০৪:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
স্ট্রেঞ্জার থিংস ৫ ইভেন্টে ফটোগ্রাফারকে ‘ইউ স্মাইল’—মিলি ববি ব্রাউনের এক ঝটকা জবাব ভাইরাল অনলাইন স্ক্যাম এখন ডকুমেন্টারির গল্প নয়—রোলিং স্টোন জানালো ঠকবে কি না, বুঝবেন কীভাবে কানাডা–মার্কিন সীমান্তে আরও তেল নিয়ে যেতে এনারব্রিজের ১.৪ বিলিয়ন ডলারের নতুন পরিকল্পনা মাইক্রোসফটকে বিলিয়ন ডলার দিচ্ছে ওপেনএআই—ফাঁস হওয়া তথ্য জানাল এআই দৌড়ের আসল খরচ অপরাধ আর অভিবাসন ইস্যুতে ডান দিকে সরে যাচ্ছে চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছুটির দিনেও বিষাক্ত বাতাসে ঢাকা, রাজধানীবাসীর ‘স্বাভাবিক’ হয়ে যাওয়া অস্বস্তি এভরিওয়ান’স আ স্টার!’–এ বয়ব্যান্ড তকমা উল্টে দিল ৫ সেকেন্ডস অব সামার যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে বেঁচে থাকার শেষ ভরসা ছাদজুড়ে সোলার প্যানেল ইইউ আইনের চাপে ইউরোপে হোয়াটসঅ্যাপে তৃতীয় পক্ষের চ্যাট আসছে যুক্তরাষ্ট্র–দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ পারমাণবিক সাবমেরিন পরিকল্পনা আলোচনায়

রিকশার হ্যান্ডেলে বাঁধা জীবন: মজনু মিয়ার দিনরাত্রি (পর্ব-১)

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৫৩:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
  • 233

সারাক্ষণ রিপোর্ট 

ভোরে ঘুম ভাঙে নাঘুমিয়ে থাকলেও মনে হয় রাস্তায় আছি…”

৪৮ বছর বয়সী মজনু মিয়া। বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে। ঢাকায় এসেছেন ১২ বছর আগে। স্ত্রী-সন্তান গ্রামে, আর তিনি থাকেন মিরপুরের একটি ঘিঞ্জি ভাড়া ঘরে, চারজন রিকশাচালকের সঙ্গে। বিছানার জায়গা ভাগাভাগি করে, সময় ধরে শোয়।

দিনে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়। ২০০ টাকা রিকশার মালিককে দিতে হয়বাকি ২০০ টাকা দিয়ে একবেলা ভাত আর একটু ডাল-তরকারি… গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর কিছু থাকে না, বললেন মজনু।

সকাল শুরু হয় কষ্ট দিয়ে

মজনু প্রতিদিন ভোর ৫:৩০ মিনিটে ঘুম থেকে ওঠেন। ছয়টার মধ্যে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। প্রথম ঘণ্টাটা চলে খালি, কারণ যাত্রী তখনও বেরোয় না। সকাল ৭টার পর থেকে শুরু হয় কিছুটা যাত্রী পাওয়া।

আগে মোহাম্মদপুর থিকা গুলশান পর্যন্ত চালাইতাম। এখন রাস্তা বন্ধপুলিশ তো রিকশা দেখলেই হাঁকায়। তাই অলিগলি ঘুইরা চলিকিন্তু ভাড়া পাই কম।

খাওয়ার কষ্টে শরীর দুর্বল

একবেলা ভাত, অন্য বেলা হয়তো শুধু বিস্কুট বা কলা। গোশত মাসে একবার হয় না।

একবেলা পেট ভরলে আল্লাহর রহমত মনে হয়। শরীর আর আগের মতো নাইবুকে ব্যথা হয় মাঝেমধ্যে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা কখনও করাননি। ওষুধ কিনতেও ভয় পান—“ওষুধ কিনলে খাই কি?”

ঋণ আর টানাটানির দিন

মজনুর ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল ফি পাঠাতে মাসে ৪০০ টাকা লাগলেও মাঝে মাঝে দিতে পারেন না। প্রতিবেশীর কাছে ৩ হাজার টাকা ধার আছে, সুদে। দিনে আয় কম, তাই শোধ করার সামর্থ্যও হয় না।

চাইছেলে মানুষ হোকএই জীবন যেন না আসে তার কপালে। কিন্তু আয় না বাড়লে কিভাবে সম্ভব বলেন?”

ছোট্ট একটা স্বপ্ন

মজনুর স্বপ্ন—একটা নিজস্ব রিকশা কিনবেন, যেন ভাড়া না দিতে হয়। আর একদিন পরিবারকে ঢাকায় আনবেন, নিজের ছোট্ট একটা ঘরে।

নিজের রিকশা থাকলে ২০০ টাকা বাঁচত দিনে। বছর গেলে লাখ টাকা হতো। কিন্তু টাকা জমানোর সুযোগ কই?”

