আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
‘পিং!’ শব্দে খ্যাঁক করে উঠল দ্বিতীয় বুলেটটা।
তবু তখনও পর্যন্ত কিছুই শুরু হয় নি। সম্ভবত শ্বেতরক্ষীরা মাত্র সন্দেহ করছিল যে খামারটা লাল ফৌজের লোক দখল করে আছে, কিন্তু সে-বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিল না। তাই এলোমেলোভাবে দুটো গুলি ছুড়েছিল মাত্র। স্কাউট-দলের কম্যান্ডাররাও অনেক সময় এই ধরনের আচরণ করত। তারা হয়তো শত্রুসেনার অবস্থানের একপাশে কোনো ছোট ঘাঁটি পর্যন্ত চুপিচুপি এগিয়ে দু-চারটে গুলি ছড়ে দেখত শত্রুর পালটা গুলি-চালনার বেগ কতটা, তারপরে আবার শত্রুসেনার বিপরীত পাশে গিয়ে ছোটার মুখেই এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে শত্রুকে বিভ্রান্ত আর নাজেহাল করে তুলত।
অবশেষে সত্যিকার কোনো লড়াই না-করে, লড়াইয়ে না-জিতে আর শত্রুর তেমন কোনো ক্ষতি না-করেই দ্রুত তারা ফিরে আসত নিজেদের ঘাঁটিতে। এতে অন্তত তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হত যে যুদ্ধ শুরু হচ্ছে মনে করে শত্রু সৈন্য-সমাবেশ করার ফলে শত্রুর শক্তি আসলে কতখানি তা তারা টের পেয়ে যেত।
আমাদের বাহিনী ছোট-ছোট দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। তারা কিন্তু চুপ করে রইল, আগে যে গুলি-ছোড়ার কথা বলা হয়েছে তার কোনো জবাব দিল না।
এরপর তিড়িং-তিড়িং-লাফানো কালো ঘোড়ার পিঠে চেপে ওদের জন্য পাঁচেক ঘোড়সওয়ার বিপদ অগ্রাহ্য করে শত্রুর বাহিনী থেকে আলাদা হয়ে গেল আর বেশ চট্টপট ঘোড়া চালিয়ে আসতে লাগল এগিয়ে। খামার থেকে তিন-শো মিটার আন্দাজ দূরে পৌঁছে ঘোড়সওয়াররা থামল। আর একজন বাড়িটার দিকে দূরবীন কষে দেখতে লাগল। দূরবীনের কাচ দুটো উঠতে লাগল বেড়ার মাথা ঘে’ষে আন্তে-আন্তে বাড়ির চাল আর চিমনির দিকে। চিমনির পেছনে তখন চুবুক আর আমি শুয়ে।
‘ভারি সেয়ানা, শত্রুর পর্যবেক্ষককে কোথায় খাঁজতে হয় তা ওরা জানে,’ চুবুকের পিঠের আড়ালে মাথাটা লুকোতে-লুকোতে আমি ভাবলুম। যুদ্ধের সময় শত্রু কাউকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে দূরবীনের কাচের মধ্যে টেনে নিয়ে দেখছে, কিংবা সার্চলাইটের এক-ঝলক আলো অন্ধকার চিরে যে-সারিতে সে চলছে সেই সারিটাকে স্পষ্ট করে তুলছে, অথবা যখন পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যস্ত এরোপ্লেন মাথার ওপর পাক খাচ্ছে আর তার মধ্যে অদৃশ্য পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কেউ নিজেকে লুকোনোর কোনো সদুপায় খুঁজে পাচ্ছে না, তখন সেই সৈনিকের মনে যেমন একটা অস্বস্তিকর অনুভূতির সঞ্চার হয়, আমারও তেমনই মনে হতে লাগল।