০৪:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

‘পিতৃত্ব: ভালোবাসা ও ক্ষমতার এক ইতিহাস’

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
  • 151

সারাক্ষণ রিপোর্টার

আমাদের পূর্বপুরুষেরা পিতৃত্ব নিয়ে উদ্ভট সব ধারণা পোষণ করতেন। প্রাচীন এথেন্সে কোনো শিশু তার পিতার স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত আইনত মানুষই গণ্য হতো না। অ্যামফিড্রোমিয়া’ নামের এক অনুষ্ঠানে গৃহপ্রধান নবজাতককে তুলে ধরে পর্যবেক্ষণ করতেনস্বীকার করলে শিশুটি ঘরে ঠাঁই পেতআর অস্বীকার করলে তাকে পাহাড়ে ফেলে আসা হতোপ্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে। বিকলাঙ্গতা কিংবা শুধুমাত্র কন্যাশিশু হওয়াই প্রত্যাখ্যানের যথেষ্ট কারণ ছিল।

আজ তা ভয়াবহ শোনালেও তাতে কঠোর বাস্তবতা লুকিয়ে ছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একজন পুরুষ নিশ্চিত হতে পারতেন না যে সন্তানটি সত্যই তার জৈবিক উত্তরাধিকার কিনাআর দারিদ্র্যপীড়িত সমাজে অন্যের সন্তানের জন্য রুটির ভাগ নষ্ট করতে তিনি অনিচ্ছুক ছিলেন। তাই স্ত্রী‑কন্যাদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে পুরুষেরা বহুযুগ ধরে নারী‑প্রজনন শাসন করেছেএথেন্সের মতো সমাজে তো অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুকে হত্যা করার অধিকারও পিতার ছিল।

পুরুষেরা আইনের ভাষাও নিজেদের পক্ষে ঢেলে সাজিয়েছে। ব্যাবিলোনিয় রাজা হাম্মুরাবির চার হাজার বছর আগের বিধি‑সংহিতার এক‑তৃতীয়াংশই গৃহস্থালি সম্পর্ক নিয়েএবং তার নিজের নামখচিত সুউচ্চ পাথরে খেয়াল করলে বাবাভক্ত’ পক্ষপাত স্পষ্ট। যেমনপিতাকে আঘাত করলে পুত্রের হাত কেটে ফেলার বিধানকিংবা স্বামীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে স্ত্রীকে জনসমক্ষে শূলে চড়ানোর আদেশ।

পিতৃত্ব: ভালোবাসা ও ক্ষমতার এক ইতিহাস’ গ্রন্থে মার্কিন গবেষক অগাস্টিন সেডজউইক যুগে যুগে পিতৃত্ব নিয়ে ভাবনার রূপান্তর বর্ণনা করেছেন। বিস্ময়কর বিষয় হলোমানুষ কত বিচিত্র আজগুবি বিশ্বাস ধারণ করেছে। অ্যারিস্টটল মনে করতেন উষ্ণ যৌনতা আর প্রাণবন্ত বীর্য কন্যা নয়পুত্র জন্মায়। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ধারণাসব ছেলে নাকি গোপনে বাবাকে হত্যা করে মাকে দখল করতে চায় (অবশ্যই অনেকেই তা চায় না)। সেন্ট অগাস্টিন নিজের ছেলের স্বার্থপর আচরণ দেখে আদি পাপ’-এর তত্ত্ব দাঁড় করানশিশু পিতার পাপ উত্তরাধিকারসূত্রে নিচ্ছেযা যৌনসঙ্গমের মাধ্যমেই সঞ্চারিত হয়এ পাপ আবার বাবার বাবার কাছ থেকেক্রমে আদম পর্যন্ত গড়ায়। খ্রিস্টান ধর্মমতের মূলধারায় এ ধারণাই শিশু বাপ্তিস্মের যুক্তি হয়ে উঠেছিল।

