আর্কাদি গাইদার
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
একদিন আমরা যখন আরুখিপোকা গ্রাম থেকে রওনা হওয়ার তোড়জোড় করছি, তখন রওনা হবার ঠিক আগে আমরা বাহিনীর লোকেরা রাস্তা-বরাবর সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লুম মাথা-গুনতির অপেক্ষায়। গুনতির সময় বাঁ-দিকের সবশেষের লোকটি, আমাদের বে’টেখাটো খট্রাশ (পরে ও মারা গিয়েছিল), চে’চিয়ে বলল: ‘একশো সাতচল্লিশ!’
ওর আগে পর্যন্ত খট্রাশ সব সময়েই হয়ে এসেছিল একশো ছেচল্লিশ জনের জন। তাই শেবালভ গর্জন করে বললেন:
‘ফিরেফিরতি গুতি!’
দেখা গেল, খট্রাশ আবার সেই একশো সাতচল্লিশ জনের জন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
খেপে গেলেন শেবালভ। ‘কী সব কাণ্ড-মান্ড হচ্চে? সুখারেভ, দ্যাখো তো গুতিতে গণ্ডগোল করচে কে?’
‘কেউ না,’ আমাদের সারি থেকে চুবুক জবাব দিলেন। ‘আমাদের মধ্যি একজন নোক বাড়তি আচে।’
বাস্তবিক, দেখা গেল, সারিতে চুবুক আর নিকিশিনের মধ্যে একজন নতুন লোক দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটার বয়েস আঠারো কিংবা বড়জোর উনিশ হবে। কালোমত একটি ছেলে, এলোমেলো একমাথা কোঁকড়ানো চুল।
শেবালভ তো অবাক। জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি এখেনে কী করচ, বাপু?’ ছেলেটি চুপ করে রইল।
চুকে বললেন, ‘ও দেখি দিব্যি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে গেল। তা আমি ভাবলাম বুঝি দলে লতুন নোক নেয়া হয়েচে। রাইফেল লিয়ে এসে এখেনটায় দাঁড়াল।’
‘কে তুমি?’ শেবালভ চটে আবার প্রশ্ন করলেন।
‘আমি… আমি বেদে, লাল বেদে,’ ছেলেটি এবার উত্তর দিল।
‘ল-লাল বে-বে-দে?’ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে শেবালভ প্রশ্ন করলেন। তারপর হঠাৎ হেসে উঠে বললেন, ‘কিন্তু তুমি তো সাবালক বেদে লও দেখি, তুমি তো বাচ্চা বেদে!’
ছেলেটা সেই থেকে রয়ে গেল আমাদের সঙ্গে। আর থেকে গেল ওর ‘বাচ্চা বেদে’ ডাকনামটাও।
সেই বাচ্চা বেদের আঘাত লেগেছিল বুকে। তামাটে মুখখানা ওর হয়ে গিয়েছিল বিবর্ণ, ঠোঁট দুটো শুকিয়ে গিয়েছিল আর কী এক অপরিচিত ভাষায় ও দ্রুত বিড়বিড় করে যাচ্ছিল।