০৩:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
ডেমোক্র্যাটদের নীতির ব্যর্থতা যেভাবে মামদানিকে জয়ী করল মার্কো রুবিওর উপস্থিতিতে ডিআরসি-রুয়ান্ডা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর কংগ্রেসের বহু নেতা ইন্দিরা জি ও জেপি-র সংলাপ চেয়েছিলেন, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল তা হতে দেয়নি হিউএনচাঙ (পর্ব-১৩২) ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৭) সমুদ্রের ওপার থেকে নতুন স্বপ্ন: তাইওয়ান তরুণদের ফুচিয়ানে নতুন জীবনগাঁথা ব্যর্থ কলম্বো, গলের লড়াই -এ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ঘরে জয় কেন ? ‘আকাশ হয়ে যাই’ মিউজিক ভিডিতে প্রশংসিত পূর্ণিমা বৃষ্টি সাউথ চায়নান মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন: ইরান আক্রমনে লাভ ক্ষতি

ধান থেকে আমের পথে

  • Sarakhon Report
  • ০২:০০:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • 51

সারাক্ষণ রিপোর্ট

 সাতক্ষীরার কৃষি বদলের গল্প: অর্থনীতিজলবায়ু ও বাজারের সমীকরণে কৃষকদের সিদ্ধান্ত

সাতক্ষীরা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি কৃষিপ্রধান জেলা। এখানকার মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই ধান চাষে অভ্যস্ত। কিন্তু গত এক দশকে এক দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে—অনেক কৃষক এখন আর ধানের মাঠে কোমরভেজা ঘাম ঝরাচ্ছেন না, বরং ফলাচ্ছেন হিমসাগর ও গোপালভোগ আম।
এই নাটকীয় পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে বাস্তবতা ও বেঁচে থাকার হিসাব।

অর্থনৈতিক বাস্তবতা: ধানে লোকসানআমে লাভ

ধানের খরচ বাড়ছেলাভ কমছে

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কৃষক জয়নাল সরদার বললেন,

এক একর জমিতে ধান ফলাতে খরচ পড়ে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে দামে তেমন লাভ থাকে না। বরং দাম পড়ে গেলে মূলধনই উঠে না।”

অন্যদিকে, আমগাছ একবার লাগালে পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে তা থেকে নিয়মিত ফল আসে। পরিপক্ব একটি আমগাছ থেকে বছরে গড়ে ১৫-২০ হাজার টাকার আম বিক্রি করা সম্ভব, যা ধানের তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত: ধান নয়আম সহনশীল

সাতক্ষীরা উপকূলবর্তী হওয়ায় এখানে লবণাক্ততা, খরা এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের সমস্যা বাড়ছে। ধান এসব পরিবর্তনে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে আমগাছ তুলনামূলকভাবে বেশি সহনশীল। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমানে জেলার অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে, যা এক দশক আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

সাতক্ষীরা কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন,

আম চাষ শুধু আবহাওয়া সহনশীল নয়এটি পানির ব্যবহারও কম করে। তাই ধীরে ধীরে চাষিরা এটিকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করছেন।”

রপ্তানি ও বাজার: বিশ্ব দরবারে সাতক্ষীরার হিমসাগর

সাতক্ষীরা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আম রপ্তানিকারক জেলা হয়ে উঠেছে। হিমসাগর আমের স্বাদ ও গন্ধ আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ১২০০ টন আম ইউরোপে রপ্তানি হয়। এসব আম ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট’ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

গুটি আম-২০ কেজি – rajexpress

রপ্তানিকারক জাহিদুল হক বলেন,

ধানে আমরা লোকসান গুনেছিকিন্তু আমে বিদেশি ক্রেতারা আগ্রহীতারা অর্ডার দিয়ে আম নিচ্ছেন। ফলে চাষিরা উৎসাহ পাচ্ছেন আমগাছ লাগাতে।”

সরকারি সহায়তা ও অবকাঠামো উন্নয়ন

সরকারি পর্যায় থেকে আম চাষে উৎসাহ দিতে নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

  • কৃষকদের প্রশিক্ষণ
  • আম প্যাক হাউস স্থাপন
  • রপ্তানিমুখী সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নয়ন
  • জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে উৎসাহ
    এই উদ্যোগগুলো আম চাষকে শুধু লাভজনক নয়, টেকসইও করছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,