নৃশংসতাও এক পুনরাবৃত্ত থিম। মার্টিন লুথার নাকি বলেছিলেনঅবাধ্য পুত্রের চেয়ে মৃত পুত্রই ভালো। ১৬৬২ সালে ভার্জিনিয়ার ঔপনিবেশিক সরকার ইংল্যান্ডের রীতি ভেঙে ঘোষণা করেসন্তানের সামাজিক মর্যাদা ঠিক হবে মায়ের পরিচয়ে। এটিকে আগাম নারীবাদী জয় মনে করলে ভুল হবেজমিদাররা যাতে দাসীকে গর্ভবর্তী করে নিশ্চিন্তে তার সন্তানকেও সম্পত্তি হিসেবে ভোগ করতে পারেসে জন্যই আইনটি পাস হয়। ফলে দাসী নারীর দাম বেড়ে যায়কারণ তার সব বংশধরই মালিকের সম্পদ’ হয়ে পড়েআর দাসত্বকে বংশগত ও জন্মগত করে কালোত্বকে দাসত্বে’ গেঁথে দেয়। এ বিধির বিষফল আজও আমেরিকা মহাদেশজুড়ে বর্ণসম্পর্কে টের পাওয়া যায়।

আধুনিক যুগে পিতৃত্ব নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে দুটি বড় পরিবর্তন। একডিএনএ পরীক্ষার কল্যাণে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিশ্চিতভাবে পিতৃত্ব নির্ধারণ সম্ভব। দুইবাবারা সন্তান‑লালন‑পালনে যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছেন। বিশ্বস্ত জন্মনিয়ন্ত্রণশিক্ষা‑প্রসার আর আংশিক হলেও নারীবাদের বিজয়ের ফলে নারীরা আগের চেয়ে বেশি আয় করেনতারা আর বাধ্যত স্বামীর রোজগার’ নির্ভর ননফলে বিয়ে বা সঙ্গী বাছাইয়ে তারা বেশি স্বাধীনআর ঘরের কাজে সমান অংশীদারিত্ব দাবি করতে পারেন। ধোঁয়া‑চিকন মেশিন আর খাবার‑ডেলিভারি অ্যাপগুলোও সময় বাঁচিয়েছে। পুরো সমতা এখনও দূর কিন্তু অধিকাংশ আধুনিক বাবা দেখেছেনসহ‑অভিভাবকত্ব দারুণ তৃপ্তিদায়ক।

অন্তত ধনী দেশগুলোতে এখনই সম্ভবত পিতৃত্বের সেরা সময়। বহু নিয়োগকর্তাই উদার পিতৃত্বকালীন ছুটি দেনইউরোপের বড় অংশে তা আইনত বাধ্যতামূলক। আমেরিকান বাবারা ১৯৬০‑এর দশকের তুলনায় তিন গুণ বেশি সময় সন্তানের পরিচর্যায় ব্যয় করেন। কোভিড‑১৯‑এর লকডাউনে ২০২০‑২১ সালে তারা ঘরে থাকতে বাধ্য হলে সেই অভ্যাস আংশিক স্থায়ী হয়মহামারী শেষে তাদের শিশু‑যত্নের সময় ২০১৯‑এর চেয়ে বেশি রইল।

বোনদের গল্প পড়াকে যে অপুরুষোচিত’ ধারা মনে করা হতোতা বহু আগেই সেকেলেআজ পুরুষেরা নারীদের চেয়ে বেশি বলেনতারা সন্তানদের আরও সময় দিতে চান। দাদারা শারীরিক শাস্তি দিতেনবর্তমান বাবারা বেশি আলাপী ও কোমল। আরও সচেতন বাবাদের উপস্থিতি সন্তানদের উপকারে এসেছেকারণ মা‑বাবার শৈলী প্রায়ই পরিপূরক। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের রিচার্ড রিভসের অব বয়স অ্যান্ড মেন’ গ্রন্থে দেখা যায়বাবারা সন্তানকে বাইরের জগৎ‑মুখিতায় এবং ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত করেনপিতৃ‑সংযোগ কিশোর অপরাধ হ্রাস করেআর পিতার সান্নিধ্যে বড় হওয়া কন্যাশিশুদের মানসিক সুস্থতা প্রাপ্তবয়সে উন্নত হয়।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিও কম কঠোর পরিবারের দিকে ঝুঁকেছে। এখন আর ফাদার নোজ বেস্ট’ (১৯৫০‑এর দশকের আমেরিকান সিটকম) জাতীয় অনুষ্ঠান টিভি স্টুডিও বানায় নাবরং বাবাদের ডুফাস’ দেখানোর প্রবণতা বেশি। ফ্যামিলি গাই’ কার্টুনে পিটার গ্রিফিন এতটাই নির্বোধ যে সি ওয়ার্ল্ডে স্ত্রীর পাশ ফিরে থাকা এক হত্যেপূর্ণ তিমিকে ঘুষি মারে!

