন্য বাজেটের স্বচ্ছতা কেবল ধারাবাহিক সূচক নয়—এটি রাজস্ব বাড়িয়ে সামাজিক খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর পূর্বশর্ত। তথ্যের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে না এলে আইএমএফ‑বিশ্বব্যাংক‑সহ অংশীদারদের আস্থা, দেশীয় করদাতার আলোচনার আগ্রহ, এমনকি বিদেশি ক্রেডিট‑রেটিং—সবই ঝুঁকিতে পড়বে। ২০২৫‑২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে যদি সরকার অন্তত প্রি‑বাজেট বিবৃতি ও নাগরিক‑বান্ধব বাজেট সংস্করণ প্রকাশের পথ খুলে দেয়, তবে বাজেট‑প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই রাজস্ব ও উন্নয়ন নিশ্চিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।