০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

ভারতীয় মসলায় ঈদের স্বাদ, দাম নিয়ে শঙ্কা

  • Sarakhon Report
  • ০৪:৩৭:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • 106

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • বেশিরভাগ গরম মসলার দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে
  • ভারতের সরবরাহ কম এবং কিছু আমদানিকারক সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে
  • স্থানীয়ভাবে মজুতদারির কারণে। অনেক ব্যবসায়ী চাহিদা বাড়ার সুযোগে পুরনো মজুত উচ্চ দামে বিক্রি করছেন
  • সরকারের নজরদারির অভাব এবং আমদানি নির্ভরতার ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিবার ঈদেই দাম বাড়ার ভোগান্তিতে পড়ছেন

বাংলাদেশের কোরবানির ঈদের বাজার অনেকাংশেই নির্ভরশীল ভারতীয় মসলার ওপর। এলাচজিরাদারুচিনিলবঙ্গসহ বেশিরভাগ গরম মসলা আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। ঈদের প্রধান উৎসবগুলোতে মসলার চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়আর এ সময়েই বাজারে দামের হঠাৎ উল্লম্ফন ঘটে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

চালডালতেল বা মাংস নয়ঈদের রান্নার স্বাদ নির্ভর করে যে জিনিসটিতেতা হলো মসলা। আর এই মসলার বড় অংশই আসে ভারত থেকে। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছেঈদ সামনে রেখে ইতিমধ্যে ভারত থেকে আমদানিকৃত বেশ কিছু মসলার দাম গত বছরের তুলনায় বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে এলাচলবঙ্গজয়ফল ও দারুচিনি।

উচ্চ শুল্কে বাড়ছে গরম মসলা ও শুকনা ফলের দাম

চকবাজারকাওরান বাজার ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়ভারতের সরবরাহ কিছুটা কমআর গুটিকয়েক আমদানিকারক সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়এক মাস আগে প্রতি কেজি এলাচের পাইকারি দাম ছিল ৫০০০ টাকাএখন তা ৫৩০০ টাকায় ঠেকেছে। খুচরায় আরও বেশি। একইভাবে লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩৩০ টাকায়যা গত বছর ঈদের আগে ছিল ১২০০ টাকা।

বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ীগুয়েতেমালা থেকে আমদানি করা এলাচের সরবরাহ কমতবে ভারত থেকে আসা জিরাদারুচিনি ও অন্যান্য মসলার পরিমাণ যথেষ্ট। তারপরও দাম বাড়ছে মূলত ভারতের বাজারে উৎস পর্যায়ে দাম বেশি থাকায় এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মজুতদারির কারণে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারেও ভারতীয় মসলার দামে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেনচাহিদা বাড়লেও নতুন করে সরবরাহ তেমন আসেনি। পুরনো মজুত বিক্রি করেই চলতে হচ্ছে। ফলে সুযোগ বুঝে অনেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন।

ভোক্তা অধিকার বিভাগ' চায় ক্যাব

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব বলছেসরকারের বাজার তদারকির অভাবেই এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সরাসরি পুরনো সিন্ডিকেট’-কে দায়ী করে বলেনসরকার নীরব থাকায় একই চক্র বারবার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কোরবানির ঈদের মতো বড় উৎসবেও সাধারণ মানুষ পকেট কাটার শিকার হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতেদেশের কৃষকরা মসলা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেনআর আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে আমদানিকারক ও কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। যদি এখনই মসলার আমদানি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়ি না আনা হয়তাহলে প্রতি ঈদেই ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে।

ঈদ আসতে এখনো প্রায় দুই সপ্তাহ বাকি। কিন্তু এখনই যেভাবে ভারতীয় মসলার ওপর নির্ভরতা এবং তার মূল্যবৃদ্ধি চোখে পড়ছেতাতে আশঙ্কা করা হচ্ছেঈদের কাছাকাছি গিয়ে দাম আরও বাড়তে পারে। এতে ভোগান্তির শিকার হবেন সাধারণ ক্রেতা এবং চাপ পড়বে পুরো বাজার ব্যবস্থার ওপর।

শেষ কথা: কোরবানির ঈদের রান্নায় স্বাদ আনতে প্রয়োজন যেসব গরম মসলাতার বেশিরভাগই আসছে প্রতিবেশী ভারত থেকে। আর সেই মসলার দামই এখন সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ও আমদানি নির্ভরতার এই বাস্তবতা আবারও প্রমাণ করছেবাংলাদেশি ঈদ আসলে নির্ভর করে ভারতীয় মসলার ওপর।

