০৮:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য রণক্ষেত্রে (পর্ব-৭৭) সমুদ্রের ওপার থেকে নতুন স্বপ্ন: তাইওয়ান তরুণদের ফুচিয়ানে নতুন জীবনগাঁথা ব্যর্থ কলম্বো, গলের লড়াই -এ বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ঘরে জয় কেন ? ‘আকাশ হয়ে যাই’ মিউজিক ভিডিতে প্রশংসিত পূর্ণিমা বৃষ্টি সাউথ চায়নান মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন: ইরান আক্রমনে লাভ ক্ষতি ইউক্রেন দাবি করেছে বাংলাদেশের কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিক ইইউ কলকাতার কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার তিন ‘চুরির গম’ আমদানি: বাংলাদেশের ওপর ইইউ নিষেধাজ্ঞা চায় ইউক্রেন চীনের বৃহত্তম গভীর সমুদ্র গ্যাসক্ষেত্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদন শুরু

রাজপথ থেকে রাষ্ট্র: “মব ভায়োলেন্স” দমনে সেনাপ্রধানের কঠোর পদক্ষেপ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫আগস্ট২০২৪ সালের ক্ষমতা ত্যাগের পর বাংলাদেশ এক ভয়াবহ মব ভায়োলেন্সে” নিমজ্জিত হয়যা দেশের সামাজব্যবস্থা ও আইনের শাসনকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কোনো গোষ্ঠীই রেহাই পায়নি। বর্তমানের এই পরিস্থিতিতে ২১ মে ২০০২৫ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান জাতিকে নৈরাজ্য থামাতে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান।

মব ভায়োলেন্সের ক্রমবর্ধমান মাশুল

২০২৪‑এর আগস্টের পর থেকে দেশে গণপিটুনি ও মব ভায়োলেন্স মারাত্মক বেড়েছে। মানবাধিকার সহায়তা সমাজ (এইচআরএসএসের) তথ্য মতেমাত্র সাত মাসে ১১৪টি গণহেনস্তার ঘটনায় অন্তত ১১৯জন নিহত ও ৭৪জন আহত হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০২৪ সালে ১২৮জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা নথিভুক্ত করেছেসাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আক্রান্ত: ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের ওপর হামলার ২২৫টি ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। এই ব্যাপক আইনহীনতা নিজ হাতে বিচার’ সংস্কৃতিকেই আরও উসকে দিচ্ছে।

উগ্রপন্থী ছাত্রনেতা ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সুপরিকল্পিত তাণ্ডব

চোখের দেখা ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন ইঙ্গিত দেয়এই হিংসার অনেক ঘটনাই স্বতঃস্ফূর্ত নয়পূর্বপরিকল্পিত। কিছু উগ্রপন্থী ছাত্রনেতা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুরনারীদের ওপর হামলা এবং সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে সহিংসতা চালায়। মৌলবাদী দলগুলো এই অস্থির সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেদের চিন্তাধারা চাপিয়ে দিতে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন বাড়িয়েছে।

বিশেষত নারী ও কিশোরীরা ভোগান্তির শিকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়নারীকে ঘর থেকে টেনে বের করে বা গণপরিবহন থেকে নামিয়ে নির্দয়ভাবে মারধর করা হচ্ছেআর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

জাতীয় ঐতিহ্য ও উপাসনালয়ের বিনাশ

দেশের ফাউন্ডিং ফাদার” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাসভবনে হামলা দেশের মানুষকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসএর একটি ফেব্রুয়ারি২০২৫ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছেউত্তেজিত জনতা বাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে স্বাধীনতার স্মৃতিবস্তু লুট করে।এবং সেখানে একটি বিশেষ পতাকা উড়তে দেখা যায়

একই রকম দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহমদিয়া মসজিদে। সেখানে উগ্রবাদীরা নামাজের স্থান ভাঙচুরধর্মীয় গ্রন্থ অপবিত্র করে এবং উপাসকদের হুমকি দিয়ে যায়। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসএর ওই প্রতিবেদনে এসব ঘটনাকে কেবল অপরাধ নয়সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

