সারাক্ষণ রিপোর্ট
দ্বিতীয় মেয়াদে পুনর্নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৩ মে সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফরে পা রাখতেই স্পষ্ট হবে—গত আট বছরে বৈশ্বিক মঞ্চ কতটা বদলে গেছে। ট্রাম্প আরও অগণতান্ত্রিক হয়ে উঠেছেন, আর স্বাগতিক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) নিজ দেশকে অস্থিরতামুক্ত রাখার শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন।
কূটনীতিতে নতুন সৌদি
এক সময় সন্ত্রাসে অর্থজোগান ও কট্টরবাদ রপ্তানিতে অভিযুক্ত সৌদি আরব আজ মধ্য‑প্রাচ্যের শান্তি‑প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায়। ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধে হুথিদের সঙ্গে সমঝোতার পরামর্শ, সিরিয়ার ঋণ পরিশোধে সহায়তা, ইরানের সঙ্গে সমঝোতার আহ্বান—সবই আঞ্চলিক স্থিতি ফেরাতে এমবিএস‑এর কূটনৈতিক পোর্টফোলিও। এমনকি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি আনতে আলোচনাও রিয়াদে হয়েছে। প্রতিবেশনে স্থিতি বাড়লে সৌদি পণ্যের বাজারও বিস্তৃত হবে—এটা এমবিএস‑এর নিজস্ব উন্নয়ন অজেন্ডারই অংশ।
সামাজিক বিপ্লব
মাত্র কয়েক বছর আগেও নারীরা কর্মক্ষেত্র ও জনজীবন থেকে প্রায় পুরোপুরি বাদ পড়েছিল; সিনেমা‑হল ও কনসার্ট নিষিদ্ধ ছিল; ধর্মীয় পুলিশের ভয়ে আনন্দ ভেতরে বা বিদেশে সীমাবদ্ধ থাকত। আজ নারীরা পাসপোর্ট হাতে ভ্রমণ করেন, চাকরি করেন, যেখানে খুশি থাকেন। ভাইস স্কোয়াড বিলুপ্ত, কনসার্ট‑হল জমজমাট, সুপারহিরো ফিল্ম সবখানে দেখা যায়। এমনকি রক্ষণশীল অঞ্চলেও তরুণেরা রাত জেগে নতুন স্বাধীনতা উপভোগ করছে।
অর্থনৈতিক রূপান্তরের অসম্পূর্ণ ছবি
২০১৬ থেকে তেলনির্ভরতা কমাতে প্রায় ৯০০ বিলিয়ন ডলারের ‘গিগা‑প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়েছে—ফিউচারিস্টিক নিওম শহর বা বিশাল ‘মেউকাব’ কিউব তারই অংশ। সার্বভৌম বিনিয়োগ তহবিল (পিআইএফ) বৈদ্যুতিক গাড়ি, ই‑স্পোর্টস, কফি‑প্রসেসিং, চিপ নির্মাণসহ শতাধিক খাতে অর্থ ঢেলেছে। তবু সরকারি আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশই এখনও তেল থেকে আসে। বিপুল রাষ্ট্রব্যয় খরচ বাড়াচ্ছে, বেসরকারি ব্যবসা চাপে পড়ছে, বিদেশি বিনিয়োগ এখনও গতি পায়নি।
আর্থিক চাপ ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা
অর্থ তত্ত্বের হিসাব বলছে—ব্যালান্স শিট টিকিয়ে রাখতে সৌদি আরবকে প্রতি ব্যারেল তেলে ৯২ ডলার দরকার, আর বাজার দর নেমে এসেছে ৬১ ডলারে। ২০১৬ থেকে সরকারি ঋণ জিডিপির দ্বিগুণ হয়েছে। ট্রাম্পের ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক চাপের ফলেও রপ্তানি লাভ কমবে। বৈশ্বিক মন্দা এলে তেলের দাম ও বিনিয়োগ আরও পড়ে যেতে পারে।
যেখানে বদল জরুরি
ফিরিস্তি‑সদৃশ প্রকল্পে অর্থ ঢালার বদলে সরকারকে প্রযুক্তি‑খাতে পশ্চাদপসরণ করে শিক্ষা, দক্ষতা বিকাশ ও ব্যবসা‑পরিবেশ উন্নত করতে হবে—যেখানে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আসতে অনীহা। নতুন বিনিয়োগ আইন ইতিবাচক, তবে সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে পড়লে প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকার টিকবে—এই ভরসা দিতে হবে।
ঝুঁকি ও সম্ভাবনার সমীকরণ
সামাজিক উদারীকরণ যুবসমাজকে কিছুটা সময় দিলেও, অর্থনৈতিক অগ্রগতি থেমে গেলে সেই সমর্থন মিলিয়ে যেতে পারে। জীবিকা সংকটে ঘরোয়া অস্থিরতা বাড়লে সরকার দমন‑নীতি আঁকড়াতে পারে, যা এ‑পর্যন্ত অর্জিত অগ্রগতি উল্টো পথে ঠেলে দেবে।
শেষ কথা
সৌদি আরব কয়েক বছরে অভাবনীয় পথ পাড়ি দিয়েছে, কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে আরও অনেক দূর যেতে হবে—এমবিএস‑এর প্রকল্পের সাফল্য নির্ভর করবে অর্থনীতিকে কত দ্রুত বাস্তবসম্মত পথে আনতে পারেন, তার উপর।