সারাক্ষণ রিপোর্ট
ভূমিকম্পের ধাক্কা
মিয়ানমারের সেনা‑নির্মিত রাজধানী নাইপিদাওয়ে ২৮ মার্চ ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ৩,৮০০ জন মারা যায় এবং সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৭০ শতাংশ সরকারি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাগাইং ফল্টের ওপর গড়ে ওঠা এই শহর ঐতিহাসিকভাবে ভূকম্প‑প্রবণ হলেও এত বড় ধ্বংস আগে দেখা যায়নি। এখন প্রশ্ন উঠেছে—এ শহর কি আদৌ পুনর্গঠন করা উচিত?
অস্থায়ী দপ্তর ও চীনা কেবিন
কিছু মন্ত্রণালয় আবার ইয়াঙ্গুনে ফিরছে। যারা রয়ে গেছেন, তারা বৃষ্টি‑বাতাস‑সহনশীল চীনে প্রস্তুতকৃত কেবিনে উঠছেন বা পার্কিং লটে ত্রিপলের নিচে কাজ করছেন। সিনিয়র কয়েকজন নিচতলায় ফিরলেও অধিকাংশ কর্মকর্তা—কিছু মন্ত্রীসহ—তাঁবুতেই দফতর চালাচ্ছেন।
সরকারি অবকাঠামোর ক্ষতি
সরকারি কর্মীদের জন্য নির্মিত ৬২০‑টির বেশি আবাসিক ভবনের অধিকাংশই আবাসনের জন্য উপযুক্ত নয়; মাত্র ৪৪০‑টি ভবনকে “মেরামত‑যোগ্য” ঘোষণা করা হয়েছে। সংসদ ভবনের মাটি‑খোঁড়া ভিত্তি প্রায় এক মিটার‑চওড়া ফাটলে খুলে পড়েছে; সামরিক পরিষদপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং তাঁর নিজ বাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি এসব দেখেছেন।
দুর্বল নির্মাণ ও দুর্নীতি প্রসঙ্গ
জেনারেল ধ্বংসের ব্যাপকতার জন্য নিম্নমানের নির্মাণ ও খারাপ পরিকল্পনাকে দায়ী করেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দি ইররাওয়াডি আগে থেকেই জানিয়ে আসছে—নাইপিদাও নির্মাণের সময় থেকে মানহীন কাজ ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি চলেছে। ২০০২‑এ কাজ শুরু হয়ে এক দশকে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারে শহরটি দাঁড়ালেও আজ তার ভিত নড়বড়ে।
পুনর্গঠন—কিন্তু অর্থ কোথায়?
নতুন এসব ভবন আবার গড়তে বিপুল অর্থ প্রয়োজন, কিন্তু সেনা‑শাসকরা অর্থনৈতিক মন্দা ও গৃহযুদ্ধে জর্জরিত অবস্থায় তহবিলের নির্দেশনা দেননি। ২০২২‑এ ভূ‑দুর্যোগ তহবিল থেকে ৪০০ কোটি কিয়াত (প্রায় ১৯০ মিলিয়ন ডলার) সরিয়ে সাগাইং অঞ্চলের প্রো‑এসএসি মিলিশিয়া উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছিল।
চলমান সংঘাত ও মানবিক উদ্বেগ
মাঠে সেনাবাহিনী বহুমুখী যুদ্ধে ব্যস্ত। ভূমিকম্পের পর ঘোষিত অস্ত্রবিরতি ভেঙে সামরিক বিমান হামলায় ২০ শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষক নিহত হয়েছেন বলে জাতীয় ঐক্য সরকার অভিযোগ করেছে; রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি একে “ভুয়া খবর” বলে উড়িয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে মানসম্পন্ন পুনর্গঠন যে কঠিন, তা বলাই বাহুল্য।
সামরিক কোয়ার্টার অজানা
উত্তর কোরীয় সহায়তায় নির্মিত সুড়ঙ্গ‑ঘেরা সামরিক সদরদপ্তরে কী ক্ষতি হয়েছে, সে তথ্য গোপন। বিশ্লেষকদের ধারণা, অন্যান্য এলাকার মতো সেখানেও ক্ষতি বড় হতে পারে, যদিও সরকার কিছু প্রকাশ করেনি।
নাইপিদাওর অজনপ্রিয়তা
২০০৫‑এ পূর্বঘোষণা ছাড়াই রাজধানী ইয়াঙ্গুন থেকে সরিয়ে আনা হলে বেশিরভাগ কূটনীতিক ও সরকারি কর্মচারীর কাছে নাইপিদাও অপছন্দের শহরে পরিণত হয়। চীনের দূতাবাস ছাড়া আর কারও স্থায়ী মিশন নেই; গণপরিবহন শূন্য, দু‑টি শপিং মলও প্রাণহীন। শুধু গলফ‑কোর্সই সেনা‑জেনারেলদের পছন্দ!
আবারও ঝুঁকির সামনে?
ভূতত্ত্ববিদদের ভাষায়, সাগাইং ফল্টের বড় ভূমিকম্প “অপরিহার্য” ছিল—সময় অনিশ্চিত, ঝুঁকি নিশ্চিত। সামরিক নেতারা তা জেনেও শহর গড়েছিলেন। আজ তারা কী সিদ্ধান্ত নেবেন—নতুন করে পুঁজি ঢেলে আবার একই ঝুঁকি নেবেন, নাকি বিকল্প ভাববেন—উত্তর এখনো অনিশ্চিত।