জীবন চালানোর নামই যেন রিকশা

মজনু মিয়ার মতো হাজারো রিকশাচালক ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন ঘাম ঝরাচ্ছেন, ভাঙা শরীর নিয়ে রিকশা চালিয়ে চলেছেন, শুধু বাঁচার তাগিদে। উন্নয়নের শহরে তাঁরা যেন হারিয়ে যাওয়া কিছু কণ্ঠ, যাদের কথা শোনার কেউ নেই।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্ট্রেঞ্জার থিংস ৫ ইভেন্টে ফটোগ্রাফারকে ‘ইউ স্মাইল’—মিলি ববি ব্রাউনের এক ঝটকা জবাব ভাইরাল

রিকশার হ্যান্ডেলে বাঁধা জীবন: মজনু মিয়ার দিনরাত্রি (পর্ব-১)

০৩:৫৩:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট 

ভোরে ঘুম ভাঙে নাঘুমিয়ে থাকলেও মনে হয় রাস্তায় আছি…”

৪৮ বছর বয়সী মজনু মিয়া। বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে। ঢাকায় এসেছেন ১২ বছর আগে। স্ত্রী-সন্তান গ্রামে, আর তিনি থাকেন মিরপুরের একটি ঘিঞ্জি ভাড়া ঘরে, চারজন রিকশাচালকের সঙ্গে। বিছানার জায়গা ভাগাভাগি করে, সময় ধরে শোয়।

দিনে ৪০০-৫০০ টাকা আয় হয়। ২০০ টাকা রিকশার মালিককে দিতে হয়বাকি ২০০ টাকা দিয়ে একবেলা ভাত আর একটু ডাল-তরকারি… গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর কিছু থাকে না, বললেন মজনু।

সকাল শুরু হয় কষ্ট দিয়ে

মজনু প্রতিদিন ভোর ৫:৩০ মিনিটে ঘুম থেকে ওঠেন। ছয়টার মধ্যে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। প্রথম ঘণ্টাটা চলে খালি, কারণ যাত্রী তখনও বেরোয় না। সকাল ৭টার পর থেকে শুরু হয় কিছুটা যাত্রী পাওয়া।

আগে মোহাম্মদপুর থিকা গুলশান পর্যন্ত চালাইতাম। এখন রাস্তা বন্ধপুলিশ তো রিকশা দেখলেই হাঁকায়। তাই অলিগলি ঘুইরা চলিকিন্তু ভাড়া পাই কম।

খাওয়ার কষ্টে শরীর দুর্বল

একবেলা ভাত, অন্য বেলা হয়তো শুধু বিস্কুট বা কলা। গোশত মাসে একবার হয় না।

একবেলা পেট ভরলে আল্লাহর রহমত মনে হয়। শরীর আর আগের মতো নাইবুকে ব্যথা হয় মাঝেমধ্যে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা কখনও করাননি। ওষুধ কিনতেও ভয় পান—“ওষুধ কিনলে খাই কি?”

ঋণ আর টানাটানির দিন

মজনুর ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল ফি পাঠাতে মাসে ৪০০ টাকা লাগলেও মাঝে মাঝে দিতে পারেন না। প্রতিবেশীর কাছে ৩ হাজার টাকা ধার আছে, সুদে। দিনে আয় কম, তাই শোধ করার সামর্থ্যও হয় না।

চাইছেলে মানুষ হোকএই জীবন যেন না আসে তার কপালে। কিন্তু আয় না বাড়লে কিভাবে সম্ভব বলেন?”

ছোট্ট একটা স্বপ্ন

মজনুর স্বপ্ন—একটা নিজস্ব রিকশা কিনবেন, যেন ভাড়া না দিতে হয়। আর একদিন পরিবারকে ঢাকায় আনবেন, নিজের ছোট্ট একটা ঘরে।

নিজের রিকশা থাকলে ২০০ টাকা বাঁচত দিনে। বছর গেলে লাখ টাকা হতো। কিন্তু টাকা জমানোর সুযোগ কই?”

জীবন চালানোর নামই যেন রিকশা

মজনু মিয়ার মতো হাজারো রিকশাচালক ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন ঘাম ঝরাচ্ছেন, ভাঙা শরীর নিয়ে রিকশা চালিয়ে চলেছেন, শুধু বাঁচার তাগিদে। উন্নয়নের শহরে তাঁরা যেন হারিয়ে যাওয়া কিছু কণ্ঠ, যাদের কথা শোনার কেউ নেই।