০২:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৫৩)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
  • 73

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

আর এই সময়টায় নিজের মাথাটাই মনে হয় প্রকাণ্ড বড় হয়ে উঠেছে, হাত দুটোকে মনে হতে থাকে অস্বাভাবিক লম্বা, আর দেহটাকে বেঢপ, জবুথবু আর অনড়। ওগুলোকে যে কিছুতেই লুকোনো যাচ্ছে না, গুটিয়ে, তালগোল পাকিয়ে একটা বতুলে পরিণত করা যাচ্ছে না, ঘরের চালের খড় কিংবা ঘাসের মধ্যে ঘাস হয়ে থাকা যাচ্ছে না, কিংবা ওপরে ভেসে-বেড়ানো নিঃশব্দ শকুনের পাথুরে দৃষ্টির নিচে ছাইরঙা অশান্ত চড়ুই যেমন জড়ো-করা কাঠকুটোর স্তূপের মধ্যে প্রাণপণে মিশে থাকে কিছুতেই তেমনটি হওয়া যাচ্ছে না একথা ভেবে তখন নিজের ওপরই দারুণ বিরক্তি এসে যায়।

হঠাৎ চুবুক চেচিয়ে উঠলেন, ‘ওরা আমাদের দেখতি পেয়েছে!’ আর তারপর, আমাদের আর লুকোচুরি খেলে লাভ নেই একথা প্রমাণ করতেই যেন তিনি চিমনির আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে রাইফেল বাগিয়ে তার বল্টুটা সশব্দে খুলে নিলেন।

চালা থেকে নেমে শেবালভকে খবরটা জানানোর কথা ভাবলুম আমি। কিন্তু বনের ধারে আমাদের বাহিনীর যারা লুকিয়ে ছিল তারা ইতিমধ্যে নিশ্চয় আন্দাজ করেছিল যে আমাদের ফাঁদ পাতা ব্যর্থ হয়েছে, শ্বেতরক্ষীরা আগে ঠিকমতো অবস্থান না নিয়ে আমাদের আক্রমণ করবে না তাই দেখলুম ঘোড়সওয়াররা ফিরে যাওয়ার সময় তাদের পেছনে গাছের আড়াল থেকে কিছু বুলেট ছোড়া হল।

দূর থেকে দেখা গেল, আক্রমণের উপযোগী করে ভাঙা ভাঙা সারিতে সাজানো শ্বেতরক্ষীদের ছোট ছোট প্লেট্রন-দলগুলো ক্রমশ ডাইনে-বাঁয়ে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। যে-গোলমতো টিলাটার ওপর শ্বেতরক্ষীরা ছড়িয়ে ছিল, ছুটন্ত ঘোড়সওয়ারদের শেষ লোকটা সেখানে পৌঁছনোর আগেই ঘোড়াসুদ্ধ তাকে রাস্তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেল। তারপর হাওয়ায় ধুলোর আস্তরণটা সরে যেতে দেখলুম ঘোডাটা একাই রাস্তায় পড়ে আছে, আর তার সওয়ার কাঁজো হয়ে খোঁডড়াতে-খোঁড়াতে তার বাহিনীর দিকে ছুটে চলেছে।

এই সময়ে একটা বুলেট এসে চিমনির ইটের গাঁথনিতে লাগল। একরাশ চুনবালির ধুলোবৃষ্টির মধ্যে আমরা তাড়াতাড়ি মাথা লুকোলুম। চিমনিটা ওদের ভালো নিশানার কাজ করছিল। ওটার পেছনে থাকায় সরাসরি গায়ে গুলি লাগার হাত থেকে আমরা বাঁচছিলুম সত্যি, কিন্তু নড়াচড়া বন্ধ করে আমাদের বেমালুম শুয়ে থাকতে হচ্ছিল।

 

রণক্ষেত্রে (পর্ব-৫৩)

০৮:০০:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

আর এই সময়টায় নিজের মাথাটাই মনে হয় প্রকাণ্ড বড় হয়ে উঠেছে, হাত দুটোকে মনে হতে থাকে অস্বাভাবিক লম্বা, আর দেহটাকে বেঢপ, জবুথবু আর অনড়। ওগুলোকে যে কিছুতেই লুকোনো যাচ্ছে না, গুটিয়ে, তালগোল পাকিয়ে একটা বতুলে পরিণত করা যাচ্ছে না, ঘরের চালের খড় কিংবা ঘাসের মধ্যে ঘাস হয়ে থাকা যাচ্ছে না, কিংবা ওপরে ভেসে-বেড়ানো নিঃশব্দ শকুনের পাথুরে দৃষ্টির নিচে ছাইরঙা অশান্ত চড়ুই যেমন জড়ো-করা কাঠকুটোর স্তূপের মধ্যে প্রাণপণে মিশে থাকে কিছুতেই তেমনটি হওয়া যাচ্ছে না একথা ভেবে তখন নিজের ওপরই দারুণ বিরক্তি এসে যায়।

হঠাৎ চুবুক চেচিয়ে উঠলেন, ‘ওরা আমাদের দেখতি পেয়েছে!’ আর তারপর, আমাদের আর লুকোচুরি খেলে লাভ নেই একথা প্রমাণ করতেই যেন তিনি চিমনির আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে রাইফেল বাগিয়ে তার বল্টুটা সশব্দে খুলে নিলেন।

চালা থেকে নেমে শেবালভকে খবরটা জানানোর কথা ভাবলুম আমি। কিন্তু বনের ধারে আমাদের বাহিনীর যারা লুকিয়ে ছিল তারা ইতিমধ্যে নিশ্চয় আন্দাজ করেছিল যে আমাদের ফাঁদ পাতা ব্যর্থ হয়েছে, শ্বেতরক্ষীরা আগে ঠিকমতো অবস্থান না নিয়ে আমাদের আক্রমণ করবে না তাই দেখলুম ঘোড়সওয়াররা ফিরে যাওয়ার সময় তাদের পেছনে গাছের আড়াল থেকে কিছু বুলেট ছোড়া হল।

দূর থেকে দেখা গেল, আক্রমণের উপযোগী করে ভাঙা ভাঙা সারিতে সাজানো শ্বেতরক্ষীদের ছোট ছোট প্লেট্রন-দলগুলো ক্রমশ ডাইনে-বাঁয়ে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। যে-গোলমতো টিলাটার ওপর শ্বেতরক্ষীরা ছড়িয়ে ছিল, ছুটন্ত ঘোড়সওয়ারদের শেষ লোকটা সেখানে পৌঁছনোর আগেই ঘোড়াসুদ্ধ তাকে রাস্তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেল। তারপর হাওয়ায় ধুলোর আস্তরণটা সরে যেতে দেখলুম ঘোডাটা একাই রাস্তায় পড়ে আছে, আর তার সওয়ার কাঁজো হয়ে খোঁডড়াতে-খোঁড়াতে তার বাহিনীর দিকে ছুটে চলেছে।

এই সময়ে একটা বুলেট এসে চিমনির ইটের গাঁথনিতে লাগল। একরাশ চুনবালির ধুলোবৃষ্টির মধ্যে আমরা তাড়াতাড়ি মাথা লুকোলুম। চিমনিটা ওদের ভালো নিশানার কাজ করছিল। ওটার পেছনে থাকায় সরাসরি গায়ে গুলি লাগার হাত থেকে আমরা বাঁচছিলুম সত্যি, কিন্তু নড়াচড়া বন্ধ করে আমাদের বেমালুম শুয়ে থাকতে হচ্ছিল।