সারাক্ষণ রিপোর্ট
করোনা মহামারিতে প্রায় ২৫ হাজার শিশু প্রাথমিক শিক্ষায় ছেঁড়ে পড়েছিল। ঝরে পড়া এই শিক্ষার্থীদের মূলধারা শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্র্যাকের ‘রিটার্নিং টু লার্নিং’ (আরটিএল) প্রকল্প শুরু হয়। হেম্পেল ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত কুড়িগ্রাম, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলায় পরিচালিত এই উদ্যোগে এক্সিলারেটেড কোর্সের মাধ্যমে শিশুদের শিখন ঘাটতি পূরণ করা হয়।
প্রকল্প সংক্ষিপ্ত বিবরণ
- বিদ্যালয় সংখ্যা: ১,৫১৫টি এক-কক্ষবিশিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি মডেল স্কুল
- কার্যসূচি: এক্সিলারেটেড কোর্সে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের বাড়তি ক্লাস
- সময়সীমা: জানুয়ারি ২০২২–ডিসেম্বর ২০২৪
- লক্ষ্য: করোনা ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীকে পুনর্ভর্তি ও শিখন সক্ষমতা উন্নয়ন
অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজন ব্র্যাক সেন্টারে সোমবার, ১২ই মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত শেয়ারিং সেশনে প্রকল্পের মূল উপাত্ত ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
মূল ফলাফল ও পরিসংখ্যান
- এক্সিলারেটেড কোর্স শেষ করে ৯৯.১% ঝরে পড়া শিক্ষার্থী সরকারি/বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় পুনর্ভর্তির পথে ফিরে এসেছে।
- কুড়িগ্রামে প্রাথমিক স্তরের ঝরে পড়ার হার ২০২০ সালের ২৩.৬% থেকে ২০২৩ সালের ১৪.১৬% এ নেমে এসেছে (জাতীয় গড় ১৩.১৫%)।
- ইংরেজিতে ৩৩-এর নিচে নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীর হার ৩৭% থেকে কমে ৫% এ দাঁড়ায়।
- বাংলা ও গণিতে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষনীয়।
অতিথি বক্তব্য
- প্রধান বিচার্য অতিথি মাসুদ আকতার খান (অতিরিক্ত সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়)
- “মেয়ে শিশুদের শিক্ষায় অগ্রাধিকার দেয়ার পর এখন ছেলে শিশুদের শিখনক্ষেত্রেও সমান নজর দিতে হবে। আগামী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গুণগত মান নিশ্চিত করা।”
- বিশেষ অতিথি মিরাজুল ইসলাম উকিল (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর)
- “সরকার অনুমোদন দিয়েছে—(১) সবার জন্য স্কুল ফিডিং, (২) প্রাথমিক স্তরে আবারও শিক্ষাবৃত্তি, (৩) দ্বি-শিফট স্কুলকে এক শিফটে রূপান্তর। এসব উদ্যোগ কার্যকর হলে ঝরে পড়ার হার অনেকাংশে কমবে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের সাফি রহমান খান, জেলা উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহাম্মদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জিয়াউল হক শিকদার ও ব্র্যাক ইউরোপের ফাউন্ডেশনস কর্মকর্তা রোজি উইলিয়ামস।
সুপারিশ ও ভবিষ্যৎ দিক
উল্লেখিত এলাকাগুলোতে অর্জিত অগ্রগতি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন:
দীর্ঘমেয়াদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিক্ষা নীতি তৈরি
স্থানীয় সরকার, অভিভাবক, শিক্ষক ও কমিউনিটির সমন্বিত অংশগ্রহণ
কোর্স শেষে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মূল্যায়ন ও মনিটরিং
গুণগত মান বজায় রাখতে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ
সকল অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সময়োপযোগী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব, এতে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা।