১২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

বার্ড ফ্লু’র ভয়ে ব্রাজিল থেকে মুরগী আমদানী বন্ধ করছে অনেক দেশ

  • Sarakhon Report
  • ১২:৩০:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • 111

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ব্রাজিলে বার্ড ফ্লু ছড়ানোর প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ

বিশ্বের বৃহত্তম মুরগি রপ্তানিকারক দেশ ব্রাজিলের একটি বাণিজ্যিক খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ার পর একাধিক দেশ এ থেকে বাঁচতে ব্রাজিল থেকে মুরগির আমদানি স্থগিত করেছে।

১৯ মেজাপান ব্রাজিলের কিছু অঞ্চল থেকে মুরগির আমদানি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এর আগেই চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নব্রাজিলের প্রধান ক্রেতারাএই নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেয়।

এই পদক্ষেপগুলো এসেছে ১৬ মে ব্রাজিলের একটি খামারে বার্ড ফ্লুর প্রথম সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার পরপরই।

সিঙ্গাপুর খাদ্য আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীলআর ব্রাজিল দেশটির শীর্ষ মুরগির যোগানদাতা। ফলে এই পরিস্থিতি দেশটির বাজার ও ভোক্তাদের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারেতা নিয়ে নিচে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।

সিঙ্গাপুর ব্রাজিলের ওপর কতটা নির্ভরশীল?

সিঙ্গাপুরের মোট খাদ্য সরবরাহের ৯০ শতাংশেরও বেশি বিদেশ থেকে আসে। মুরগির ক্ষেত্রেও এই চিত্র একই।

সিঙ্গাপুর ফুড এজেন্সি (SFA)-র তথ্য অনুযায়ী২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল ছিল সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় মুরগির সরবরাহকারীযা ওই সময়ে মোট মুরগি আমদানির প্রায় অর্ধেক ছিল।

২০২১ সালে সিঙ্গাপুরে আসা মোট মুরগির ৪৮ শতাংশই এসেছে ব্রাজিল থেকে। মালয়েশিয়া ছিল দ্বিতীয় (৩৪ শতাংশ) এবং যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় (৮ শতাংশ)। বাকি ১০ শতাংশ এসেছে আরও ৯টি দেশ ও অঞ্চলের কাছ থেকে।

২০২৩ সাল থেকে SFA আর দেশভিত্তিক নির্দিষ্ট পরিমাণ জানায় নাতাই বর্তমানে ব্রাজিল থেকে ঠিক কত মুরগি আমদানি হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়।

ব্রাজিলে বার্ড ফ্লুর ধরন কতটা মারাত্মক?

ব্রাজিলে ধরা পড়া বার্ড ফ্লু একটি উচ্চ মাত্রার সংক্রামক এবং প্রাণঘাতী এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাযা কয়েক দিনের মধ্যেই একটি খামারের সব মুরগিকে মেরে ফেলতে পারে।

এই ভাইরাস সাধারণত পাখিদের মধ্যে ছড়ায়তবে সংক্রমিত পাখির লালানাকের সর্দি বা বিষ্ঠার সংস্পর্শে এলে মানুষও এতে সংক্রমিত হতে পারে।

মানুষের জন্য এখনও কার্যকর কোনো টিকা নেইতবে পাখিদের জন্য টিকা বিদ্যমান।

২০২৩ সালের মে মাসে ব্রাজিলে প্রথমবার এই ভাইরাস বন্য পাখিদের মধ্যে ধরা পড়ে। তবে ১৬ মে প্রথমবার এটি একটি বাণিজ্যিক খামারে (মন্টেনেগ্রো শহরেরিও গ্রান্দে দো সুল রাজ্যে) ছড়ায়।

এই সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ৪৫০ টন ডিম ধ্বংস করা হয়েছে। খামারটি ঘিরে ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে খোঁজ চলছে নতুন সংক্রমণের। ইতোমধ্যে ১৭,০০০ মুরগির মৃত্যু হয়েছে বা সতর্কতামূলকভাবে জবাই করা হয়েছে।

সিঙ্গাপুরে মুরগির সরবরাহে কী প্রভাব পড়তে পারে?

SFA-এর ২০২৪ সালের মে মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছেবিদেশি খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরতার কারণে রোগ ছড়ানো বা বৈদেশিক নীতিগত সিদ্ধান্তের ফলে সিঙ্গাপুরের খাদ্য সরবরাহে ঝুঁকি থাকে।

এমন পরিস্থিতিতে অতীতে সিঙ্গাপুর সাধারণত সংক্রমিত অঞ্চলভিত্তিক মুরগি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যেমন২০২৩ সালে জাপানের চারটি অঞ্চলে বার্ড ফ্লু ছড়ালে ওই অঞ্চল থেকে কাঁচা মুরগি আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

তবে বিশ্ব প্রাণিস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ীউচ্চ তাপে প্রক্রিয়াজাত করা পোলট্রি পণ্য এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকে।

সংক্রমণজনিত সরবরাহ ব্যাঘাতের ফলে দাম বেড়ে যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ২০২২ সালে মালয়েশিয়া অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে মুরগি রপ্তানি বন্ধ করলে সিঙ্গাপুরে তীব্র প্রভাব পড়ে। অনেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হনআবার কেউ কেউ ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে তখন ইন্দোনেশিয়া থেকে হিমায়িতঠাণ্ডা এবং প্রক্রিয়াজাত মুরগির আমদানির অনুমতি দেয় SFA

সিঙ্গাপুর এই ধরনের সংকট মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে ৩০টি দেশ থেকে পোলট্রি আমদানির অনুমতি দিয়েছে।

