০৪:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

সংকটের সময় আগ্রাসী বাজেটই অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর চাবিকাঠি

  • Sarakhon Report
  • ০৫:০৬:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
  • 65

সারাক্ষণ রিপোর্ট

জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৩ শতাংশে: সংকেত কী?

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৩.৩ শতাংশে, যা বিগত এক দশকের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন হার। এই হ্রাসমান প্রবৃদ্ধি প্রমাণ করছে যে দেশের অর্থনীতি একটি স্থিতিশীলতা সংকটে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে যদি সরকার রক্ষণশীল (conservative) বাজেট নেয়, তবে তা অর্থনীতির গতি আরও মন্থর করে দিতে পারে। বরং এখন সময় একটি আগ্রাসী ও ভবিষ্যতমুখী বাজেট পরিকল্পনার, যা উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগে গতি আনবে।

অবকাঠামোগত ভিত্তি প্রস্তুত: এবার প্রয়োজন নীতিগত সাহস

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে—সড়ক, বিদ্যুৎ, বন্দর, শিল্পাঞ্চল এবং ডিজিটাল কানেক্টিভিটিতে। এই বিশাল বিনিয়োগ এখন পর্যন্ত পুরো মাত্রায় অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে পারেনি, মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাজস্ব ঘাটতি এবং বাজেট বাস্তবায়নে দুর্বলতার কারণে।

তবে এই অবকাঠামো এখন একটি তুলনামূলক সুবিধা, যা একটি আগ্রাসী বাজেটের মাধ্যমে উৎপাদনশীল শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা, দক্ষ প্রশাসন এবং বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করার কৌশল।

রক্ষণশীল বাজেটের ঝুঁকি: স্থবিরতাবেকারত্ব ও আস্থাহানি

একটি রক্ষণশীল বাজেট মূলত ব্যয় সংকোচন, ঋণ হ্রাস ও কম উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীভূত থাকে। এই মডেল বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে:

বিনিয়োগ স্থবিরতা: সরকারের ব্যয় হ্রাসের ফলে বেসরকারি খাতও গতি হারাবে

বেকারত্ব বৃদ্ধি: কম উন্নয়ন ব্যয় মানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে

জনআস্থা হ্রাস: রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা থাকলে বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে

ফলে রক্ষণশীল বাজেট এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা একত্রে অর্থনীতিকে আরও নিম্নমুখী করে তুলবে এবং বাজেট বাস্তবায়নও ব্যাহত হবে।

আগ্রাসী বাজেট: প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন চালু রাখার উপায়

বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি একটি উৎপাদনমুখী ও কর্মসংস্থানভিত্তিক বাজেট। এজন্য প্রয়োজন:

উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি: অবকাঠামো ও মানবসম্পদ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তোলা

বেসরকারি খাতের আস্থা ফিরিয়ে আনা: সরকারি ব্যয় বাড়ালে বাজারে আস্থা ফিরে আসবে এবং বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে

রাজস্ব আহরণে সংস্কার: করজাল সম্প্রসারণ, ডিজিটাল করব্যবস্থা, এবং কর ফাঁকি নিয়ন্ত্রণ

ভর্তুকি ও সুদের খরচে কাঠামোগত সংস্কার: লক্ষ্যভিত্তিক ভর্তুকি ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা

প্রশাসনিক সক্ষমতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা: বাজেট বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত

বাজেটের মোড় এখনই ঘুরাতে হবে

বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি রক্ষণশীল বাজেট অর্থনীতির জন্য প্রতিকূল হয়ে দাঁড়াতে পারে। জিডিপি যখন ৩.৩ শতাংশে থেমে গেছে, তখন এই গতি ফেরাতে হলে সরকারকে আগ্রাসী বাজেটের পথে হাঁটতে হবে। দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা অবকাঠামো, উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনা এবং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান—এই সব কিছু ব্যবহার করতে গেলে এখনই সাহসী সিদ্ধান্ত দরকার।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নীতি নির্ধারণে সমন্বয় না থাকলে আগ্রাসী বাজেটও ব্যর্থ হবে। তবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, প্রশাসনিক দক্ষতা ও নাগরিক সহায়তাকে কেন্দ্র করে একটি বাস্তবমুখীউৎপাদনবান্ধব বাজেটই পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে।

সংকটের সময় আগ্রাসী বাজেটই অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর চাবিকাঠি

০৫:০৬:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৩ শতাংশে: সংকেত কী?

