১০:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি: এক বহুমাত্রিক সংকট

  • Sarakhon Report
  • ০৪:২৮:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • 118

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ঢাকাবাংলাদেশ — ফেনসিডিল, ইয়াবা ও হেরোইনের মতো অবৈধ মাদকের ব্যবহার বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সাম্প্রতিক গবেষণা ও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, এই সংকট কেবল ব্যক্তিগত প্রবণতা নয়—বরং এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক ও কাঠামোগত নানা বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি জটিল সমস্যা।

ব্যবহারের বিস্তার ও জনতাত্ত্বিক চিত্র

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব রিসার্চ ইন মেডিকেল সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মাদকসেবীদের মধ্যে ইয়াবাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মাদক। এরপরের অবস্থানে আছে গাঁজা, ফেনসিডিল ও হেরোইন। ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই পুরুষ, যাদের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে অনেকেই বেকার এবং নিম্নআয় ও প্রান্তিক শ্রেণির।

সামাজিকঅর্থনৈতিক ও মানসিক কারণ

বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, সহপাঠী বা বন্ধুদের চাপে পড়া, বেকারত্ব, পারিবারিক সমস্যায় ভোগা ও মানসিক চাপ মাদকাসক্তির বড় কারণ। বাংলাদেশে অবৈধ মাদক ব্যবহারের উপর করা একটি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চাকরি না পাওয়া, অর্থনৈতিক সমস্যায় হতাশা, জিজ্ঞাসা বা কৌতূহল এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে মাদক গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে।

সহজলভ্যতা ও চোরাচালান

মাদক সহজে পাওয়া যাওয়াও এই সমস্যা আরও জটিল করে তুলেছে। ফেনসিডিল—যা একটি কোডিন-যুক্ত কাশির সিরাপ—আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও এখনও সহজে পাওয়া যায় এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে চোরাইপথে আমদানি হয়। ইয়াবা—যা মেথঅ্যামফেটামিন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণ—মূলত মিয়ানমার থেকে দেশের ভাঙা সীমান্ত ব্যবহার করে প্রবেশ করে। যদিও ইয়াবার আগমনের পর হেরোইনের ব্যবহার কমে এসেছে, তবুও তা একেবারে বন্ধ হয়নি।

স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক প্রভাব

মাদকাসক্তির কারণে ঘুমের সমস্যা, স্মৃতিভ্রষ্টতা ও সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, অপরাধপ্রবণতা বাড়ে এবং স্বাস্থ্যখাতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতে, দেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বহির্বিভাগে আসা রোগীদের প্রায় ১০ শতাংশই মাদক-সম্পর্কিত জটিলতায় ভোগেন।

সরকারের পদক্ষেপ ও পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জ

সরকার মাদক চোরাচালান ও ব্যবহার রোধে কিছু উদ্যোগ নিলেও তা যথেষ্ট নয়। দেশে এখনো পর্যাপ্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র নেই, আর যেগুলো আছে সেগুলোতেও প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিতে সক্ষম নয়। মাদকাসক্তি নিয়ে সমাজে প্রচলিত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অনেককেই সাহায্য চাইতে নিরুৎসাহিত করে।

সমাধানের পথ

বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাদক ব্যবহার রোধে প্রয়োজন একটি সামগ্রিক ও বহুমাত্রিক কৌশল। সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা, পুনর্বাসন সেবার পরিধি বাড়ানো এবং স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণ জরুরি।

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি: এক বহুমাত্রিক সংকট

০৪:২৮:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ঢাকাবাংলাদেশ — ফেনসিডিল, ইয়াবা ও হেরোইনের মতো অবৈধ মাদকের ব্যবহার বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সাম্প্রতিক গবেষণা ও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, এই সংকট কেবল ব্যক্তিগত প্রবণতা নয়—বরং এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক ও কাঠামোগত নানা বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত একটি জটিল সমস্যা।

ব্যবহারের বিস্তার ও জনতাত্ত্বিক চিত্র

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব রিসার্চ ইন মেডিকেল সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে মাদকসেবীদের মধ্যে ইয়াবাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মাদক। এরপরের অবস্থানে আছে গাঁজা, ফেনসিডিল ও হেরোইন। ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই পুরুষ, যাদের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে অনেকেই বেকার এবং নিম্নআয় ও প্রান্তিক শ্রেণির।

সামাজিকঅর্থনৈতিক ও মানসিক কারণ

বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, সহপাঠী বা বন্ধুদের চাপে পড়া, বেকারত্ব, পারিবারিক সমস্যায় ভোগা ও মানসিক চাপ মাদকাসক্তির বড় কারণ। বাংলাদেশে অবৈধ মাদক ব্যবহারের উপর করা একটি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে চাকরি না পাওয়া, অর্থনৈতিক সমস্যায় হতাশা, জিজ্ঞাসা বা কৌতূহল এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে মাদক গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে।

সহজলভ্যতা ও চোরাচালান

মাদক সহজে পাওয়া যাওয়াও এই সমস্যা আরও জটিল করে তুলেছে। ফেনসিডিল—যা একটি কোডিন-যুক্ত কাশির সিরাপ—আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও এখনও সহজে পাওয়া যায় এবং প্রতিবেশী দেশ থেকে চোরাইপথে আমদানি হয়। ইয়াবা—যা মেথঅ্যামফেটামিন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণ—মূলত মিয়ানমার থেকে দেশের ভাঙা সীমান্ত ব্যবহার করে প্রবেশ করে। যদিও ইয়াবার আগমনের পর হেরোইনের ব্যবহার কমে এসেছে, তবুও তা একেবারে বন্ধ হয়নি।

স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক প্রভাব

মাদকাসক্তির কারণে ঘুমের সমস্যা, স্মৃতিভ্রষ্টতা ও সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, অপরাধপ্রবণতা বাড়ে এবং স্বাস্থ্যখাতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতে, দেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বহির্বিভাগে আসা রোগীদের প্রায় ১০ শতাংশই মাদক-সম্পর্কিত জটিলতায় ভোগেন।

সরকারের পদক্ষেপ ও পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জ

সরকার মাদক চোরাচালান ও ব্যবহার রোধে কিছু উদ্যোগ নিলেও তা যথেষ্ট নয়। দেশে এখনো পর্যাপ্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র নেই, আর যেগুলো আছে সেগুলোতেও প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিতে সক্ষম নয়। মাদকাসক্তি নিয়ে সমাজে প্রচলিত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অনেককেই সাহায্য চাইতে নিরুৎসাহিত করে।

সমাধানের পথ

বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাদক ব্যবহার রোধে প্রয়োজন একটি সামগ্রিক ও বহুমাত্রিক কৌশল। সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা, পুনর্বাসন সেবার পরিধি বাড়ানো এবং স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণ জরুরি।