আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
আর কেন জানি না ভাবতেই আমার কেমন অদ্ভুত লাগল, চুবুকের মতো একজন বয়স্ক লোক পাকা-পাকা চুল আর চোখের চারপাশে কোঁচকানো চামড়ার ভাঁজ নিয়ে আমার সঙ্গে ওই চালের ওপর উঠে বসেছিলেন। আর হড়কে পড়ে যাওয়ার ভয়ে পা-দুটো রেখেছিলেন আনাড়ির মতো ফাঁক করে। ওঁর প্রকান্ড আলুথালু মাথাটা উ’কি দিচ্ছিল চিমনির পেছন থেকে।
ফিসফিস করে ডাকলুম, ‘চুবুক!’
‘কী? কও?’
‘আপনি কিন্তু বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন, চুবুক।’
‘হাবাগবা কোথাকার…’ চটে উঠলেন চুবুক। ‘মুখের রাশ নেই তোমার?’
হঠাৎ চুবুক মাথাটা নিচু করে সরিয়ে নিলেন। শত্রুর বাহিনী খাদ থেকে উঠে আসছিল। চুবুকের উৎকণ্ঠা চারিয়ে গেল আমার মধ্যেও। দেখলুম উনি জোরে-জোরে নিশ্বাস নিচ্ছেন আর অস্বস্তিতে নড়াচড়া করছেন।
‘বরিস, দ্যাখো!’
‘হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি।’
‘শিগগিরি নাবো। নেবে দৌড়ে গিয়ে শেবালভরে খবর দাও ওরা খাদ থেকে উঠি এসেচে, তবে রকমসকম কেমন-কেমন লাগচে যেন: গোড়ার দিকে ওরা একটানা সার বেধে আসছিল, কিন্তু খাদের মধ্যি থাকতি-থাকতি ছোট-ছোট প্লেটুন-দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়েচে দেখচি। আমার কথাটা বুয়েচ? প্লেটুন দলে ভাগ ভাগ হয়ে যাবে কেন ওরা? আমরা-যে এই খামারটায় আচি সেটা টের পেয়ে গেল নাকি ব্যাটারা? যাও দেখি, শিগগিরি যাও! তাড়াতাড়ি ফিরো কিন্তু!’
খড় থেকে পা টেনে বের করে চালা থেকে হুড়মুড় করে লাফিয়ে পড়লুম আমি। আর পড়বি তো পড় একেবারে একটা মোটাসোটা শুয়োরের ঘাড়ে। আর্ত একটা চিৎকার করে শুয়োরটা পালাল। শেষ পর্যন্ত শেবালভকে খুঁজে বের করলুম। একটা গাছের পেছনে দাঁড়িয়ে চোখে দূরবীন লাগিয়ে দেখছিলেন উনি। চুবুকের দেয়া খবরটা ওঁকে শোনালুম।