বার্ড ফ্লু’র ভয়ে ব্রাজিল থেকে মুরগী আমদানী বন্ধ করছে অনেক দেশ

১২:৩০:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

ব্রাজিলে বার্ড ফ্লু ছড়ানোর প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ

বিশ্বের বৃহত্তম মুরগি রপ্তানিকারক দেশ ব্রাজিলের একটি বাণিজ্যিক খামারে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ার পর একাধিক দেশ এ থেকে বাঁচতে ব্রাজিল থেকে মুরগির আমদানি স্থগিত করেছে।

১৯ মেজাপান ব্রাজিলের কিছু অঞ্চল থেকে মুরগির আমদানি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এর আগেই চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নব্রাজিলের প্রধান ক্রেতারাএই নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেয়।

এই পদক্ষেপগুলো এসেছে ১৬ মে ব্রাজিলের একটি খামারে বার্ড ফ্লুর প্রথম সংক্রমণ চিহ্নিত হওয়ার পরপরই।

সিঙ্গাপুর খাদ্য আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীলআর ব্রাজিল দেশটির শীর্ষ মুরগির যোগানদাতা। ফলে এই পরিস্থিতি দেশটির বাজার ও ভোক্তাদের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারেতা নিয়ে নিচে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।

সিঙ্গাপুর ব্রাজিলের ওপর কতটা নির্ভরশীল?

সিঙ্গাপুরের মোট খাদ্য সরবরাহের ৯০ শতাংশেরও বেশি বিদেশ থেকে আসে। মুরগির ক্ষেত্রেও এই চিত্র একই।

সিঙ্গাপুর ফুড এজেন্সি (SFA)-র তথ্য অনুযায়ী২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল ছিল সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে বড় মুরগির সরবরাহকারীযা ওই সময়ে মোট মুরগি আমদানির প্রায় অর্ধেক ছিল।

২০২১ সালে সিঙ্গাপুরে আসা মোট মুরগির ৪৮ শতাংশই এসেছে ব্রাজিল থেকে। মালয়েশিয়া ছিল দ্বিতীয় (৩৪ শতাংশ) এবং যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় (৮ শতাংশ)। বাকি ১০ শতাংশ এসেছে আরও ৯টি দেশ ও অঞ্চলের কাছ থেকে।

২০২৩ সাল থেকে SFA আর দেশভিত্তিক নির্দিষ্ট পরিমাণ জানায় নাতাই বর্তমানে ব্রাজিল থেকে ঠিক কত মুরগি আমদানি হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়।

ব্রাজিলে বার্ড ফ্লুর ধরন কতটা মারাত্মক?

ব্রাজিলে ধরা পড়া বার্ড ফ্লু একটি উচ্চ মাত্রার সংক্রামক এবং প্রাণঘাতী এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাযা কয়েক দিনের মধ্যেই একটি খামারের সব মুরগিকে মেরে ফেলতে পারে।

এই ভাইরাস সাধারণত পাখিদের মধ্যে ছড়ায়তবে সংক্রমিত পাখির লালানাকের সর্দি বা বিষ্ঠার সংস্পর্শে এলে মানুষও এতে সংক্রমিত হতে পারে।

মানুষের জন্য এখনও কার্যকর কোনো টিকা নেইতবে পাখিদের জন্য টিকা বিদ্যমান।

২০২৩ সালের মে মাসে ব্রাজিলে প্রথমবার এই ভাইরাস বন্য পাখিদের মধ্যে ধরা পড়ে। তবে ১৬ মে প্রথমবার এটি একটি বাণিজ্যিক খামারে (মন্টেনেগ্রো শহরেরিও গ্রান্দে দো সুল রাজ্যে) ছড়ায়।

এই সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ৪৫০ টন ডিম ধ্বংস করা হয়েছে। খামারটি ঘিরে ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে খোঁজ চলছে নতুন সংক্রমণের। ইতোমধ্যে ১৭,০০০ মুরগির মৃত্যু হয়েছে বা সতর্কতামূলকভাবে জবাই করা হয়েছে।

সিঙ্গাপুরে মুরগির সরবরাহে কী প্রভাব পড়তে পারে?

SFA-এর ২০২৪ সালের মে মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছেবিদেশি খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরতার কারণে রোগ ছড়ানো বা বৈদেশিক নীতিগত সিদ্ধান্তের ফলে সিঙ্গাপুরের খাদ্য সরবরাহে ঝুঁকি থাকে।

এমন পরিস্থিতিতে অতীতে সিঙ্গাপুর সাধারণত সংক্রমিত অঞ্চলভিত্তিক মুরগি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যেমন২০২৩ সালে জাপানের চারটি অঞ্চলে বার্ড ফ্লু ছড়ালে ওই অঞ্চল থেকে কাঁচা মুরগি আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

তবে বিশ্ব প্রাণিস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ীউচ্চ তাপে প্রক্রিয়াজাত করা পোলট্রি পণ্য এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকে।

সংক্রমণজনিত সরবরাহ ব্যাঘাতের ফলে দাম বেড়ে যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ২০২২ সালে মালয়েশিয়া অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে মুরগি রপ্তানি বন্ধ করলে সিঙ্গাপুরে তীব্র প্রভাব পড়ে। অনেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হনআবার কেউ কেউ ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে তখন ইন্দোনেশিয়া থেকে হিমায়িতঠাণ্ডা এবং প্রক্রিয়াজাত মুরগির আমদানির অনুমতি দেয় SFA

সিঙ্গাপুর এই ধরনের সংকট মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে ৩০টি দেশ থেকে পোলট্রি আমদানির অনুমতি দিয়েছে।