সমতার এই আশীর্বাদের বড় এক শর্তও আছে। সব পুরুষ নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ‑শিক্ষিত বাবারা যেখানে সন্তানের সঙ্গে বেশি সময় দিচ্ছেনকম শিক্ষিত বাবারা গত দুই দশকে সামান্য কম সময়ই দিচ্ছেনতারা সন্তান থেকে আলাদা হয়ে থাকা ও প্রায় দেখা না করার প্রবণতায়ও বেশি। ফলে পিতামাতা‑সংলগ্নউদ্দীপক পরিবেশের সঙ্গে উচ্চ‑মধ্যবিত্ত শিশুদের আর্থিক বাড়তি সুবিধাও জুড়েছে।

অন্যদিকে অনেক শ্রমজীবী পুরুষ বিয়ে বা পিতৃত্বের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। নারীরা পছন্দের স্বাধীনতায় স্বাবলম্বী হওয়ায় অনেক পুরুষ বিচ্ছিন্ন’ পড়ে আছেনএ অভিযোগ‑বোধ উন্নত বিশ্বের রাজনীতিতে পুরুষ হতাশার জ্বালানি যোগাচ্ছে।

দুঃখজনকভাবেসেডজউইক এ স্রোতের সঙ্গে খুব একটা পাঞ্জা লড়েননি। বরং শেষ করেছেন ব্যক্তিগত ছোঁয়ায়। তিনি যখন তরুণ ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেনএকজন বাবা কেমন হওয়া উচিত?—ছেলের উত্তর, ‘মজার আর জড়িয়ে ধরতে পারদর্শী।’ পিতৃত্বের পরামর্শ হিসেবে এর চেয়ে ভালো শব্দ সত্যিই কম আছে।

‘পিতৃত্ব: ভালোবাসা ও ক্ষমতার এক ইতিহাস’

১১:০০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্টার

আমাদের পূর্বপুরুষেরা পিতৃত্ব নিয়ে উদ্ভট সব ধারণা পোষণ করতেন। প্রাচীন এথেন্সে কোনো শিশু তার পিতার স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত আইনত মানুষই গণ্য হতো না। অ্যামফিড্রোমিয়া’ নামের এক অনুষ্ঠানে গৃহপ্রধান নবজাতককে তুলে ধরে পর্যবেক্ষণ করতেনস্বীকার করলে শিশুটি ঘরে ঠাঁই পেতআর অস্বীকার করলে তাকে পাহাড়ে ফেলে আসা হতোপ্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে। বিকলাঙ্গতা কিংবা শুধুমাত্র কন্যাশিশু হওয়াই প্রত্যাখ্যানের যথেষ্ট কারণ ছিল।

আজ তা ভয়াবহ শোনালেও তাতে কঠোর বাস্তবতা লুকিয়ে ছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একজন পুরুষ নিশ্চিত হতে পারতেন না যে সন্তানটি সত্যই তার জৈবিক উত্তরাধিকার কিনাআর দারিদ্র্যপীড়িত সমাজে অন্যের সন্তানের জন্য রুটির ভাগ নষ্ট করতে তিনি অনিচ্ছুক ছিলেন। তাই স্ত্রী‑কন্যাদের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে পুরুষেরা বহুযুগ ধরে নারী‑প্রজনন শাসন করেছেএথেন্সের মতো সমাজে তো অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুকে হত্যা করার অধিকারও পিতার ছিল।

পুরুষেরা আইনের ভাষাও নিজেদের পক্ষে ঢেলে সাজিয়েছে। ব্যাবিলোনিয় রাজা হাম্মুরাবির চার হাজার বছর আগের বিধি‑সংহিতার এক‑তৃতীয়াংশই গৃহস্থালি সম্পর্ক নিয়েএবং তার নিজের নামখচিত সুউচ্চ পাথরে খেয়াল করলে বাবাভক্ত’ পক্ষপাত স্পষ্ট। যেমনপিতাকে আঘাত করলে পুত্রের হাত কেটে ফেলার বিধানকিংবা স্বামীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে স্ত্রীকে জনসমক্ষে শূলে চড়ানোর আদেশ।