সেনাপ্রধানের আলটিমেটাম

সহিংসতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ২১মে২০২৫‑এ এক যৌথ নিরাপত্তা ব্রিফিংয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান দৃঢ় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন
“‘মব ভায়োলেন্স’‑এর নামে সৃষ্ট সহিংসতা আর বরদাশত করা হবে না। যারা আইন ভাঙবেতারা আইনের শক্তিই মোকাবিলা করবে।

তার বক্তব্যটি টেলিভিশন ও অনলাইনে ব্যাপক সমর্থন পায়। একই সঙ্গে তিনি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিতে শৃঙ্খলা ফেরানোর ওপর জোর দেন।

করণীয় পথ

বাংলাদেশকে আরও গভীর খাদের দিকে পড়া ঠেকাতে রাষ্ট্র ও সমাজউভয়েরই দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন:
• পরিকল্পনাকারী ও উসকানিদাতাদেরছাত্রনেতা হোক বা ধর্মীয় বক্তাআইনের আওতায় আনা
• পুলিশকে স্বাধীনভাবে ও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা
• সংখ্যালঘুনারী ও শিশুদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় জরুরি সুরক্ষা প্রোটোকল চালু করা
• ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাবঙ্গবন্ধুর বাড়ি ও আহমদিয়া উপাসনালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাপুনর্নির্মাণ ও সুরক্ষিত করা

জাগরণের ঘণ্টা

মব ভায়োলেন্সজাতীয় স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংসনিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণএসব শুধু অপরাধ নয়এগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল্যবোধের প্রত্যাখ্যান। উগ্র ছাত্ররাজনীতির একটি অংশ ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সক্রিয় সম্পৃক্ততা সরাসরি মোকাবিলা না করলে ভবিষ্যৎ অন্ধকারই হবে।

জেনারেল ওয়াকার উজ জামান যে সতর্কবার্তা দিয়েছেনতা অবিলম্বে বাস্তবায়ন জরুরিশুধু আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নয়বরং ইতিহাসকে আগুনে পুড়তে না দেওয়ার জন্য।

ঐক্যবদ্ধ থাকলেই কেবল বাংলাদেশ ন্যায়বিচারসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তির অঙ্গীকার পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

ট্রাম্পের বিপরীতে, প্রাচীন চীন এর শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানানোর ঐতিহ্য

রাজপথ থেকে রাষ্ট্র: “মব ভায়োলেন্স” দমনে সেনাপ্রধানের কঠোর পদক্ষেপ

০৩:১১:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫আগস্ট২০২৪ সালের ক্ষমতা ত্যাগের পর বাংলাদেশ এক ভয়াবহ মব ভায়োলেন্সে” নিমজ্জিত হয়যা দেশের সামাজব্যবস্থা ও আইনের শাসনকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কোনো গোষ্ঠীই রেহাই পায়নি। বর্তমানের এই পরিস্থিতিতে ২১ মে ২০০২৫ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান জাতিকে নৈরাজ্য থামাতে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান।

মব ভায়োলেন্সের ক্রমবর্ধমান মাশুল

২০২৪‑এর আগস্টের পর থেকে দেশে গণপিটুনি ও মব ভায়োলেন্স মারাত্মক বেড়েছে। মানবাধিকার সহায়তা সমাজ (এইচআরএসএসের) তথ্য মতেমাত্র সাত মাসে ১১৪টি গণহেনস্তার ঘটনায় অন্তত ১১৯জন নিহত ও ৭৪জন আহত হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০২৪ সালে ১২৮জনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা নথিভুক্ত করেছেসাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আক্রান্ত: ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশের ওপর হামলার ২২৫টি ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। এই ব্যাপক আইনহীনতা নিজ হাতে বিচার’ সংস্কৃতিকেই আরও উসকে দিচ্ছে।

