০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৫১) সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন: ভারতে দুই বছরের শিশুর কামড়ে গোখরা সাপের মর্মান্তিক মৃত্যু প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-২৫১) আমেরিকার পরমাণু গবেষণাগারে ভবিষ্যতের অস্ত্র ও শক্তির সন্ধান শাংহাইয়ে অ্যামাজনের এআই গবেষণা ল্যাব বন্ধ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি আমাদের কম বুদ্ধিমান করে দিচ্ছে? ডাকাতিয়া নদী: শতবর্ষের যাত্রাপথে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার প্রাণ হিউএনচাঙ (পর্ব-১৫৯) ডানপন্থী উত্থান: শেখ হাসিনার শাসনের পর বাংলাদেশে চরম ডান শক্তির প্রসার নিয়ে বিএনপির শঙ্কা কামচাটকায় ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে সারা প্রশান্ত মহাসাগরে সুনামি সতর্কতা

১৫ বছরে বিদ্যুৎ-বিপ্লবে বাংলাদেশ, পিছিয়ে পড়া নাইজেরিয়া

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • 103

সারাক্ষণ রিপোর্ট

দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ এক সময় বিদ্যুৎ-সংকটে ভুগলেও বিগত পনেরো বছরে বৈদ্যুতিক অবকাঠামোকে এমনভাবে শক্তিশালী করেছে যে, একসময়ের “আফ্রিকার বিদ্যুৎ-জায়ান্ট” খ্যাত নাইজেরিয়াকেও পেছনে ফেলেছে। বর্তমান বাংলাদেশে যেখানে প্রায় সবার ঘরে আলো জ্বলছে, নাইজেরিয়ায় ৯ কোটির বেশি মানুষ এখনও বিদ্যুৎ-বঞ্চিত।

নাইজেরিয়ার বিদ্যুৎ-সংকট

  • জাতীয় গ্রিডে সর্বোচ্চ ৬ গিগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ কখনও প্রবাহিত হয়নি; অতিরিক্ত চাপেই প্রায়ই গ্রিড ধসে পড়ে।
  • ২৩ কোটি জনসংখ্যার ৪৫ ভাগ—প্রায় ৯ কোটি মানুষ—কোনও দিন গ্রিড-সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ পাননি।
  • জেনারেটর নির্ভরতা এতই বেশি যে, গ্রিড থেকে যেটুকু শক্তি আসে, জেনারেটর তার দ্বিগুণ সরবরাহ করে, ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ে ও দূষণ তীব্র হয়।
  • বাংলাদেশের অগ্রগতি
  • ক্যাপাসিটির লাফ: ২০০৯ সালে যেখানে মোট স্থাপিত ক্ষমতা ছিল সাড়ে ৫ গিগাওয়াট, ২০২৫ সালের এপ্রিল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ গিগাওয়াট—প্রায় ছয়গুণ বৃদ্ধি।
  • প্রায় সার্বজনীন বিদ্যুৎ-সুবিধা: ২০২২ সালে বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতা ৯৯.৪ শতাংশে পৌঁছেছে; ৩০ বছরে ১০ কোটি মানুষের কাছে প্রথমবার বিদ্যুৎ পৌঁছেছে।
  • বিতরণ ও রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন: পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (REB) এবং সোলার হোম সিস্টেমের (SHS) বিস্তার গ্রিড-বহির্ভূত এলাকায় দ্রুত আলো জ্বালিয়েছে।

নীতিগত চালিকা শক্তি

প্রণোদনা-ভিত্তিক IPP মডেল: স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদকদের (IPP) দীর্ঘমেয়াদি গ্যারান্টিযুক্ত ক্রয়-চুক্তি (PPA) বিনিয়োগ নিশ্চিত করে।

ঢালাও গ্রিড সম্প্রসারণ: ১ লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি নতুন ট্রান্সমিশন-লাইনের পাশাপাশি স্মার্ট সাব-স্টেশন স্থাপন।

জ্বালানি বৈচিত্র্য: গ্যাস-ভিত্তিক প্ল্যান্টের সঙ্গে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG), কয়লা, নবায়নযোগ্য শক্তি ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (২০২৫-এ আংশিক চালু) যুক্ত করা।