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৩.৩ শতাংশে, যা বিগত এক দশকের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন হার। এই হ্রাসমান প্রবৃদ্ধি প্রমাণ করছে যে দেশের অর্থনীতি একটি স্থিতিশীলতা সংকটে পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে যদি সরকার রক্ষণশীল (conservative) বাজেট নেয়, তবে তা অর্থনীতির গতি আরও মন্থর করে দিতে পারে। বরং এখন সময় একটি আগ্রাসী ও ভবিষ্যতমুখী বাজেট পরিকল্পনার, যা উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগে গতি আনবে।

অবকাঠামোগত ভিত্তি প্রস্তুত: এবার প্রয়োজন নীতিগত সাহস

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে—সড়ক, বিদ্যুৎ, বন্দর, শিল্পাঞ্চল এবং ডিজিটাল কানেক্টিভিটিতে। এই বিশাল বিনিয়োগ এখন পর্যন্ত পুরো মাত্রায় অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে পারেনি, মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাজস্ব ঘাটতি এবং বাজেট বাস্তবায়নে দুর্বলতার কারণে।

তবে এই অবকাঠামো এখন একটি তুলনামূলক সুবিধা, যা একটি আগ্রাসী বাজেটের মাধ্যমে উৎপাদনশীল শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা, দক্ষ প্রশাসন এবং বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করার কৌশল।

রক্ষণশীল বাজেটের ঝুঁকি: স্থবিরতাবেকারত্ব ও আস্থাহানি

একটি রক্ষণশীল বাজেট মূলত ব্যয় সংকোচন, ঋণ হ্রাস ও কম উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীভূত থাকে। এই মডেল বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে:

বিনিয়োগ স্থবিরতা: সরকারের ব্যয় হ্রাসের ফলে বেসরকারি খাতও গতি হারাবে

বেকারত্ব বৃদ্ধি: কম উন্নয়ন ব্যয় মানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে

জনআস্থা হ্রাস: রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা থাকলে বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে

ফলে রক্ষণশীল বাজেট এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা একত্রে অর্থনীতিকে আরও নিম্নমুখী করে তুলবে এবং বাজেট বাস্তবায়নও ব্যাহত হবে।

আগ্রাসী বাজেট: প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন চালু রাখার উপায়

বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি একটি উৎপাদনমুখী ও কর্মসংস্থানভিত্তিক বাজেট। এজন্য প্রয়োজন:

উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি: অবকাঠামো ও মানবসম্পদ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তোলা

বেসরকারি খাতের আস্থা ফিরিয়ে আনা: সরকারি ব্যয় বাড়ালে বাজারে আস্থা ফিরে আসবে এবং বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে

রাজস্ব আহরণে সংস্কার: করজাল সম্প্রসারণ, ডিজিটাল করব্যবস্থা, এবং কর ফাঁকি নিয়ন্ত্রণ

ভর্তুকি ও সুদের খরচে কাঠামোগত সংস্কার: লক্ষ্যভিত্তিক ভর্তুকি ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা

প্রশাসনিক সক্ষমতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা: বাজেট বাস্তবায়নের পূর্বশর্ত

বাজেটের মোড় এখনই ঘুরাতে হবে

বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি রক্ষণশীল বাজেট অর্থনীতির জন্য প্রতিকূল হয়ে দাঁড়াতে পারে। জিডিপি যখন ৩.৩ শতাংশে থেমে গেছে, তখন এই গতি ফেরাতে হলে সরকারকে আগ্রাসী বাজেটের পথে হাঁটতে হবে। দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা অবকাঠামো, উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনা এবং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান—এই সব কিছু ব্যবহার করতে গেলে এখনই সাহসী সিদ্ধান্ত দরকার।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নীতি নির্ধারণে সমন্বয় না থাকলে আগ্রাসী বাজেটও ব্যর্থ হবে। তবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, প্রশাসনিক দক্ষতা ও নাগরিক সহায়তাকে কেন্দ্র করে একটি বাস্তবমুখীউৎপাদনবান্ধব বাজেটই পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে।