সারাক্ষণ রিপোর্ট
নিম্নআয়ের পরিবারে পুষ্টির সংকট
ঢাকায় যেসব পরিবার মাসে ৫০ হাজার টাকার কম আয় করে, তারা প্রোটিনজাত খাবার—যেমন মাছ, দুধ, মাংস—সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। উচ্চমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি এবং আয়-ব্যয়ের বৈষম্যের কারণে এসব পরিবার খাবারের মানে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করছে।
মাছ খাওয়া কমছে, চাহিদা পূরণ হচ্ছে না
বাংলাদেশের মোট প্রাণিজ প্রোটিনের প্রায় ৬০–৬৩% আসে মাছ থেকে। ঢাকার নিম্নআয়ের পরিবারগুলো মাছ খায় সাধারণত মাসে ৪ থেকে ১৭ দিন। তারা সাধারণত সস্তা, খামারজাত মাছ যেমন রুই, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস বা কৈ বেছে নেয়। যদিও তারা জানে মাছের পুষ্টিগুণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তথাপি ৮৯% পরিবারই বলেছে, প্রতিদিন মাছ খাওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই।
দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে প্রবেশাধিকার সীমিত
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার নিম্নআয়ের পরিবারগুলোর কাছে বিলাসিতা বলে বিবেচিত। জাতীয় গড় অনুসারে, গ্রামে মাথাপিছু দুধ খাওয়ার পরিমাণ দৈনিক মাত্র ৩০ গ্রাম। ঢাকার মতো শহরের বস্তি এলাকায় এই পরিমাণ আরও কম। অতিরিক্ত খরচের কারণে দুধের মতো পুষ্টিকর খাদ্য প্রায় বাদ পড়েছে।
মাংস-ডিম কেবল বিশেষ দিনে, ভরসা ডাল-ভাত
প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে ঢাকার দরিদ্র পরিবারগুলো সাধারণত নির্ভর করে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ওপর—যেমন ডাল। মাংস ও ডিম সাধারণত ঈদ বা উৎসবের মতো বিশেষ সময়ে খাওয়া হয়। ফলে শিশুদের দৈনিক প্রোটিন গ্রহণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, বস্তির শিশুরা গড়ে দৈনিক মাত্র ১৬.৬ গ্রাম প্রোটিন খায়, যেখানে ১৫ বছর আগে এই পরিমাণ ছিল ২৬ গ্রাম।
খাবারে খরচ বেশি, তবু পুষ্টি কম
ঢাকার নিম্নআয়ের পরিবারগুলো মাসিক আয়ের প্রায় ৪২% খরচ করে খাবারের পেছনে। অথচ অর্থনৈতিক সংকট বা জরুরি অবস্থায় তাদের দৈনিক খাবারের খরচ কমে আসে ৩০ টাকার নিচে, যা খাদ্যবৈচিত্র্য ও পুষ্টি—উভয়কেই বিপন্ন করে।
শিশুদের ওপর সরাসরি প্রভাব
কম প্রোটিন গ্রহণের কারণে এসব পরিবারের শিশুরা অপুষ্টি, খর্বাকৃতি (stunting), দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতাসহ নানান স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। অধিকাংশ খাবারই চাল-ভাতের মতো কার্বোহাইড্রেটনির্ভর, যা শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সরবরাহ করতে ব্যর্থ।
ঢাকার নিম্নআয়ের পরিবারগুলো আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রয়োজনীয় প্রোটিনজাত খাবার পাচ্ছে না। মাছ, দুধ ও মাংসের মতো খাবার তাদের দৈনন্দিন খাবারে নেই বললেই চলে। এর ফলস্বরূপ শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি বাড়ছে। এই সংকট কাটাতে দরকার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে লক্ষ্যভিত্তিক খাদ্য সহায়তা এবং পুষ্টিবিষয়ক উদ্যোগ।