গত পাঁচ বছরে ২৫% নতুন কৃষক ধান ছেড়ে ফলচাষে এসেছে, যার মধ্যে আম শীর্ষে।

সামাজিক ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত

আমচাষের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে হাজার হাজার মৌসুমি শ্রমিক। ফল সংগ্রহ, পরিচর্যা, কার্টুন প্যাকিং, রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকরণ—সব মিলিয়ে একটি মৌসুমে কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়।

ইউরোপে যাবে সাতক্ষীরার আম

তরুণ উদ্যোক্তারা ‘আম বাগান ভিত্তিক স্টার্টআপ’ চালু করছেন। কেউ ই-কমার্সে আম বিক্রি করছেন, কেউ প্রক্রিয়াজাত আমজাত পণ্য (আচার, জ্যাম, জুস) বাজারজাত করছেন।

তালার একজন নারী উদ্যোক্তা সালমা খাতুন জানান,

আমি তিন বিঘা জমিতে আম বাগান করেছিপাশাপাশি অনলাইনে সাতক্ষীরার হিমসাগর’ নামে পেজ খুলে বিক্রি করছি। চাষ থেকে মার্কেটিংসব নিজে করছি। এটি এখন আমার পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস।”

চ্যালেঞ্জ: ঝুঁকি ও স্থিতিশীলতা

তবে সবই যে ইতিবাচক, তা নয়।

  • প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমের ফলন ধ্বংস হতে পারে
  • এক ফসল নির্ভরতা চাষিকে ঝুঁকির মুখে ফেলে
  • অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিকের প্রয়োগে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে
  • বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ হলে দাম পড়ে যেতে পারে

৫ মে থেকে বাজারে আসছে সাতক্ষীরার আম - Jagrata Bangla

কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. আহসান হাবীব বলেন,

আম চাষ ভালোকিন্তু এর ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা বিপদ ডেকে আনতে পারে। বহুমুখী চাষজলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ও বাজার ব্যবস্থাপনাএই তিনটি বিষয়কে সমন্বয় করতে হবে।”

কৃষির গন্তব্য বদলাচ্ছে

সাতক্ষীরার কৃষির গল্প এখন আর শুধু ধানভিত্তিক নয়। এই বদল শুধু ফসলের পরিবর্তন নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক কৌশল, জলবায়ু অভিযোজন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি।

যদি এই পরিবর্তনকে পরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করা যায়, তাহলে সাতক্ষীরা হয়ে উঠতে পারে টেকসই ফলচাষের আদর্শ এলাকা। তবে ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার, কৃষক ও বাজারের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।

ডেমোক্র্যাটদের নীতির ব্যর্থতা যেভাবে মামদানিকে জয়ী করল

ধান থেকে আমের পথে

০২:০০:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

 সাতক্ষীরার কৃষি বদলের গল্প: অর্থনীতিজলবায়ু ও বাজারের সমীকরণে কৃষকদের সিদ্ধান্ত

সাতক্ষীরা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি কৃষিপ্রধান জেলা। এখানকার মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই ধান চাষে অভ্যস্ত। কিন্তু গত এক দশকে এক দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে—অনেক কৃষক এখন আর ধানের মাঠে কোমরভেজা ঘাম ঝরাচ্ছেন না, বরং ফলাচ্ছেন হিমসাগর ও গোপালভোগ আম।
এই নাটকীয় পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে বাস্তবতা ও বেঁচে থাকার হিসাব।

অর্থনৈতিক বাস্তবতা: ধানে লোকসানআমে লাভ

ধানের খরচ বাড়ছেলাভ কমছে

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কৃষক জয়নাল সরদার বললেন,

এক একর জমিতে ধান ফলাতে খরচ পড়ে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে দামে তেমন লাভ থাকে না। বরং দাম পড়ে গেলে মূলধনই উঠে না।”

অন্যদিকে, আমগাছ একবার লাগালে পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে তা থেকে নিয়মিত ফল আসে। পরিপক্ব একটি আমগাছ থেকে বছরে গড়ে ১৫-২০ হাজার টাকার আম বিক্রি করা সম্ভব, যা ধানের তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত: ধান নয়আম সহনশীল