উগ্রপন্থী ছাত্রনেতা ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সুপরিকল্পিত তাণ্ডব

চোখের দেখা ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন ইঙ্গিত দেয়এই হিংসার অনেক ঘটনাই স্বতঃস্ফূর্ত নয়পূর্বপরিকল্পিত। কিছু উগ্রপন্থী ছাত্রনেতা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে বাড়িঘর ভাঙচুরনারীদের ওপর হামলা এবং সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে সহিংসতা চালায়। মৌলবাদী দলগুলো এই অস্থির সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজেদের চিন্তাধারা চাপিয়ে দিতে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন বাড়িয়েছে।

বিশেষত নারী ও কিশোরীরা ভোগান্তির শিকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়নারীকে ঘর থেকে টেনে বের করে বা গণপরিবহন থেকে নামিয়ে নির্দয়ভাবে মারধর করা হচ্ছেআর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

জাতীয় ঐতিহ্য ও উপাসনালয়ের বিনাশ

দেশের ফাউন্ডিং ফাদার” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাসভবনে হামলা দেশের মানুষকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসএর একটি ফেব্রুয়ারি২০২৫ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছেউত্তেজিত জনতা বাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে স্বাধীনতার স্মৃতিবস্তু লুট করে।এবং সেখানে একটি বিশেষ পতাকা উড়তে দেখা যায়

একই রকম দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আহমদিয়া মসজিদে। সেখানে উগ্রবাদীরা নামাজের স্থান ভাঙচুরধর্মীয় গ্রন্থ অপবিত্র করে এবং উপাসকদের হুমকি দিয়ে যায়। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসএর ওই প্রতিবেদনে এসব ঘটনাকে কেবল অপরাধ নয়সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

সেনাপ্রধানের আলটিমেটাম

সহিংসতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় ২১মে২০২৫‑এ এক যৌথ নিরাপত্তা ব্রিফিংয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান দৃঢ় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন
“‘মব ভায়োলেন্স’‑এর নামে সৃষ্ট সহিংসতা আর বরদাশত করা হবে না। যারা আইন ভাঙবেতারা আইনের শক্তিই মোকাবিলা করবে।

তার বক্তব্যটি টেলিভিশন ও অনলাইনে ব্যাপক সমর্থন পায়। একই সঙ্গে তিনি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিতে শৃঙ্খলা ফেরানোর ওপর জোর দেন।

করণীয় পথ

বাংলাদেশকে আরও গভীর খাদের দিকে পড়া ঠেকাতে রাষ্ট্র ও সমাজউভয়েরই দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন:
• পরিকল্পনাকারী ও উসকানিদাতাদেরছাত্রনেতা হোক বা ধর্মীয় বক্তাআইনের আওতায় আনা
• পুলিশকে স্বাধীনভাবে ও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা
• সংখ্যালঘুনারী ও শিশুদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় জরুরি সুরক্ষা প্রোটোকল চালু করা
• ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাবঙ্গবন্ধুর বাড়ি ও আহমদিয়া উপাসনালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাপুনর্নির্মাণ ও সুরক্ষিত করা

জাগরণের ঘণ্টা

মব ভায়োলেন্সজাতীয় স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংসনিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণএসব শুধু অপরাধ নয়এগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল্যবোধের প্রত্যাখ্যান। উগ্র ছাত্ররাজনীতির একটি অংশ ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সক্রিয় সম্পৃক্ততা সরাসরি মোকাবিলা না করলে ভবিষ্যৎ অন্ধকারই হবে।

জেনারেল ওয়াকার উজ জামান যে সতর্কবার্তা দিয়েছেনতা অবিলম্বে বাস্তবায়ন জরুরিশুধু আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নয়বরং ইতিহাসকে আগুনে পুড়তে না দেওয়ার জন্য।

ঐক্যবদ্ধ থাকলেই কেবল বাংলাদেশ ন্যায়বিচারসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তির অঙ্গীকার পুনরুদ্ধার করতে পারবে।