সুবিধাভোগী-ভিত্তিক ভর্তুকি ও ট্যারিফ সংস্কার: নিম্ন-আয়ের গ্রাহককে সুরক্ষা দিয়ে বর্ধিত ব্যয় আদায় করা।

সার্বজনীন বিদ্যুৎ-সুবিধার পথে

বিশ্বব্যাংক-আইইএ বিশ্লেষণ বলছে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে বাংলাদেশে; অল্প সময়ে প্রায় পূর্ণ বিদ্যুৎ-কভারেজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দেশটি।

জুনে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে নেপাল

চ্যালেঞ্জ ও সামনে যা করতে হবে

  • জ্বালানি আমদানি-নির্ভরতা: বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামে অস্থিরতা বজায় থাকলে ব্যয় বেড়ে যাবে।
  • গ্রিড ভোল্টেজ-নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিকীকরণ: উচ্চ চাহিদার সময়ে ভারসাম্য রক্ষায় আরও স্মার্ট সিস্টেম দরকার।
  • নবায়নযোগ্য লক্ষ্য: ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি অর্জনে নীতি-সমন্বয় জরুরি।

বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে

বিদ্যুৎখাত বিশ্লেষক ড. মোমিনুল হক মনে করেন, “ব্যাক-আপ জেনারেটর নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশকে দ্রুত গ্রিডে সাশ্রয়ী নবায়নযোগ্য উৎস জুড়তে হবে। তবে সামগ্রিক উন্নয়নের নিরিখে গত দেড় দশকে দেশের বিদ্যুৎপথে ‘টাইগার টার্ন-অ্যারাউন্ড’ ঘটেছে, যা আফ্রিকার বৃহত্তম অর্থনীতিকেও অনুপ্রেরণা দিতে পারে।”

উপসংহার

এক দশক আগেও যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল নিত্যসঙ্গী, আজ বাংলাদেশ প্রায় ৩০ গিগাওয়াট স্থাপিত ক্ষমতাসহ সার্বজনীন বিদ্যুৎ-সুবিধার দ্বারপ্রান্তে। বিপরীতে, প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ নাইজেরিয়া এখনও টিকে আছে ৬ গিগাওয়াটের দুর্বল গ্রিড আর লক্ষ কোটি টাকার জেনারেটর নির্ভরতার উপর। উভয় দেশের অভিজ্ঞতা দেখায়, রাজনৈতিক অগ্রাধিকার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ ছাড়া বিদ্যুৎ-স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৫১)

১৫ বছরে বিদ্যুৎ-বিপ্লবে বাংলাদেশ, পিছিয়ে পড়া নাইজেরিয়া

১০:০০:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ এক সময় বিদ্যুৎ-সংকটে ভুগলেও বিগত পনেরো বছরে বৈদ্যুতিক অবকাঠামোকে এমনভাবে শক্তিশালী করেছে যে, একসময়ের “আফ্রিকার বিদ্যুৎ-জায়ান্ট” খ্যাত নাইজেরিয়াকেও পেছনে ফেলেছে। বর্তমান বাংলাদেশে যেখানে প্রায় সবার ঘরে আলো জ্বলছে, নাইজেরিয়ায় ৯ কোটির বেশি মানুষ এখনও বিদ্যুৎ-বঞ্চিত।