সাতক্ষীরা উপকূলবর্তী হওয়ায় এখানে লবণাক্ততা, খরা এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের সমস্যা বাড়ছে। ধান এসব পরিবর্তনে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে আমগাছ তুলনামূলকভাবে বেশি সহনশীল। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমানে জেলার অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হচ্ছে, যা এক দশক আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

সাতক্ষীরা কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন,

আম চাষ শুধু আবহাওয়া সহনশীল নয়এটি পানির ব্যবহারও কম করে। তাই ধীরে ধীরে চাষিরা এটিকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করছেন।”

রপ্তানি ও বাজার: বিশ্ব দরবারে সাতক্ষীরার হিমসাগর

সাতক্ষীরা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আম রপ্তানিকারক জেলা হয়ে উঠেছে। হিমসাগর আমের স্বাদ ও গন্ধ আন্তর্জাতিক বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ১২০০ টন আম ইউরোপে রপ্তানি হয়। এসব আম ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট’ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

গুটি আম-২০ কেজি – rajexpress

রপ্তানিকারক জাহিদুল হক বলেন,

ধানে আমরা লোকসান গুনেছিকিন্তু আমে বিদেশি ক্রেতারা আগ্রহীতারা অর্ডার দিয়ে আম নিচ্ছেন। ফলে চাষিরা উৎসাহ পাচ্ছেন আমগাছ লাগাতে।”

সরকারি সহায়তা ও অবকাঠামো উন্নয়ন

সরকারি পর্যায় থেকে আম চাষে উৎসাহ দিতে নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

  • কৃষকদের প্রশিক্ষণ
  • আম প্যাক হাউস স্থাপন
  • রপ্তানিমুখী সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নয়ন
  • জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে উৎসাহ
    এই উদ্যোগগুলো আম চাষকে শুধু লাভজনক নয়, টেকসইও করছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,

গত পাঁচ বছরে ২৫% নতুন কৃষক ধান ছেড়ে ফলচাষে এসেছে, যার মধ্যে আম শীর্ষে।

সামাজিক ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত

আমচাষের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে হাজার হাজার মৌসুমি শ্রমিক। ফল সংগ্রহ, পরিচর্যা, কার্টুন প্যাকিং, রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকরণ—সব মিলিয়ে একটি মৌসুমে কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়।

ইউরোপে যাবে সাতক্ষীরার আম

তরুণ উদ্যোক্তারা ‘আম বাগান ভিত্তিক স্টার্টআপ’ চালু করছেন। কেউ ই-কমার্সে আম বিক্রি করছেন, কেউ প্রক্রিয়াজাত আমজাত পণ্য (আচার, জ্যাম, জুস) বাজারজাত করছেন।

তালার একজন নারী উদ্যোক্তা সালমা খাতুন জানান,

আমি তিন বিঘা জমিতে আম বাগান করেছিপাশাপাশি অনলাইনে সাতক্ষীরার হিমসাগর’ নামে পেজ খুলে বিক্রি করছি। চাষ থেকে মার্কেটিংসব নিজে করছি। এটি এখন আমার পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস।”

চ্যালেঞ্জ: ঝুঁকি ও স্থিতিশীলতা

তবে সবই যে ইতিবাচক, তা নয়।

  • প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমের ফলন ধ্বংস হতে পারে
  • এক ফসল নির্ভরতা চাষিকে ঝুঁকির মুখে ফেলে
  • অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিকের প্রয়োগে পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে
  • বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ হলে দাম পড়ে যেতে পারে

৫ মে থেকে বাজারে আসছে সাতক্ষীরার আম - Jagrata Bangla

কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. আহসান হাবীব বলেন,

আম চাষ ভালোকিন্তু এর ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা বিপদ ডেকে আনতে পারে। বহুমুখী চাষজলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ও বাজার ব্যবস্থাপনাএই তিনটি বিষয়কে সমন্বয় করতে হবে।”

কৃষির গন্তব্য বদলাচ্ছে

সাতক্ষীরার কৃষির গল্প এখন আর শুধু ধানভিত্তিক নয়। এই বদল শুধু ফসলের পরিবর্তন নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক কৌশল, জলবায়ু অভিযোজন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি।

যদি এই পরিবর্তনকে পরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করা যায়, তাহলে সাতক্ষীরা হয়ে উঠতে পারে টেকসই ফলচাষের আদর্শ এলাকা। তবে ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকার, কৃষক ও বাজারের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।