০৯:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

দ্রব্যমূল্যে চাপ বাড়াবে ডলারের দাপট

  • Sarakhon Report
  • ০৪:৩৯:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • 79

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশীয় মুদ্রা এখন “ম্যানেজড ফ্লোটিং রেট” পদ্ধতিতে চলবে, যেখানে নির্দিষ্ট একটি অপ্রকাশিত সীমার মধ্যে লেনদেন চলবে এবং দর চূড়ান্তভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এই সিদ্ধান্তের পেছনে আইএমএফ-এর চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণ ছাড়ের পথ সুগম করার কৌশল রয়েছে, তবে এর সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় নতুন চাপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

ভাসমান বিনিময় হার: কীভাবে প্রভাব ফেলবে?

বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে গেলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ একটি আমদানিনির্ভর অর্থনীতি, বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যে। ফলে ডলারের দর বাড়লে এই পণ্যের মূল্য স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি হস্তক্ষেপ তহবিল গঠন করেছে, যার মাধ্যমে বাজারে ডলার বিক্রি করে দর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বাজার চাহিদা ও সরবরাহের তুলনায় এই তহবিল সীমিত হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে দ্রব্যমূল্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি: কোন খাতে চাপ বেশি?

  • খাদ্যদ্রব্য: চাল, ডাল, তেল, গমের মতো পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ভাসমান হারে ডলার শক্তিশালী হলে এসব পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
  • জ্বালানি: তেল ও গ্যাস আমদানির জন্য সরকারকে বাড়তি মূল্য গুনতে হবে, যার প্রভাব পড়ে পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতে, ফলে পরোক্ষভাবে উৎপাদন খরচ বাড়বে।

  • ঔষধ ও স্বাস্থ্যসেবা: অধিকাংশ ওষুধের কাঁচামাল আসে ভারত ও চীন থেকে। টাকার মান কমে গেলে ওষুধের দাম বাড়বে, স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়ও বাড়বে।

সাধারণ মানুষের ওপর কী প্রভাব পড়বে?

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ইতোমধ্যেই বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভব করছেন। এখন ডলারের দর আরও বাড়লে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে এবং পরিবারের মাসিক ব্যয়ের ভার আরও বাড়বে। অনেক পরিবারকে স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে সরে গিয়ে ব্যয়সংকোচন করতে হতে পারে।

ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের দৃষ্টিকোণ

বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) মনে করে, টাকার মান কমে গেলে রপ্তানিকারকরা স্বল্পমেয়াদে কিছুটা সুবিধা পেলেও আমদানিকৃত কাঁচামালের খরচ বাড়বে, যা উৎপাদন ব্যয়ে প্রভাব ফেলবে।

 

ব্যাংক মালিকরা সতর্কভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। অনেকেই মনে করছেন, বিনিময় হার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা না থাকলে বাজারে অস্থিরতা বাড়বে এবং ‘কার্টেল’ গঠন করে কিছু ব্যাংক ডলারের দর বাড়িয়ে দিতে পারে।

কীভাবে সামলানো যেতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুনির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণ করতে হবে।

  • বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে
  • অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
  • কৃষি ও স্থানীয় উৎপাদন খাতে প্রণোদনা দিতে হবে
  • সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে

টাকার ভাসমান বিনিময় হার আন্তর্জাতিক ঋণ ছাড় ও বাজার সংস্কারের অংশ হলেও স্বল্পমেয়াদে সাধারণ মানুষের ব্যয়ভার বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুসংগঠিত পদক্ষেপ ছাড়া এই পরিবর্তন অর্থনীতির দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৪২)

দ্রব্যমূল্যে চাপ বাড়াবে ডলারের দাপট

০৪:৩৯:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশীয় মুদ্রা এখন “ম্যানেজড ফ্লোটিং রেট” পদ্ধতিতে চলবে, যেখানে নির্দিষ্ট একটি অপ্রকাশিত সীমার মধ্যে লেনদেন চলবে এবং দর চূড়ান্তভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এই সিদ্ধান্তের পেছনে আইএমএফ-এর চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ঋণ ছাড়ের পথ সুগম করার কৌশল রয়েছে, তবে এর সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় নতুন চাপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

ভাসমান বিনিময় হার: কীভাবে প্রভাব ফেলবে?

বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে গেলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ একটি আমদানিনির্ভর অর্থনীতি, বিশেষ করে খাদ্য, জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যে। ফলে ডলারের দর বাড়লে এই পণ্যের মূল্য স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি হস্তক্ষেপ তহবিল গঠন করেছে, যার মাধ্যমে বাজারে ডলার বিক্রি করে দর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বাজার চাহিদা ও সরবরাহের তুলনায় এই তহবিল সীমিত হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে দ্রব্যমূল্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি: কোন খাতে চাপ বেশি?

  • খাদ্যদ্রব্য: চাল, ডাল, তেল, গমের মতো পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ভাসমান হারে ডলার শক্তিশালী হলে এসব পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
  • জ্বালানি: তেল ও গ্যাস আমদানির জন্য সরকারকে বাড়তি মূল্য গুনতে হবে, যার প্রভাব পড়ে পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতে, ফলে পরোক্ষভাবে উৎপাদন খরচ বাড়বে।

  • ঔষধ ও স্বাস্থ্যসেবা: অধিকাংশ ওষুধের কাঁচামাল আসে ভারত ও চীন থেকে। টাকার মান কমে গেলে ওষুধের দাম বাড়বে, স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়ও বাড়বে।

সাধারণ মানুষের ওপর কী প্রভাব পড়বে?

নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ইতোমধ্যেই বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভব করছেন। এখন ডলারের দর আরও বাড়লে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে এবং পরিবারের মাসিক ব্যয়ের ভার আরও বাড়বে। অনেক পরিবারকে স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে সরে গিয়ে ব্যয়সংকোচন করতে হতে পারে।

ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের দৃষ্টিকোণ

বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) মনে করে, টাকার মান কমে গেলে রপ্তানিকারকরা স্বল্পমেয়াদে কিছুটা সুবিধা পেলেও আমদানিকৃত কাঁচামালের খরচ বাড়বে, যা উৎপাদন ব্যয়ে প্রভাব ফেলবে।

 

ব্যাংক মালিকরা সতর্কভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। অনেকেই মনে করছেন, বিনিময় হার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা না থাকলে বাজারে অস্থিরতা বাড়বে এবং ‘কার্টেল’ গঠন করে কিছু ব্যাংক ডলারের দর বাড়িয়ে দিতে পারে।

কীভাবে সামলানো যেতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুনির্দিষ্ট নীতি নির্ধারণ করতে হবে।

  • বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে
  • অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
  • কৃষি ও স্থানীয় উৎপাদন খাতে প্রণোদনা দিতে হবে
  • সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে

টাকার ভাসমান বিনিময় হার আন্তর্জাতিক ঋণ ছাড় ও বাজার সংস্কারের অংশ হলেও স্বল্পমেয়াদে সাধারণ মানুষের ব্যয়ভার বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুসংগঠিত পদক্ষেপ ছাড়া এই পরিবর্তন অর্থনীতির দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।