সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- বেশিরভাগ গরম মসলার দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে
- ভারতের সরবরাহ কম এবং কিছু আমদানিকারক সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে
- স্থানীয়ভাবে মজুতদারির কারণে। অনেক ব্যবসায়ী চাহিদা বাড়ার সুযোগে পুরনো মজুত উচ্চ দামে বিক্রি করছেন
- সরকারের নজরদারির অভাব এবং আমদানি নির্ভরতার ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিবার ঈদেই দাম বাড়ার ভোগান্তিতে পড়ছেন
বাংলাদেশের কোরবানির ঈদের বাজার অনেকাংশেই নির্ভরশীল ভারতীয় মসলার ওপর। এলাচ, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গসহ বেশিরভাগ গরম মসলা আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। ঈদের প্রধান উৎসবগুলোতে মসলার চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়, আর এ সময়েই বাজারে দামের হঠাৎ উল্লম্ফন ঘটে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
চাল, ডাল, তেল বা মাংস নয়—ঈদের রান্নার স্বাদ নির্ভর করে যে জিনিসটিতে, তা হলো মসলা। আর এই মসলার বড় অংশই আসে ভারত থেকে। খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ সামনে রেখে ইতিমধ্যে ভারত থেকে আমদানিকৃত বেশ কিছু মসলার দাম গত বছরের তুলনায় বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে এলাচ, লবঙ্গ, জয়ফল ও দারুচিনি।
চকবাজার, কাওরান বাজার ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতের সরবরাহ কিছুটা কম, আর গুটিকয়েক আমদানিকারক সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এক মাস আগে প্রতি কেজি এলাচের পাইকারি দাম ছিল ৫০০০ টাকা, এখন তা ৫৩০০ টাকায় ঠেকেছে। খুচরায় আরও বেশি। একইভাবে লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩৩০ টাকায়, যা গত বছর ঈদের আগে ছিল ১২০০ টাকা।
বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গুয়েতেমালা থেকে আমদানি করা এলাচের সরবরাহ কম, তবে ভারত থেকে আসা জিরা, দারুচিনি ও অন্যান্য মসলার পরিমাণ যথেষ্ট। তারপরও দাম বাড়ছে মূলত ভারতের বাজারে উৎস পর্যায়ে দাম বেশি থাকায় এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মজুতদারির কারণে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারেও ভারতীয় মসলার দামে উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদা বাড়লেও নতুন করে সরবরাহ তেমন আসেনি। পুরনো মজুত বিক্রি করেই চলতে হচ্ছে। ফলে সুযোগ বুঝে অনেকে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব বলছে, সরকারের বাজার তদারকির অভাবেই এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সরাসরি ‘পুরনো সিন্ডিকেট’-কে দায়ী করে বলেন, সরকার নীরব থাকায় একই চক্র বারবার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কোরবানির ঈদের মতো বড় উৎসবেও সাধারণ মানুষ পকেট কাটার শিকার হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের কৃষকরা মসলা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন, আর আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে আমদানিকারক ও কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। যদি এখনই মসলার আমদানি ও বাজার ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়ি না আনা হয়, তাহলে প্রতি ঈদেই ভোক্তাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে।
ঈদ আসতে এখনো প্রায় দুই সপ্তাহ বাকি। কিন্তু এখনই যেভাবে ভারতীয় মসলার ওপর নির্ভরতা এবং তার মূল্যবৃদ্ধি চোখে পড়ছে, তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে—ঈদের কাছাকাছি গিয়ে দাম আরও বাড়তে পারে। এতে ভোগান্তির শিকার হবেন সাধারণ ক্রেতা এবং চাপ পড়বে পুরো বাজার ব্যবস্থার ওপর।
শেষ কথা: কোরবানির ঈদের রান্নায় স্বাদ আনতে প্রয়োজন যেসব গরম মসলা, তার বেশিরভাগই আসছে প্রতিবেশী ভারত থেকে। আর সেই মসলার দামই এখন সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ও আমদানি নির্ভরতার এই বাস্তবতা আবারও প্রমাণ করছে—বাংলাদেশি ঈদ আসলে নির্ভর করে ভারতীয় মসলার ওপর।