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি- ৪২)

ভারতীয় মসলায় ঈদের স্বাদ, দাম নিয়ে শঙ্কা

০৪:৩৭:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

সারাংশ

  • বেশিরভাগ গরম মসলার দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে
  • ভারতের সরবরাহ কম এবং কিছু আমদানিকারক সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে
  • স্থানীয়ভাবে মজুতদারির কারণে। অনেক ব্যবসায়ী চাহিদা বাড়ার সুযোগে পুরনো মজুত উচ্চ দামে বিক্রি করছেন
  • সরকারের নজরদারির অভাব এবং আমদানি নির্ভরতার ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিবার ঈদেই দাম বাড়ার ভোগান্তিতে পড়ছেন

বাংলাদেশের কোরবানির ঈদের বাজার অনেকাংশেই নির্ভরশীল ভারতীয় মসলার ওপর। এলাচজিরাদারুচিনিলবঙ্গসহ বেশিরভাগ গরম মসলা আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। ঈদের প্রধান উৎসবগুলোতে মসলার চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়আর এ সময়েই বাজারে দামের হঠাৎ উল্লম্ফন ঘটে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

চালডালতেল বা মাংস নয়ঈদের রান্নার স্বাদ নির্ভর করে যে জিনিসটিতেতা হলো মসলা। আর এই মসলার বড় অংশই আসে ভারত থেকে। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছেঈদ সামনে রেখে ইতিমধ্যে ভারত থেকে আমদানিকৃত বেশ কিছু মসলার দাম গত বছরের তুলনায় বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে এলাচলবঙ্গজয়ফল ও দারুচিনি।

উচ্চ শুল্কে বাড়ছে গরম মসলা ও শুকনা ফলের দাম

চকবাজারকাওরান বাজার ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়ভারতের সরবরাহ কিছুটা কমআর গুটিকয়েক আমদানিকারক সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়এক মাস আগে প্রতি কেজি এলাচের পাইকারি দাম ছিল ৫০০০ টাকাএখন তা ৫৩০০ টাকায় ঠেকেছে। খুচরায় আরও বেশি। একইভাবে লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩৩০ টাকায়যা গত বছর ঈদের আগে ছিল ১২০০ টাকা।

বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ীগুয়েতেমালা থেকে আমদানি করা এলাচের সরবরাহ কমতবে ভারত থেকে আসা জিরাদারুচিনি ও অন্যান্য মসলার পরিমাণ যথেষ্ট। তারপরও দাম বাড়ছে মূলত ভারতের বাজারে উৎস পর্যায়ে দাম বেশি থাকায় এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মজুতদারির কারণে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারেও ভারতীয় মসলার দামে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেনচাহিদা বাড়লেও নতুন করে সরবরাহ তেমন আসেনি। পুরনো মজুত বিক্রি করেই চলতে হচ্ছে। ফলে সুযোগ বুঝে অনেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন।

ভোক্তা অধিকার বিভাগ' চায় ক্যাব

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব বলছেসরকারের বাজার তদারকির অভাবেই এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সরাসরি পুরনো সিন্ডিকেট’-কে দায়ী করে বলেনসরকার নীরব থাকায় একই চক্র বারবার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কোরবানির ঈদের মতো বড় উৎসবেও সাধারণ মানুষ পকেট কাটার শিকার হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতেদেশের কৃষকরা মসলা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেনআর আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে আমদানিকারক ও কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। যদি এখনই মসলার আমদানি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়ি না আনা হয়তাহলে প্রতি ঈদেই ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে।

ঈদ আসতে এখনো প্রায় দুই সপ্তাহ বাকি। কিন্তু এখনই যেভাবে ভারতীয় মসলার ওপর নির্ভরতা এবং তার মূল্যবৃদ্ধি চোখে পড়ছেতাতে আশঙ্কা করা হচ্ছেঈদের কাছাকাছি গিয়ে দাম আরও বাড়তে পারে। এতে ভোগান্তির শিকার হবেন সাধারণ ক্রেতা এবং চাপ পড়বে পুরো বাজার ব্যবস্থার ওপর।

শেষ কথা: কোরবানির ঈদের রান্নায় স্বাদ আনতে প্রয়োজন যেসব গরম মসলাতার বেশিরভাগই আসছে প্রতিবেশী ভারত থেকে। আর সেই মসলার দামই এখন সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ও আমদানি নির্ভরতার এই বাস্তবতা আবারও প্রমাণ করছেবাংলাদেশি ঈদ আসলে নির্ভর করে ভারতীয় মসলার ওপর।