আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
‘গুলির পটিগুলোরে টেনে আন!’ সুখারেভ চিৎকার করে বলছিলেন। ‘হাত নাগাও, নয় চুলোয় যাও!’
ঘাসের ওপর পড়ে-থাকা বাক্সগুলোর একটাকে ধরে আমি হিচড়ে টেনে নিয়ে যেতে লাগলুম। পরে আমার মনে পড়েছিল, তা-ই দেখে শেবালভ আমার কাঁধে একটা খোঁচা দিয়ে গালাগাল দিয়েছিলেন। কেন যে, তা তখন ধরতে পারি নি।
আর তারপরই, আমার যতদূর মনে পড়ে, একটা বুলেট ছুটে এসে নিকিশিনকে পেড়ে ফেলল। কিন্তু না, নিকিশিন বোধহয় এর আগেই মারা পড়েছিলেন, কারণ আমি যখন সেই বাক্সটা টেনে নিয়ে দৌড়চ্ছি তখন তিনি ধমক দিয়ে আমায় বলেছিলেন: ‘বাক্সটারে লিয়ে তুমি তো উল্টাদিকে দৌড়াচ্চ দেখি! আরে, ওটারে মেশিনগানের কাছে লিয়ে যাও!’ আর এরপরই তাঁকে পড়ে যেতে দেখি।
ফেদিয়ার ঘোড়াটা সেদিন গুলিতে মারা যায়। ও তখন সেই ঘোড়ার পিঠে বসে।
চুবুক পরে বলছিলেন, ‘ফেদিয়াটা কানচে। দেখি পাগলা ঘাসের মধ্যি মাথা গজে অঝোরে কানচে। তা, কাছে গিয়ে বললাম, ‘বোকামি করিস না, মানুষের জন্যিই কান্নাকাটির ফুরসত নেই, তার আবার।’ অমনি ফেদিয়া করল কী, বোঁ-করে এক পাক ঘুরে পিস্তলটারে তুলে ধরল। কইল, ‘চলি যাও। চলি যাও নইলে গুলি করব।’ ওর চোখ দুটা কেমন পাগলের পারা নাগল। চলি এলাম। পাগলের সঙ্গে কথা কয়ে লাভকী? ফেদিয়া ছোকরাটা বাজে, বুইলে?’ পাইপটা ধরাতে-ধরাতে চুবুক বললেন, ‘ওরে আমি বিশ্বেস করি নে।’
‘ওকে বিশ্বাস করেন না মানে?’ আমি বললুম। ‘ওর মতো সাহসী লোক কটা আছে?’
‘তাতে হলটা কী? সব সত্ত্বেও ও ছোকরাটা বাজে। ছোকরা মহা উচ্ছৃঙখল, পার্টি’র নোকদের মানতি চায় না। ও কয়, ‘আমার কর্মসূচি হল গিয়ে শ্বেতরক্ষীরা সব কটা নিকেশ না-হওয়া পেয্যন্ত ওদের সঙ্গে লড়ে যাওয়া। তারপর আমরা কাঁ করব না করব সে সময় হলে দেখা যাবে।’ আমার বাপু ওই কর্মসূচি পছন্দ লয়। ওটা কর্মসূচিই লয়, সব ধোঁয়া। আর বাতাসে ধোঁয়া কেটে গেলি দেখা যাবে, কিছুই বর্তমান নেই!’