পিতৃত্ব: ভালোবাসা ও ক্ষমতার এক ইতিহাস’ গ্রন্থে মার্কিন গবেষক অগাস্টিন সেডজউইক যুগে যুগে পিতৃত্ব নিয়ে ভাবনার রূপান্তর বর্ণনা করেছেন। বিস্ময়কর বিষয় হলোমানুষ কত বিচিত্র আজগুবি বিশ্বাস ধারণ করেছে। অ্যারিস্টটল মনে করতেন উষ্ণ যৌনতা আর প্রাণবন্ত বীর্য কন্যা নয়পুত্র জন্মায়। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ধারণাসব ছেলে নাকি গোপনে বাবাকে হত্যা করে মাকে দখল করতে চায় (অবশ্যই অনেকেই তা চায় না)। সেন্ট অগাস্টিন নিজের ছেলের স্বার্থপর আচরণ দেখে আদি পাপ’-এর তত্ত্ব দাঁড় করানশিশু পিতার পাপ উত্তরাধিকারসূত্রে নিচ্ছেযা যৌনসঙ্গমের মাধ্যমেই সঞ্চারিত হয়এ পাপ আবার বাবার বাবার কাছ থেকেক্রমে আদম পর্যন্ত গড়ায়। খ্রিস্টান ধর্মমতের মূলধারায় এ ধারণাই শিশু বাপ্তিস্মের যুক্তি হয়ে উঠেছিল।

নৃশংসতাও এক পুনরাবৃত্ত থিম। মার্টিন লুথার নাকি বলেছিলেনঅবাধ্য পুত্রের চেয়ে মৃত পুত্রই ভালো। ১৬৬২ সালে ভার্জিনিয়ার ঔপনিবেশিক সরকার ইংল্যান্ডের রীতি ভেঙে ঘোষণা করেসন্তানের সামাজিক মর্যাদা ঠিক হবে মায়ের পরিচয়ে। এটিকে আগাম নারীবাদী জয় মনে করলে ভুল হবেজমিদাররা যাতে দাসীকে গর্ভবর্তী করে নিশ্চিন্তে তার সন্তানকেও সম্পত্তি হিসেবে ভোগ করতে পারেসে জন্যই আইনটি পাস হয়। ফলে দাসী নারীর দাম বেড়ে যায়কারণ তার সব বংশধরই মালিকের সম্পদ’ হয়ে পড়েআর দাসত্বকে বংশগত ও জন্মগত করে কালোত্বকে দাসত্বে’ গেঁথে দেয়। এ বিধির বিষফল আজও আমেরিকা মহাদেশজুড়ে বর্ণসম্পর্কে টের পাওয়া যায়।

আধুনিক যুগে পিতৃত্ব নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে দুটি বড় পরিবর্তন। একডিএনএ পরীক্ষার কল্যাণে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিশ্চিতভাবে পিতৃত্ব নির্ধারণ সম্ভব। দুইবাবারা সন্তান‑লালন‑পালনে যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছেন। বিশ্বস্ত জন্মনিয়ন্ত্রণশিক্ষা‑প্রসার আর আংশিক হলেও নারীবাদের বিজয়ের ফলে নারীরা আগের চেয়ে বেশি আয় করেনতারা আর বাধ্যত স্বামীর রোজগার’ নির্ভর ননফলে বিয়ে বা সঙ্গী বাছাইয়ে তারা বেশি স্বাধীনআর ঘরের কাজে সমান অংশীদারিত্ব দাবি করতে পারেন। ধোঁয়া‑চিকন মেশিন আর খাবার‑ডেলিভারি অ্যাপগুলোও সময় বাঁচিয়েছে। পুরো সমতা এখনও দূর কিন্তু অধিকাংশ আধুনিক বাবা দেখেছেনসহ‑অভিভাবকত্ব দারুণ তৃপ্তিদায়ক।