নাইজেরিয়ার বিদ্যুৎ-সংকট

  • জাতীয় গ্রিডে সর্বোচ্চ ৬ গিগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ কখনও প্রবাহিত হয়নি; অতিরিক্ত চাপেই প্রায়ই গ্রিড ধসে পড়ে।
  • ২৩ কোটি জনসংখ্যার ৪৫ ভাগ—প্রায় ৯ কোটি মানুষ—কোনও দিন গ্রিড-সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ পাননি।
  • জেনারেটর নির্ভরতা এতই বেশি যে, গ্রিড থেকে যেটুকু শক্তি আসে, জেনারেটর তার দ্বিগুণ সরবরাহ করে, ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ে ও দূষণ তীব্র হয়।
  • বাংলাদেশের অগ্রগতি
  • ক্যাপাসিটির লাফ: ২০০৯ সালে যেখানে মোট স্থাপিত ক্ষমতা ছিল সাড়ে ৫ গিগাওয়াট, ২০২৫ সালের এপ্রিল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯ গিগাওয়াট—প্রায় ছয়গুণ বৃদ্ধি।
  • প্রায় সার্বজনীন বিদ্যুৎ-সুবিধা: ২০২২ সালে বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতা ৯৯.৪ শতাংশে পৌঁছেছে; ৩০ বছরে ১০ কোটি মানুষের কাছে প্রথমবার বিদ্যুৎ পৌঁছেছে।
  • বিতরণ ও রুরাল ইলেক্ট্রিফিকেশন: পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (REB) এবং সোলার হোম সিস্টেমের (SHS) বিস্তার গ্রিড-বহির্ভূত এলাকায় দ্রুত আলো জ্বালিয়েছে।

নীতিগত চালিকা শক্তি

প্রণোদনা-ভিত্তিক IPP মডেল: স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদকদের (IPP) দীর্ঘমেয়াদি গ্যারান্টিযুক্ত ক্রয়-চুক্তি (PPA) বিনিয়োগ নিশ্চিত করে।

ঢালাও গ্রিড সম্প্রসারণ: ১ লক্ষ কিলোমিটারেরও বেশি নতুন ট্রান্সমিশন-লাইনের পাশাপাশি স্মার্ট সাব-স্টেশন স্থাপন।

জ্বালানি বৈচিত্র্য: গ্যাস-ভিত্তিক প্ল্যান্টের সঙ্গে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG), কয়লা, নবায়নযোগ্য শক্তি ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (২০২৫-এ আংশিক চালু) যুক্ত করা।

সুবিধাভোগী-ভিত্তিক ভর্তুকি ও ট্যারিফ সংস্কার: নিম্ন-আয়ের গ্রাহককে সুরক্ষা দিয়ে বর্ধিত ব্যয় আদায় করা।

সার্বজনীন বিদ্যুৎ-সুবিধার পথে

বিশ্বব্যাংক-আইইএ বিশ্লেষণ বলছে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে বাংলাদেশে; অল্প সময়ে প্রায় পূর্ণ বিদ্যুৎ-কভারেজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দেশটি।

জুনে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করবে নেপাল

চ্যালেঞ্জ ও সামনে যা করতে হবে

  • জ্বালানি আমদানি-নির্ভরতা: বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামে অস্থিরতা বজায় থাকলে ব্যয় বেড়ে যাবে।
  • গ্রিড ভোল্টেজ-নিয়ন্ত্রণ ও আধুনিকীকরণ: উচ্চ চাহিদার সময়ে ভারসাম্য রক্ষায় আরও স্মার্ট সিস্টেম দরকার।
  • নবায়নযোগ্য লক্ষ্য: ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি অর্জনে নীতি-সমন্বয় জরুরি।

বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে

বিদ্যুৎখাত বিশ্লেষক ড. মোমিনুল হক মনে করেন, “ব্যাক-আপ জেনারেটর নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশকে দ্রুত গ্রিডে সাশ্রয়ী নবায়নযোগ্য উৎস জুড়তে হবে। তবে সামগ্রিক উন্নয়নের নিরিখে গত দেড় দশকে দেশের বিদ্যুৎপথে ‘টাইগার টার্ন-অ্যারাউন্ড’ ঘটেছে, যা আফ্রিকার বৃহত্তম অর্থনীতিকেও অনুপ্রেরণা দিতে পারে।”

উপসংহার

এক দশক আগেও যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল নিত্যসঙ্গী, আজ বাংলাদেশ প্রায় ৩০ গিগাওয়াট স্থাপিত ক্ষমতাসহ সার্বজনীন বিদ্যুৎ-সুবিধার দ্বারপ্রান্তে। বিপরীতে, প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ নাইজেরিয়া এখনও টিকে আছে ৬ গিগাওয়াটের দুর্বল গ্রিড আর লক্ষ কোটি টাকার জেনারেটর নির্ভরতার উপর। উভয় দেশের অভিজ্ঞতা দেখায়, রাজনৈতিক অগ্রাধিকার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগ ছাড়া বিদ্যুৎ-স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।