অন্তত ধনী দেশগুলোতে এখনই সম্ভবত পিতৃত্বের সেরা সময়। বহু নিয়োগকর্তাই উদার পিতৃত্বকালীন ছুটি দেনইউরোপের বড় অংশে তা আইনত বাধ্যতামূলক। আমেরিকান বাবারা ১৯৬০‑এর দশকের তুলনায় তিন গুণ বেশি সময় সন্তানের পরিচর্যায় ব্যয় করেন। কোভিড‑১৯‑এর লকডাউনে ২০২০‑২১ সালে তারা ঘরে থাকতে বাধ্য হলে সেই অভ্যাস আংশিক স্থায়ী হয়মহামারী শেষে তাদের শিশু‑যত্নের সময় ২০১৯‑এর চেয়ে বেশি রইল।

বোনদের গল্প পড়াকে যে অপুরুষোচিত’ ধারা মনে করা হতোতা বহু আগেই সেকেলেআজ পুরুষেরা নারীদের চেয়ে বেশি বলেনতারা সন্তানদের আরও সময় দিতে চান। দাদারা শারীরিক শাস্তি দিতেনবর্তমান বাবারা বেশি আলাপী ও কোমল। আরও সচেতন বাবাদের উপস্থিতি সন্তানদের উপকারে এসেছেকারণ মা‑বাবার শৈলী প্রায়ই পরিপূরক। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের রিচার্ড রিভসের অব বয়স অ্যান্ড মেন’ গ্রন্থে দেখা যায়বাবারা সন্তানকে বাইরের জগৎ‑মুখিতায় এবং ঝুঁকি নিতে উৎসাহিত করেনপিতৃ‑সংযোগ কিশোর অপরাধ হ্রাস করেআর পিতার সান্নিধ্যে বড় হওয়া কন্যাশিশুদের মানসিক সুস্থতা প্রাপ্তবয়সে উন্নত হয়।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিও কম কঠোর পরিবারের দিকে ঝুঁকেছে। এখন আর ফাদার নোজ বেস্ট’ (১৯৫০‑এর দশকের আমেরিকান সিটকম) জাতীয় অনুষ্ঠান টিভি স্টুডিও বানায় নাবরং বাবাদের ডুফাস’ দেখানোর প্রবণতা বেশি। ফ্যামিলি গাই’ কার্টুনে পিটার গ্রিফিন এতটাই নির্বোধ যে সি ওয়ার্ল্ডে স্ত্রীর পাশ ফিরে থাকা এক হত্যেপূর্ণ তিমিকে ঘুষি মারে!

সমতার এই আশীর্বাদের বড় এক শর্তও আছে। সব পুরুষ নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ‑শিক্ষিত বাবারা যেখানে সন্তানের সঙ্গে বেশি সময় দিচ্ছেনকম শিক্ষিত বাবারা গত দুই দশকে সামান্য কম সময়ই দিচ্ছেনতারা সন্তান থেকে আলাদা হয়ে থাকা ও প্রায় দেখা না করার প্রবণতায়ও বেশি। ফলে পিতামাতা‑সংলগ্নউদ্দীপক পরিবেশের সঙ্গে উচ্চ‑মধ্যবিত্ত শিশুদের আর্থিক বাড়তি সুবিধাও জুড়েছে।

অন্যদিকে অনেক শ্রমজীবী পুরুষ বিয়ে বা পিতৃত্বের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। নারীরা পছন্দের স্বাধীনতায় স্বাবলম্বী হওয়ায় অনেক পুরুষ বিচ্ছিন্ন’ পড়ে আছেনএ অভিযোগ‑বোধ উন্নত বিশ্বের রাজনীতিতে পুরুষ হতাশার জ্বালানি যোগাচ্ছে।

দুঃখজনকভাবেসেডজউইক এ স্রোতের সঙ্গে খুব একটা পাঞ্জা লড়েননি। বরং শেষ করেছেন ব্যক্তিগত ছোঁয়ায়। তিনি যখন তরুণ ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেনএকজন বাবা কেমন হওয়া উচিত?—ছেলের উত্তর, ‘মজার আর জড়িয়ে ধরতে পারদর্শী।’ পিতৃত্বের পরামর্শ হিসেবে এর চেয়ে ভালো শব্দ সত্যিই কম আছে।